যাদবপুরের পরে ছাত্র-অসন্তোষ এ বার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যাদবপুরে ক্ষোভ ছিল উপাচার্যের বিরুদ্ধে। আর প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা ক্ষুব্ধ ছাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ হাজিরা-বিধি মেনে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায়।
হাজিরা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতিবাদে মাস দুয়েক আগে অনশনে বসেও সফল হননি প্রেসিডেন্সির এক দল ছাত্রছাত্রী। ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় এ বার সেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে দেড়শোরও বেশি পড়ুয়ার নাম বাদ গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তাই ক্ষুব্ধ। সকলকেই ছাত্রভোটে যোগদানের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে জানান বর্তমান ছাত্র সংসদের নেতারা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। কাল, শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু হবে। এবং এ বার শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে প্রেসিডেন্সিতে।
এই পরিস্থিতিতে শুধু সাধারণ পড়ুয়া নয়, হাজিরা-বিধির কোপে পড়েছেন ছাত্র সংসদের কর্মকর্তারাও। সব পড়ুয়াকেই ভোটে যোগদানের সুযোগ দেওয়ার দাবি না-মানলে আন্দোলনের পথ ধরা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্র সংসদের সভাপতি সুমাল্য মুখোপাধ্যায়। হাজিরার হার কম থাকায় ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নামও বাদ পড়েছে। বাদ পড়ার তালিকায় আছেন বর্তমান ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট অমরদীপকুমার সিংহও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে ন্যূনতম হাজিরা না-থাকলেও ভোটার তালিকায় নাম রাখার দাবি কেন?
অমরদীপের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এমন কোনও নিয়মই নেই। আজ, বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে ডিন অব স্টুডেন্টস দেবশ্রুতি রায়চৌধুরীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে বসার কথা আছে।
আইনে ছাত্রভোটের ক্ষেত্রে হাজিরা-বিধি মানার কোনও কথা নেই বলে অমরদীপ দাবি করলেও প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই সব হচ্ছে। দেবশ্রুতিদেবীও একই কথা জানান। তিনি বলেন, “সকলেই যাতে ভোট দিতে পারে, সেই আবেদন জানিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে একটি চিঠি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই ন্যূনতম হাজিরার বিষয়টি নির্দিষ্ট করা আছে।”
নির্দিষ্ট নিয়মটা কী?
রেজিস্ট্রার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনও পড়ুয়ার ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ হাজিরা না-থাকলে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় রাখা হয় না। তবে এই শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষায় বসার জন্যও উপস্থিতির হার সংক্রান্ত নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাত্রভোটের ক্ষেত্রেও হাজিরার হার কম করা হয়েছে। দেবজ্যোতিবাবু বলেন, “এ বছরের জন্য নিয়ম কিছুটা শিথিল করে ৬০% হাজিরা থাকলেই ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ছাত্রছাত্রীদের নাম রাখা হচ্ছে। কিন্তু প্রায় ১৮০ জন পড়ুয়ার হাজিরার হার এর থেকেও কম। তাই তাঁদের নাম বাদ দিয়েই প্রাথমিক ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে।”
সুমাল্যের প্রশ্ন, ভর্তির সময়েই ছাত্র সংসদ খাতে ফি (ইউনিয়ন ফি) নেওয়া হয়। তা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে এত ছাত্রকে বাদ দেওয়া হচ্ছে কেন? “এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। দাবি না-মানলে আন্দোলনের দিকেই যেতে হবে,” হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্র সংসদের সভাপতি। আর অমরদীপের কথায়, “এই ধরনের একটা অগণতান্ত্রিক নিয়ম দেখিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নির্বাচিত হতে পারে না।”
হাজিরার হার কম থাকায় পরীক্ষায় বসতে না-পেরে নভেম্বরে অনশন আন্দোলনের পথ ধরেছিলেন প্রেসিডেন্সির এক দল পড়ুয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই আন্দোলন সফল হয়নি। কিন্তু তাতে তাঁরা দমে যাননি। এ বার ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনের তোড়জোড় চালাচ্ছেন ছাত্র সংসদের নেতারা।