পুকুরচুরি বেড়েছে, মানছেন নেতারা

কোন রোষে লোকসভায় নিজের গড়েও ভোট হারাল তৃণমূল? কাটমানি-ক্ষোভও অব্যাহত। জেলায় জেলায় অন্বেষণকোন রোষে লোকসভায় নিজের গড়েও ভোট হারাল তৃণমূল? কাটমানি-ক্ষোভও অব্যাহত। জেলায় জেলায় অন্বেষণ

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪৮
Share:

রাজনীতি হোক বা ধর্ম, বীরভূমে বরাবরই ‘শক্তিপীঠের’ রমরমা। লাল মাটির দেশে শান্তিনিকেতন থাকলে কী হবে, জেলার আনাচে কানাচে ‘শাক্ত’ মতেরই জয়জয়কার মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের বদল অনুযায়ী এখানে দ্রুত পাল্টে যায় রাজনীতির ভারসাম্য।

Advertisement

কাটমানি নিয়ে ক্ষোভের মধ্যে কিয়দংশে সেই ভারসাম্যের বদল লুকিয়ে আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জেলা জুড়ে কাটমানি নিয়ে প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়া শাসক দল বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেও বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, শাসকদলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন মানুষ। বীরভূমের জেলা বিজেপি’র এক নেতার কথায়, ‘‘শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ যেখানে প্রতিবাদ করবেন, সেখানে আমরা থাকব।’’ বাম নেতারা অবশ্য কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভের পুরোটাই বিজেপির নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে বলে মনে করেন না। সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক, মনসা হাঁসদার কথায়, ‘‘মানুষ নিজেদের মতো করে প্রতিবাদের রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন।’’

কাটমানি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কাউন্সিলরদের সভায় মুখ খোলার আগেই বীরভূমের ইলামবাজার পঞ্চায়েতের গোপালনগর গ্রামে সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে শাসক দলের বুথ সভাপতিকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। পরে ইলামবাজার থানার পুলিশ শাসক তাঁকে উদ্ধার করে। অভিযোগ, সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি, ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ কিংবা সরকারি বার্ধক্য ভাতার টাকা কারা কী শর্তে পাবেন, সবই ঠিক করতেন তিনি। এমনকি, টাকার বিনিময়ে সাংসারিক বিবাদও মেটানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রায় কানাকড়িহীন অবস্থা থেকে বছর কয়েকের মধ্যে তাঁর চোখে পড়ার মতো ‘শ্রীবৃদ্ধি’ হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের। তিনি নিজে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেও বুথ সভাপতির দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে দল।
তার পরেও গোপালনগরে শাসক দলের সংগঠনের হাল ফেরেনি। কাটমানি-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইলামবাজার, সিউড়ি, দুবরাজপুর, বোলপুর, মহম্মদবাজার-সহ রামপুরহাটের নানা এলাকায়।

Advertisement

কিন্ত বিক্ষোভের পিছনে কি শুধুই ‘বিরোধীদের চক্রান্ত’? শাসক দলের নেতাদের অনেকেই বুক ঠুকে সে কথা বলতে পারছেন না। বোলপুর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকার এক নেতার কথায়, ‘‘বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে প্রতিপক্ষ নেই। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে গত কয়েক বছরে পুকুর চুরির মানসিকতা তৈরি হয়েছে। জনজাতি এলাকার পঞ্চায়েতে বহু ক্ষেত্রেই সরকারি প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কাটমানির কথা বলার অনেক আগেই সেখানে ক্ষোভের জমি তৈরি হয়ে ছিল।’’ বহু পঞ্চায়েত এলাকায় বুথ সভাপতিদেরই যে ভাবে সম্পদ বেড়েছে, তা জনতার চোখ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি তাঁর। ভোটের ফল প্রকাশের পর সেই ক্ষোভ অনেক জায়গায় বাম-বিজেপির হাত ধরে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজেছে বলে তাঁর মত।

পুর এলাকাতেও ছবিটা কমবেশি একই রকমের। সরকারি আবাস প্রকল্পের বাড়ি ঠিকাদারদের তৈরি করার প্রক্রিয়া চালু থাকায় নাগরিকদের একাংশের মনে সংশয় রয়েছে। বিক্ষোভ এড়াতে সিউড়ি-সহ বেশ কিছু পুরসভায় সরকারি আবাস যোজনায় কেন্দ্র, রাজ্য এবং উপভোক্তার মধ্যে কে কত টাকা দেবেন, তা জানাতে আলাদা করে বোর্ডের ব্যবস্থা
করতে হয়েছে।

তবু সিউড়ির এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও পঞ্চায়েত এখনও শাসকদলের দখলেই। গ্রামে মানুষের কাছে পৌঁছনোর উপায় পঞ্চায়েতই। আগামী
দিনে সেই চেষ্টাই করা হবে। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ফলের পরে বিজেপি আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি স্থায়ী
হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement