Sujan-Kunal

যদি হন ‘সুজন’, চাকরি তালিকায় ১৩ জন! ঠিক হলে কি এটা স্বাভাবিক? নতুন প্রশ্ন তুললেন কুণাল

এ ব্যাপারে সুজন বলেন, ‘‘আমি কোনও কেল্টু-বিল্টুর অভিযোগের জবাব দেব না। মুখ্যমন্ত্রী তো শিক্ষামন্ত্রীকে বলেইছেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে। সেই শ্বেতপত্র প্রকাশ হোক, তার পর কথা হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ১২:২১
Share:

সুজনের পরিবারের কে কোথায় চাকরি করেন, সেই সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশ কুণাল। নিজস্ব ছবি।

বাম আমলে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর কলেজে চাকরি কি আদৌ নিয়ম মেনে হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে শাসকদলের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বিতর্ক থামেনি। তার মধ্যেই আরও একটি তালিকা প্রকাশ্যে আনলেন শাসক তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সুজনের পরিবারের কারা কোথায় চাকরি পেয়েছেন, সেই সংক্রান্ত একটি তালিকা টুইটারে প্রকাশ করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণালের প্রশ্ন, ‘‘সুজন’দা, তালিকা কি ঠিক?’’ যদি তা ঠিক হয়, তা হলে তার তদন্ত হোক বলেও দাবি জানান কুণাল।

Advertisement

এ ব্যাপারে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও কেল্টু-বিল্টুর অভিযোগের জবাব দেব না। মুখ্যমন্ত্রী তো শিক্ষামন্ত্রীকে বলেইছেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে। সেই শ্বেতপত্র প্রকাশ হোক, তার পর কথা হবে। কিছু ভুলভাল জিনিস নিয়ে জনতাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা রাজ্যের বর্তমানে ক্ষমতায় বসে ভবিষ্যতকে খারাপ করে দিয়েছে, তারা অতীতকে টেনে এনে নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তকে ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আসলে অতীতের তেমন কোনও ভুল ঘটনা তারা খুঁজে পাবে না। অহেতুক পণ্ডশ্রম করছেন বর্তমান শাসকদল।’’

টুইটার পোস্টে কুণাল দাবি করেছেন, উক্ত তালিকাটি তিনি সিপিএমের সূত্রেই পেয়েছেন। প্রকাশ্যে আসা তালিকায় সুজনের বোন, শ্যালিকা ও শ্বশুরমশাই ধরে মোট ১৩ জন সদস্যের নাম এবং কর্মস্থানের উল্লেখ রয়েছে। তালিকায় দাবি, সুজনের শ্বশুর শান্তিময় ভট্টাচার্য সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাক্তন জেলা সম্পাদক এবং জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। সুজনের বড়, মেজো এবং ছোট শ্যালিকা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সরকারি স্কুলে কর্মরত। সুজনের তিন বোনও সরকারি স্কুলে কাজ করেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই তালিকায়।

Advertisement

কুণাল টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সুজন চক্রবর্তীকে ঘিরে আবার একটি তালিকা সামনে এসেছে। সিপিএমের সূত্রেই বেরিয়েছে। তখন রাজ্যে অত বেকার, আর ওই বৃত্তে সবাই চাকরিতে।’’ সেই সঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্রের প্রশ্ন, ‘‘সুজনদা, তালিকা কি ঠিক? যদি ঠিক হয়, এত জনের চাকরি দৃশ্যত কি স্বাভাবিক? যদি তালিকা ভুল হয়, রটনা নিন্দার। যদি ঠিক হয়, তদন্ত হোক।’’

সম্প্রতি মিলির চাকরির একটি চিঠির প্রতিলিপি প্রকাশ্যে এনে তৃণমূল প্রশ্ন তোলে, কী ভাবে সুজনের স্ত্রী গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে চাকরি পেয়েছিলেন। মিলির নিয়োগপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কুণাল। তার প্রেক্ষিতে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মিলির দাবি, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সর্বৈব অসত্য। তাঁর চাকরির নিয়োগে কোনও ‘অস্বচ্ছতা’ ছিল না। কোনও ‘অনিয়ম’ হয়নি। ‘সিস্টেম’ মেনেই তিনি চাকরি পেয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ইন্টারভিউ বোর্ড যে পরীক্ষা নিয়েছিল, তাতে তিনি প্রথম হয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন মিলি। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুজন-পত্নী বলেছিলেন, ‘‘কারও সুপারিশে আমার চাকরি হয়নি। আমি সুপারিশে চাকরি পেয়েছি বলে যাঁরা বলছেন, তাঁরা সেই প্রমাণ প্রকাশ্যে আনুন। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম!’’ এই বিতর্কে বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, এখন দুর্নীতির অভিযোগে শাসকদলের অস্বস্তি বাড়ছে বলেই পুরনো প্রসঙ্গ টেনে এনে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।

সুজন প্রসঙ্গে আগেই মুখ খুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। জানিয়েছেন, মিলি ভট্টাচার্য ২০২১ সালে অবসর নিয়েছেন। ১০ বছর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বেতন নিয়েছেন। ব্রাত্যের কথায়, ‘‘আমরা তদন্ত শুরু করলে মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন যে, ‘আমাকে না জানিয়ে আমার সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছ কেন’, তাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েই যা করার করা হবে।’’ আগের জমানায় যে সব বাম নেতার আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন ব্রাত্য। সেই আবহে সুজনের পরিবারের কে, কোথায় চাকরি করেন বা করেছেন, তার একটি তালিকা প্রকাশ্যে আনা হল। যা বাম আমলে ‘নিয়োগ দুর্নীতি’র অভিযোগ ঘিরে বিতর্কে অন্য মাত্রা জুড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদন প্রথম বার প্রকাশের সময় মিলি চক্রবর্তীকে ‘অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা’ লেখা হয়েছিল। এই তথ্যটি ভুল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement