বরকতদা (গনি খান চৌধুরী) যখন রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন, তখন থেকেই সোমেন মিত্রের সঙ্গে আমাদের কোতোয়ালি বাড়ির পারিবারিক যোগাযোগ। বরকতদার সঙ্গে দেখা করতে কোতোয়ালির বাড়িতে অনেক বার এসেছেন সোমেনদা। বলতে গেলে কলকাতার পরে কোতোয়ালি বাড়ি ছিল সোমেনদার দ্বিতীয় বাসস্থান। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তিনি। বরকতদার মৃত্যুর সময়েও তিনি মালদহে এসেছিলেন। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই ঋণ আমরা ভুলব না কোনওদিন।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে রাজ্যে কংগ্রেসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মালদহ যেহেতু কংগ্রেসের ঘাঁটি, সে কারণে তিনি এ জেলাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। মালদহে দলকে কী করে আরও শক্তিশালী করা যায় তার পরামর্শ তিনি আমাকে দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ মেনে এবং বরকতদার দেখানো পথ সামনে রেখেই মালদহে আমরা দলকে শক্তিশালী করতে পেরেছি।
বরকতদার মৃত্যুর পর অবসর পেলেই আমা দের বাড়িতে চলে আসতেন সোমেনদা। আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। স্নেহ করতেন আমার ছেলে ইশাকেও। গত লোকসভা নির্বাচনে ছেলেকে উত্তর মালদহ লোকসভা আসনে প্রার্থী করানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম। ছেলেকে সাহস জুগিয়েছিলেন। ভোটে হার হলেও ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মানুষের পাশে থাকো, জয় এক দিন হবেই।’’
মালদহে দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার পর্ব বরাবরই ছিল আমাদের বাড়িতেই। তিনি শেষ বার মালদহে এসেছিলেন এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সে দিন মালদহ টাউন হলে জেলা কংগ্রেসের সিএএ বিরোধী কর্মসূচিতে মূল বক্তা ছিলেন তিনি। রাতে কলকাতা ফেরার আগে আমাদের বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করেন। খাওয়ার পর রসিকতা করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ডালুদা, এমন যদি ডিনার হয় তো মাসে একটা করে মিটিং করতে আসব।’’
কিন্তু আর তিনি আসবেন না। এ দিন ভোরে যখন তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে মাথায় বাজ পড়লো। আমি খুবই মর্মাহত। সে দিনের কথাগুলো এখনও কানে ভাসছে।
(লেখক দক্ষিণ মালদহের সাংসদ)