উদ্ধার সরঞ্জাম নেই, কাঠগড়ায় সাগর-রক্ষীরা

চলতি মাসে পরপর নিম্নচাপের মধ্যে দু’টি নৌকায় বারদরিয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩০ জন মৎস্যজীবী। তিন জনকে কোনও মতে উদ্ধার করা গেলেও বাকিরা জলে ডুবে মারা যান।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

চলতি মাসে পরপর নিম্নচাপের মধ্যে দু’টি নৌকায় বারদরিয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩০ জন মৎস্যজীবী। তিন জনকে কোনও মতে উদ্ধার করা গেলেও বাকিরা জলে ডুবে মারা যান।

Advertisement

ওই ঘটনার পরেই উপকূলরক্ষী বাহিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে রাজ্য সরকার। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের অভিযোগ, উপকূলরক্ষী বাহিনী ফ্রেজারগঞ্জে ঘাঁটি তৈরি করলেও উদ্ধারকাজে তাদের কোনও পরিকাঠামোই নেই। তাই তারা বিপন্ন ধীবরদের উদ্ধার করতে পারেনি। পরিকাঠামোয় ঘাটতির এই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও জানানো হয়েছে। এই নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে ওই বাহিনী ও রাজ্য সরকারের মধ্যে

সাগরে চোরাশিকারি দমন, জঙ্গি হানা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা করার মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন উপকূলরক্ষী বাহিনীর উপরেই ন্যস্ত। নিরাপত্তার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশা উপকূলের গুরুত্ব বাড়ায় কলকাতাকে সদর দফতর করে এই দুই রাজ্যের উপকূলে বহর বাড়াচ্ছে তারা। তারই অঙ্গ হিসেবে বছর চারেক আগে, ইউপিএ সরকারের আমলে তৎকালীন মন্ত্রী পি চিদম্বরম ফ্রেজারগঞ্জ ঘাঁটির উদ্বোধন করেন।

Advertisement

মৎস্য দফতরের উপ-অধিকর্তা (মেরিন) সন্দীপ মণ্ডল জানান, ফ্রেজারগঞ্জে উপকূলরক্ষীদের ঘাঁটি থাকলেও কোনও জাহাজ নেই, হোভারক্রাফট নেই। বিপদে পড়লে হলদিয়া কিংবা আরও দূরের পারাদীপ থেকে জাহাজ আনতে হয়। দেরি হয় উদ্ধারকাজে। ‘‘ফ্রেজারগঞ্জে এই সুবিধা থাকলে অনেক উপকার হতো,’’ বলছেন মৎস্যমন্ত্রী। মৎস্য দফতরের একাংশ অবশ্য জানান, সরঞ্জামের অভাবের কথা মৎস্যসচিব আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণের জন্য যথাস্থানে আবেদন করা বা তৎপরতা দেখানো হয়নি। সম্প্রতি মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়ার পরে চন্দ্রনাথবাবু এবং সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা ফ্রেজারগঞ্জে গেলে উপকূলরক্ষী বাহিনীর পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মৎস্যজীবীরা।

ফ্রেজারগ়ঞ্জের ঘাঁটিতে যে জাহাজ থাকে না এবং জাহাজ রাখার উপায়ও নেই, তা মেনে নিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। তাদের মুখপাত্র, ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট অভিনন্দন মিত্র বলেন, ‘‘বন্দর ছাড়া আমাদের জাহাজ রাখা যায় না। তা ছাড়া ফ্রেজারগঞ্জে গভীরতা কম। তাই জাহাজ আনলেও আটকে যাবে।’’ তিনি জানান, ফ্রেজারগঞ্জ হোভারক্রাফটের ‘অ্যাডভান্সড বেস’। এক দিন অন্তর রাতে সেখানে হোভারক্রাফট থাকে। পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলে রোজ আকাশপথেও টহলদারি চলে। উদ্ধারকাজে পরিকাঠামোর অভাব নেই বলে অভিনন্দনবাবুর দাবি।

মৎস্যজীবী সংগঠন ‘ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক বিজন মাইতি জানান, ৮ অগস্ট শ’দুয়েক ট্রলার মাছ ধরতে গিয়েছিল। আগাম সতর্কবার্তা ছিল না। আচমকা নিম্নচাপে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় বিপদে পড়েন ধীবরেরা। অনেকে ফিরে এলেও ‘প্রসেনজিৎ’ ও ‘মহাগৌরী’ নামে দু’টি ট্রলারের খোঁজ মেলেনি। বিজনবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি বারবার উপকূলরক্ষীদের জানানো হলেও জাহাজ না-থাকায় যথাসময়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। শুধু বলা হয়, হলদিয়ায় জানানো হয়েছে।’’

উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের পাল্টা বক্তব্য, বাংলা উপকূলে ২৪ ঘণ্টাই তাদের জাহাজ টহল দেয়। বিপদবার্তা পেলে সেই জাহাজই উদ্ধারকাজ শুরু করে সকলের আগে। সাম্প্রতিক দুর্যোগেও টহলদার জাহাজ সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিয়েছিল। ‘‘ওই সময়ে ২০টি মাছধরা নৌকা এবং অন্তত ২৬০ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। গাফিলতি থাকলে অত জনকে আমরা উদ্ধার করলাম কী ভাবে,’’ বলছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা।

ওই বাহিনী সূত্রের খবর, প্রসেনজিৎ ও মহাগৌরী বিপদে পড়ে বাংলাদেশে গিয়ে। সীমান্ত পেরোনোর ক্ষেত্রে উপকূলরক্ষীদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষীদের বিষয়টি জানানো হয়। উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তার দাবি, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ভাবে ওই দু’টি ট্রলার খুঁজতে নেমেছিল। এর আগে এমন যৌথ অভিযান হয়নি।’’

সাগরে বিপদে প়়ড়লে দ্রুত উদ্ধার করা যায়, তার জন্য বিনামূল্যে ‘ডিসট্রেস অ্যালার্ট ট্রান্সপন্ডার’ (ডিএটি) দিচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে এই যন্ত্র দিয়ে মাঝসমুদ্রেও নৌকার নির্দিষ্ট অবস্থান জানা সম্ভব। সেই ট্রান্সপন্ডার এখনও সব নৌকায় লাগানো হয়নি বলে বাহিনী সূত্রের অভিযোগ। বিজনবাবু জানান, সম্প্রতি ১৫০০ ‘ডিএটি’ দেওয়া হয়েছে ধীবরদের। আরও দেওয়া হবে। ‘‘পরিকাঠামো তৈরি না-হলে ঠিক অবস্থান জেনে কী লাভ হবে,’’ প্রশ্ন ওই সংগঠন-কর্তার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement