মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
উপনির্বাচন চেয়ে বার বার দাবি তুলছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। করোনা অতিমারির পরিস্থিতিতেও কেন পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন করা সম্ভব তার যুক্তিও নির্বাচন কমিশনের দফতরে দাখিল করেছে তাঁরা। এবার সেই দাবিকে সমর্থন জানাল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। কিন্তু সঙ্গে তারা দাবি করেছে, রাজ্যের বাকি থাকা পুরভোট করানোর। কলকাতা-সহ রাজ্যের ১১৭টি পুরসভা ভোট বকেয়া রয়েছে। হাওড়ার মতো এমন কিছু পুরসভাও রয়েছে, যেখানে ভোট বকেয়া রয়েছে প্রায় তিন বছর। এমতাবস্থায় যখন রাজ্যের উপনির্বাচনের দাবিতে বারবার সরব হচ্ছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব, ঠিক সেই সময়েই পুরভোটের দাবি তুলে পাল্টা বাংলার শাসকদলের উপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে বাম-কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে উপনির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। এই দাবিকে সমর্থন করেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আমরা চাই সাংবিধানিক নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়েই পুরভোট হোক। কিন্তু যে তৃণমূল নির্দিষ্ট সময়ে উপনির্বাচনের দাবি তুলছে, তাদের আমলেই শতাধিক পুরসভার ভোট বকেয়া রয়ে গিয়েছে। আমরা চাই রাজ্যের মানুষ সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা পান। তাই রাজ্য সরকার উপনির্বাচনের সঙ্গেই পুরভোট করানোর বিষয়ে উদ্যোগী হোক।’’
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা আবার একটু ঘুরপথে বাংলার শাসকদলকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা অতিমারির কারণে যদি কমিশন ভোট না করাতে পারে, তাহলেও রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট হবে না। বিধানসভাও ভেঙে যাবে না। কারণ তৃণমূলের কাছে ২১০ জন বিধায়ক রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও, যে কেউ মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারবেন।’’ তাঁর আরও যুক্তি, ‘‘তবে আমরা যথা সময়ে উপনির্বাচনের পক্ষপাতী। কিন্তু তার আগে রাজ্যের পুরভোট নিয়েও সিদ্ধান্ত নিক রাজ্য। কারণ, সরকার ও দলের ভিন্ন অবস্থান হতে পারে না।’’
প্রসঙ্গত, ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নিয়েছেন। তাঁকে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংবিধানিক শর্তপূরণ করতে হবে। ভবানীপুর বিধানসভা থেকে গত ২১ মে পদত্যাগ করেছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সম্ভবত সেই আসনে প্রার্থী হবেন মুখ্যমন্ত্রীই। ইতিমধ্যে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভোটের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। আর খড়দহে ফলাফল ঘোষণার আগেই প্রয়াত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। সেই আসনে আবার তৃণমূল প্রার্থী হবেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব। আর শান্তিপুর ও দিনহাটা থেকে জিতে ইস্তফা দিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। আর গত জুন মাসে প্রয়াত হয়েছেন গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। আর প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ভোট হয়নি জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জে। তাই এই সব আসনে সাত দিনের প্রচারের সময় দিয়েই ভোট করানোর পক্ষপাতী তৃণমূল। মার্চ-এপ্রিল-মে মাস জুড়ে ভোট হয়েছিল। সেই সময় দেশে চলছিল করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। সেই সময় রাজ্যের করোনা সংক্রমণের গ্রাফ কি ছিল? এবং বর্তমানে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই দু’টি বিষয়কেই তুলে ধরে রাজ্যে উপনির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছে তৃণমূল। আর বাম-কংগ্রেস তৃণমূলের এই যুক্তিকে সমর্থন করেও, পুরভোট নিয়ে সরকার অবস্থান স্পষ্ট করার দাবিও তুলছে।