মিছিল নিয়ে অতি সতর্ক লালবাজার

বামেদের নবান্ন অভিযান ঠেকাতে কলকাতা ও হাওড়াকে কার্যত দুর্গে পরিণত করছে রাজ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, আজ, সোমবার সকাল ৮টা থেকে গঙ্গার দু’পারে প্রায় চল্লিশ়টি জায়গায় ব্যারিকেড করা হবে। সব মিলিয়ে হাজার চারেকের বেশি পুলিশকর্মীকে মিছিল ঠেকাতে মোতায়েন করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০১:৫৪
Share:

প্রস্তুতি: নবান্ন ঘিরতে রবিবার বিকেল থেকেই সাজ সাজ রব। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বামেদের নবান্ন অভিযান ঠেকাতে কলকাতা ও হাওড়াকে কার্যত দুর্গে পরিণত করছে রাজ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, আজ, সোমবার সকাল ৮টা থেকে গঙ্গার দু’পারে প্রায় চল্লিশ়টি জায়গায় ব্যারিকেড করা হবে। সব মিলিয়ে হাজার চারেকের বেশি পুলিশকর্মীকে মিছিল ঠেকাতে মোতায়েন করা হবে। লালবাজারের খবর, কলকাতার মিছিল যাতে নবান্নের ধারকাছে পৌঁছতে না পারে, সে কারণে দশটি জায়গায় বসানো হচ্ছে অস্থায়ী ইস্পাতের দেওয়াল। হাওড়ায় নবান্নের কাছে রাখা হচ্ছে তিনটি জলকামানও।

Advertisement

এই অভিযানকে ঘিরে কলকাতা ও হাওড়ায় যানজটের আশঙ্কাও রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মিছিলের কারণে পথে লোক নামবে। পাশাপাশি, কিছু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সব মিলিয়ে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে মানুষকে দুর্ভোগে পোহাতে হবেই।

পুলিশের আশঙ্কা, নবান্ন-মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য গোলমাল বাধাতে পারে বামেরা। তাই আগেভাগে সতর্ক হয়েছে লালবাজার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফি মাসে তিনটি বৈঠক করতে বললেন অনুব্রত

বস্তুত, বাম জমানায় ১৯৯৩-র ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই গোলমালে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন মারা যান। এ বার তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে ও রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেরা। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এ বার পুলিশকে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হচ্ছে না। থাকছে শুধু লাঠি। হাওড়ায় রবার বুলেট রাখা হচ্ছে বলে খবর।

পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতা থেকে নবান্নের দিকে যাওয়ার ১২টি রাস্তা আছে। ওই রাস্তাগুলি-সহ মোট ২৮টি জায়গায় পদস্থ অফিসারদের নেতৃত্বে পিকেট থাকবে। তিনটি জায়গাকে ‘জমায়েত স্থল’ হিসেবে ধরা হয়েছে। সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। কলকাতার দশটি জায়গাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে অস্থায়ী ইস্পাতের দেওয়াল, ব্যারিকেড ও লাঠি, ঢালধারী পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা মোতায়েন করা হচ্ছে। কলকাতার মিছিলগুলির আগে-পিছেও থাকবে পুলিশ। থাকছে জলপথেও নজরদারি।


নবান্ন অভিযানের আগে ব্যস্ত সিপিএম কর্মীরা। শিয়ালদহে। ছবি: শৌভিক দে।

হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, আন্দুল রোড, ফোরশোর রোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, ক্যারি রোড মোড়, সাঁতরাগাছি সেতু, হাওড়া স্টেশন চত্বর এলাকায় মিছিল জমায়েত হয়ে রওনা দিতে পারে। সেখানে ব্যারিকেড করা হবে। জেলা থেকে অতিরিক্ত ১২০০ পুলিশ আনা হচ্ছে। নবান্নের সামনে মোতায়েনের জন্য লালবাজারের কমব্যাট ফোর্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই অভিযান নিয়ে কলকাতা পুলিশের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকছে।’’ পুলিশের কেউ কেউ মনে করছেন, এর আগে বামেদের লালবাজার অভিযানে ফিয়ার্স লেন ও গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে নির্বিচারে লাঠি চালানো হয়েছিল। তা নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছিল পুলিশ। তা মাথায় রেখেই বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত না করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে লালবাজার।

পুলিশের খবর, মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যান চলাচল যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করার নির্দেশ এসেছে। আজ, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যাসাগর সেতু, খিদিরপুর রোড, সিজিআর রোড, হাই়ড রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, ডায়মন্ড হারবার রোডের মতো রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি চলবে না। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যে কোনও রাস্তার গাড়ির মুখ বদলানো হতে পারে। হাওড়ায় সকাল ৬টা থেকেই আন্দুল রোড, হাওড়া স্টেশনের সামনে যান নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হবে। সকাল ১০টা থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, ফোরশোর রোড, আন্দুল রোডের এক দিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। একটি লেন দিয়ে দু’দিকের গাড়ি চালানো হবে। ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ কর্তা মেনেই নিচ্ছেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে চেষ্টা করেও যান চলাচল যে স্বাভাবিক রাখা যাবে না, বুঝতে পারছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement