আদালতে তোলা হচ্ছে বন্ধুপ্রকাশ খুনে অভিযুক্তদের। নিজস্ব চিত্র।
জিয়াগঞ্জের স্কুলশিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরেও আবার নতুন ভাবে শুরু হল সেই পর্ব। দীর্ঘ দু’বছর চলে সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ বছর ৩০ জুলাই শেষ হয় সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম পর্ব। এ বার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নতুন ভাবে ৭৮ জনকে ডাকা হয়েছে।
শনিবার ওই শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী জিয়াগঞ্জ নিমতলা ফেরিঘাটের সিসিটিভির টেকনিশিয়ান সামিউল শেখকে জেরা করা হয়। জেরায় তাঁকে তদন্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। যার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। হত্যাকাণ্ডের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছে আদালত। বাকি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন নির্ধারিত করেছে লালবাগ মহকুমা আদালত।
জেরা চলাকালীন ‘রাইট ব্লকার’ নামে এক বিশেষ যন্ত্রের ব্যবহার করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। কী কাজ এই যন্ত্রের? বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই যন্ত্র ব্যবহার করে তাঁরা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। অন্য দিকে, আইনজীবীদের দাবি, বিভিন্ন ভিডিয়ো এবং অডিয়োর টেম্পারিং রুখতে এই যন্ত্রের ব্যবহার করা হয়। আদালতে এই ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার এই প্রথম।
২০১৯ সালে দশমীর দুপুরে নিজের বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন হন পেশায় স্কুলশিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল (৪০), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) ও পুত্র অঙ্গন (৫)। জিয়াগঞ্জের সদরঘাট লাগোয়া লেবুবাগান এলাকায় বেলা ১২টা নাগাদ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁদের দেহ। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এক যুবক বাড়ির মধ্যে ঢুকে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে ওই তিন জনকে।
এই ঘটনার পরেই বাড়িতে এসেছিলেন দুধওয়ালা রাজীব দাস ও তার বন্ধু বিব্রত সরকার। শিক্ষক খুনের ঘটনায় এরা দু’জন প্রধান সাক্ষী। রাজীব পুলিশকে জানান, বাড়ির দরজা ঠেলতেই তা খুলে যায়। ঘরে ঢুকেই তিনি দেখতে পান খাটের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বন্ধুপ্রকাশ। তখনও বাড়ির মধ্যেই ছিল আততায়ী।
এখানেই আপত্তি আসামিপক্ষের আইনজীবীর। তিনি দাবি করেন, বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে দুধ দিতে আসা রাজীব ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত তিন জনের মৃতদেহ দেখার পরেও কেন চিৎকার করে লোক জড়ো করলেন না? তিনি ফোন করলেন অন্য জনকে, তিনি আবার অন্য আর এক জনকে ফোন করে ডেকে দিলেন! এত ক্ষণ সময় ধরে রাজীবের ভূমিকা কী ছিল তা কেন খতিয়ে দেখা হল না সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী।
পুলিশি তদন্তে দাবি করা হয়, শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ একটি জীবন বিমা সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। স্থানীয় বেশ কিছু বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেওয়া নিয়ে বিবাদ ছিল। সেই ঘটনাতে উৎপল বেহেরা নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশের অনুমান, উৎপলের বাবা মাধব বেহারার পলিসির টাকা জমা দেওয়া নিয়ে বচসার জেরে বন্ধুপ্রকাশকে সপরিবারে খুন হতে হয়েছিল উৎপলের হাতে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছিল উৎপলের বাবার একটি পলিসির রশিদ।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, পুলিশি তদন্তে জানানো হয়েছে, একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন প্রিমিয়ামের টাকা নিয়েও জমা দিতেন না বন্ধুপ্রকাশ। এই নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাদ তাঁর থাকলেও উৎপল ছাড়া বাকি কারও সঙ্গে শত্রুতার আশঙ্কা কেন তদন্তের আওতায় এল না।