সিকিমগামী জাতীয় সড়কে ধস। তিস্তার জলস্রোতে আড়েবহরে বাড়ছে সুড়ঙ্গ। — নিজস্ব চিত্র।
ধসের কারণে এখনও বেহাল সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রথম দিকে রাস্তার এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টির কারণে রবিবার শ্বেতিঝোড়ার কাছে রাস্তায় ধস নেমেছিল। তার পর থেকে বিকল্প পথে ডুয়ার্সের গরুবাথান থেকে লাভা-লোলেগাঁও হয়ে কালিম্পং, সেখান থেকে চিত্রে ফাটক হয়ে সিকিমে প্রবেশ করতে হচ্ছে। অন্য দিকে, সিকিম বা কালিম্পং যেতে যাচ্ছে কার্শিয়াং হয়ে, যা অনেকটাই ঘুরপথ। বিপাকে পর্যটকেরা। প্রশ্ন উঠছে, এত ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও কেন মেরামত হচ্ছে না সড়ক।
শ্বেতিঝোড়ার কাছে এখনও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পণ্যবোঝাই লরি। সমস্যার মুখে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটকেরা। স্থানীয়রা হেঁটে রাস্তা পারাপার করছেন। বন্ধ যান চলাচল। কালিম্পং পুলিশের পক্ষ থেকে শ্বেতিঝোড়ার আগে লোহাপুলে আটকে দেওয়া হচ্ছে গাড়ি। এতে পর্যটকেরা সমস্যায় পড়েছেন। বহু মানুষ বর্ষা দেখতে পাহাড়ে যান। তাঁদের এখন ঘুরপথে যেতে হচ্ছে সিকিম। সময় লাগছে অনেক বেশি।
প্রশ্ন উঠছে, দু’দিন কেটে গেলেও কেন ধসের ফলে তৈরি হওয়া বিরাট গহ্বর মেরামত করা যায়নি এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে? শ্বেতিঝোড়া বরাবরই ধসপ্রবণ এলাকা। এই বিষয়ে সতর্ক করে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে সাইনবোর্ডও ঝুলছে। এই সড়কের পাশেই তিস্তা। শ্বেতিঝোড়া থেকে কিছুটা এগোলে এনএইচপিসির বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০০০ সাল নাগাদ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সময় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধার বরাবর তিস্তার পাশ দিয়ে বিশাল প্রাচীর তৈরি করা হয়। রবিবারের ধসে তিস্তার ধার বরাবর তৈরি প্রাচীর ধসে গিয়েছে। প্রাচীর লাগোয়া সড়কে তৈরি হয়েছে সুড়ঙ্গ। তিস্তার জলস্রোতে সেই সুড়ঙ্গের আকার বেড়েই চলেছে। ধস ভরাট করতে বড় বড় বোল্ডার ভরা জাল ফেলা হলেও তা তলিয়ে চলে যাচ্ছে তিস্তায়।
ধস ভরাট হবে কী ভাবে, তা নিয়ে উদ্বেগে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন। শ্বেতিঝোড়ার জাতীয় সড়কে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার সুধাংশু সরকার বলেন, ‘‘রাস্তা ধসে সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে৷ তিস্তার জলের অনবরত ধাক্কায় সেই সুড়ঙ্গ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সুড়ঙ্গ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে বিগত কয়েক দিন ধরে। তা হয়ে গেলে রাস্তা মেরামত করতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগবে৷ সোমবার থেকে কাজ এখনও চলছে। সুড়ঙ্গ ঠিক না হলে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করতে হবে। এত খাড়া গর্তে কোনও কর্মী নেমে কাজ করতে চাইছেন না। কিন্তু সুড়ঙ্গ না আটকালে কিছুই সম্ভব নয়।’’ এই সুড়ঙ্গ বুজিয়ে কবে ফের চালু হবে রাস্তা, তা এখন ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। আশঙ্কা, এ ভাবে চললে অনেক পর্যটকই বিমুখ হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে টান পড়তে পারে পর্যটনক্ষেত্রে।