বগটুই কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখ। ফাইল চিত্র।
আত্মহত্যা? খুন? না, অন্য কোনও ভাবে মৃত্যু? সিবিআই হেফাজতে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে এই সব প্রশ্নের সদুত্তর এখনও মেলেনি। তোলপাড় চলছে এই রহস্যমৃত্যু নিয়ে। মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। তবে আইনজীবী শিবিরের একাংশের বক্তব্য, যে-ভাবেই মৃত্যু হোক, এই ঘটনায় সিবিআই পুরোপুরি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, হেফাজতে থাকা কোনও বন্দির মৃত্যু হলে কী ভাবে তার তদন্ত হবে, সেই ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা আছে। এবং লালনের মৃত্যু নিয়ে সেই পদ্ধতিতেই তদন্ত হওয়া উচিত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, হেফাজতে থাকা বন্দি মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় ‘এনকোয়ারি’ বা অনুসন্ধান প্রয়োজন। দরকার সংশ্লিষ্ট বিচারকের উপস্থিতিতে ‘ইনকোয়েস্ট’ বা সুরতহাল এবং ময়না-তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, হেফাজতে থাকা বন্দিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, না, তিনি আত্মহত্যা করেছেন অথবা কোনও শারীরিক অসুস্থতার জন্য মারা গিয়েছেন— একমাত্র এই ধরনের এনকোয়ারি থেকেই সেটা বোঝা সম্ভব। “পুলিশ বা সিবিআই হেফাজতে থাকা বন্দির মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর দায় এবং দায়িত্ব থাকবেই। কারণ, কোর্ট অভিযুক্তকে তাদের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে,” বলেন জয়ন্তনারায়ণ।
লালনকে সিবিআই হেফাজতে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। যদিও এই ধরনের ঘটনায় ময়না-তদন্তের আগে এফআইআর করা হয় না। আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার মতে, সুরতহাল এবং ময়না-তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি হবে। সেই সব হওয়ার পরে বিচার বিভাগীয় এনকোয়ারির পরে যে-রিপোর্ট কোর্টে জমা পড়বে, তার ভিত্তিতেই মামলা হতে পারে। আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই ধরনের মৃত্যুতে খুনের ধারা (আইপিসি ৩০২) যোগ করেই তদন্ত শুরু করা উচিত।
নিয়মবিধি অনুযায়ী লক-আপে এবং জেরার জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকা বাধ্যতামূলক। সেই ফুটেজও এই ধরনের ঘটনার তদন্তে অত্যন্ত উপযোগী। যেখানে লালনকে রাখা হয়েছিল, সিবিআইয়ের সেই অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে সে-সব ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেখানে এই সব ব্যবস্থা থেকে থাকলে এই রহস্যের সমাধানসূত্র পাওয়া সহজ হতে পারে।
গোটা দেশে হেফাজতে বন্দি-মৃত্যুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের দিকে। গত ২৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছিলেন, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সারা দেশে হেফাজতে বন্দি-মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৪৪৮৪টি। সব থেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। তার পরেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। অনেকেই বলছেন, এ রাজ্যে হেফাজতে বন্দি-মৃত্যুর ঘটনায় শৌচাগারের জানলায় দাঁড়িয়ে বা হাঁটু মুড়ে বসে ফাঁস লাগানো বন্দির দেহ মিলেছে। সেই সব ঘটনা নিয়ে সন্দেহ আছে বিস্তর।
জয়ন্তনারায়ণ বলেন, “আমি সিঁথি থানার হেফাজতে থাকা বন্দি-মৃত্যুর দু’টি ঘটনার আইনি লড়াই লড়ছি। সেগুলি হাই কোর্টে বিচারাধীন।”