বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে এবং এনআরসি-র প্রতিবাদে শুক্রবার ধর্মতলা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিল করল ১৭টি বামপন্থী দল। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মীয় পরিচয়ের নামে, ‘অনুপ্রবেশকারী’র নামে, নাগরিকত্বের নামে প্রতি দিন মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মানুষ যত ভয় পাবেন, প্রতিবাদ তত দুর্বল হবে। ভয় জয় করেই তাই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জির (এনপিআর) বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিলেন বাম নেতারা। প্রতিবাদ হল নাগরিকত্ব সংশোধনীর বিলের বিরুদ্ধেও।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৭তম বর্ষপূর্তির দিনে ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে এবং এনআরসি-র প্রতিবাদে শুক্রবার ধর্মতলা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিল করে ১৭টি বামপন্থী দল। বেশ কিছু দিন পরে সিপিএম-সহ বাম শরিকদের সঙ্গে পথে নেমেছিল এসইউসি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো দলও। মিছিল শেষে রাজাবাজার মোড়ে সভা থেকে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন বাম নেতৃত্ব। ধর্মতলা থেকে লেনিন সরণি ধরে মৌলালি হয়ে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিলের জেরে সন্ধ্যায় যান চলাচল ব্যাহত হয় বেশ কিছু ক্ষণ। সভা চলাকালীন রাজাবাজারে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের শিয়ালদহমুখী লেন বন্ধও রাখতে হয়েছিল।
মিছিল শেষের সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘এত কল-কারখানা বন্ধের জন্য কি পাকিস্তান দায়ী? রেকর্ড বেকারত্ব কি কাশ্মীরের জন্য? বিজেপি-আরএসএসের সরকার পাকিস্তান, কাশ্মীর নিয়ে হইচই করছে কিন্তু তাতে কি আপনাদের সমস্যার সমাধান হবে? অর্থনীতি বেহাল, মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা। সে দিকে নজর না দিয়ে সরকার আমাদের এনআরসি, এনপিআরে ব্যস্ত রাখছে।’’ বাবরি ধ্বংসের দিনটা সংবিধান প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের মৃত্যুদিনও, এই তথ্য মনে করিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সরাসরি আমাদের সংবিধানের উপরে আঘাত। অমিত শাহেরা চাইছেন আমাদের ভয় দেখাতে। কিন্তু ভয় পেলে আর প্রতিবাদ হবে না। একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে হবে, কত ক্ষমতা আছে দেশের মানুষকে বার করে দিয়ে দেখান!’’
মিছিল শেষের সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।—নিজস্ব চিত্র।
জনগণনার জন্য এনপিআর-এ সহায়তা করতে মানুষের কাছে সরকারি বিজ্ঞাপনে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জের (ভিক্টর) বক্তব্য, ‘‘বিজ্ঞপ্তি দেখলেই বোঝা যাবে, এনপিআর আসলে এনআরসি-র প্রথম ধাপ। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এনআরসি হতে দেব না কিন্তু এনপিআর-এ সহযোগিতা করতে বলছেন!’’ এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, লিবারেশনের পার্থ ঘোষ, পিডিএসের মীর টিপু সুলতান আলি প্রমুখও বক্তা ছিলেন।
বাবরি ধ্বংসের দিনে ভাঙড় ও রাজাবাজারে দু’টি নাগরিক সংগঠনের সভা থেকেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। মহাবোধি সোসাইটি হলে ‘শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী মঞ্চে’র সভায় বৃহত্তর স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা-রায়ের মূল্যায়নের কথা বলেন বিভাস চক্রবর্তী, সুজাত ভদ্র, তরুণ মণ্ডলেরা।