প্রশ্ন এসএসসি-র ভূমিকায়
Supreme Court Verdict on SSC

‘কাঁকর বাঁচাতে গিয়ে বাতিল চালের বস্তা’

আইনজীবীদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ মামলায় এসএসসি অবস্থান কোনও ভাবে স্পষ্ট করেনি।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চাল থেকে কাঁকর বাছা যায় কি না, সেটাই ছিল পরীক্ষা। কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালতের রায় বলছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) চাল থেকে কাঁকর তো বাছতে পারেইনি। উপরন্তু, কাঁকর যাতে ধরা না পড়ে, সেই চেষ্টাই কার্যত করে গিয়েছে। আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, এসএসসি এবং রাজ্য সরকারের এই অবস্থানের জন্যই গোটা প্রক্রিয়া আইনের চোখে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘বাতিল’ করেছে দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। তার ফলে সবার চাকরি বাতিল হয়েছে। রায়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত যে বেআইনি কার্যকলাপের জন্যই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘেঁটে দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

আইনজীবীদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ মামলায় এসএসসি অবস্থান কোনও ভাবে স্পষ্ট করেনি। বরং বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মামলা যে গ্রহণযোগ্য নয়, বিলম্বে মামলা দায়ের করা হয়েছে ইত্যাদি যুক্তি দেখানো হয়েছে। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এসএসসি গোড়া থেকেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার ফলে যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। এ কথা রায়েও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি। সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘এসএসসি নিজেরা যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করে কোর্টে জমা দিলে তাঁদের চাকরি হারাতে হত না। কিন্তু এসএসসি সেই কাজ করেনি। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে তো যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করে দেওয়া সম্ভব নয়।’’

এসএসসি কী ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ত্রুটি এবং বেআইনি পদ্ধতিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে, তার উল্লেখ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ উল্লেখ করেছে, উত্তরপত্রের (ওএমআর শিট) কোনও প্রতিচ্ছবি বা ‘মিরর ইমেজ’ এসএসসি রাখেনি বলে দাবি করেছে। অথচ ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর এবং ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি দু’জন চাকরিপ্রার্থীকে তথ্য জানার অধিকার আইনে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দিয়েছিল। যদিও পরে দাবি করেছিল, সিবিআইয়ের বাজেয়াপ্ত করা তথ্য ভান্ডার থেকে ওই প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছিল। ওই চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, ‘‘ওএমআর শিটের তথ্য নিয়ে এসএসসি বিভিন্ন রকম কথা বলেছে। তা থেকে এটা বলা যেতেই পারে যে অবৈধ চাকরিপ্রার্থীদের পৃথক করার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি।’’

Advertisement

আদালতের রায়ে স্পষ্ট যে কত নিয়োগের সুপারিশ এবং কত নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছে। পরে সেই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দু’পক্ষ নতুন যুক্তি সাজিয়ে সেই ফাঁকফোকর ভরাট করার চেষ্টা করেছে। যদিও সেই যুক্তিও সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করেছে।

হাই কোর্টের এক প্রবীণ আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতি হয়েছে সেটা মেনে নেওয়ার পরেও কেন অযোগ্যদের আড়াল করতে গিয়ে যোগ্যদের অনিশ্চত ভবিষ্যতের দিকে এসএসসি ঠেলে দিল, তা বোধগম্য হচ্ছে না! এ তো কাঁকর বাঁচাতে গিয়ে চালের বস্তাই বাতিল হয়ে গেল!’’ এ দিন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের যে অভিঘাত চাকরিহারাদের সইতে হচ্ছে, তার দায় কি এসএসসির কর্তারা নেবেন? সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে রায়ের ছত্রে-ছত্রে এসএসসির ভূমিকাকে বিদ্ধ করেছেন তার দায়িত্ব নিয়ে এসএসসি-র শীর্ষকর্তারা পদ ছাড়বেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement