সল্টলেকের দরেই কিনতে হবে ত্রিফলা

সল্টলেকের ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের দামকে মাপকাঠি ধরে ওই দরেই রাজ্যের সব পুরসভাকে ত্রিফলা বাতি কেনার পরামর্শ দিল পুর দফতর। অর্থাৎ, ওই বাতিস্তম্ভ কেনার ক্ষেত্রে কলকাতা-সহ রাজ্যের কিছু পুরসভার দেওয়া দরে যে গরমিল রয়েছে, তা কার্যত মেনে নিল সরকার। ত্রিফলা বাতির বরাত দেওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কলকাতা পুরসভায়। তাতে রাজ্য জুড়ে হইচইয়ের পরে পুরসভার অডিটেও সেই অনিয়ম ধরা পড়ে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

সল্টলেকের ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের দামকে মাপকাঠি ধরে ওই দরেই রাজ্যের সব পুরসভাকে ত্রিফলা বাতি কেনার পরামর্শ দিল পুর দফতর। অর্থাৎ, ওই বাতিস্তম্ভ কেনার ক্ষেত্রে কলকাতা-সহ রাজ্যের কিছু পুরসভার দেওয়া দরে যে গরমিল রয়েছে, তা কার্যত মেনে নিল সরকার।

Advertisement

ত্রিফলা বাতির বরাত দেওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কলকাতা পুরসভায়। তাতে রাজ্য জুড়ে হইচইয়ের পরে পুরসভার অডিটেও সেই অনিয়ম ধরা পড়ে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ অডিট করে ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি)। সিএজি ঠিক করে, কলকাতার সঙ্গে রাজ্যের আরও কিছু পুরসভা কী দরে ত্রিফলা কিনেছে, তা-ও দেখবে তারা। পরে তাদের রিপোর্টেই ধরা পড়ে বাতিস্তম্ভ কেনার বরাত দেওয়ায় অনিয়মের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভায় যে দামে তা কেনা হয়েছে, তা-ও বাজার দরের থেকে বেশি। সিএজি অডিটের ওই রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্যের পুর-সচিবকে। তাতেই টনক নড়েছে সরকারের।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা যে দামে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কিনেছে, তার দর বেশি। ব্যতিক্রম শুধু বিধাননগর পুরসভা। এর পরেই পুর দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কেনা ও বসানোর জন্য যে দাম দিয়েছে বিধাননগর পুরসভা, সেটাকেই ‘ফেয়ার রেট’ হিসেবে গণ্য করা হোক। প্রসঙ্গত বছর দুয়েক আগেই বিধাননগর পুর-প্রশাসন ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ পিছু (বসানোর খরচ সমেত) ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ করেছে। অথচ কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য পুর প্রশাসন তার জন্য ব্যয় করেছে কমপক্ষে ২৪ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

Advertisement

পুর দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা পুর-প্রশাসন ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ পিছু ১৭ হাজার ৬৯০ টাকা দর নির্ধারণ করেছিল। এর উপরে ছিল বসানোর খরচ। সেই দরকেই প্রামাণ্য হিসেবে মেনে নিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভা ত্রিফলা বাতি বসানো শুরু করে। সে সময়েই ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের বরাত দেওয়া নিয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কলকাতা পুরসভায়। পুর আইন না মেনে প্রায় ২৭ কোটি টাকার কাজ ৫৪০টি ভাগে ভাগ করায় পুরসভার আলো বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পুর প্রশাসন তা নিয়ে অন্তর্বর্তী অডিট করে। অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে তখনই। জানা যায়, শুধু বরাতে অনিয়ম নয়, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ পিছু অনেক বেশি টাকা ব্যয় করেছে পুর প্রশাসন।

সিএজি রিপোর্টের ভিত্তিতেই কি বিধাননগর পুরসভার দরকে মাপকাঠি করার সিদ্ধান্ত নিল সরকার?

পুর দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “ঠিক তা নয়। প্রথম যখন ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানো শুরু হয়, তখন ওই ধরনের বাতি নতুন ছিল। সে কারণেই তার দর চড়া ছিল। পরে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে বাজার দরও কমেছে।” তার পরেও কেন পুরনো দরে (বেশি) ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কেনা হয়েছে, তার অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা দেননি ওই আধিকারিক। সিএজি-র খোঁচা খেয়েই যে পুর দফতর নড়েচড়ে বসেছে, তা পরোক্ষে স্বীকারও করেছেন একাধিক পুর-কর্তৃপক্ষ।

সিএজি-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কলকাতা পুরসভা-সহ হিডকো, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা, হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা, উত্তর দমদম ও মহেশতলা পুরসভায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে। বিধাননগর পুরসভার দর সর্বনিম্ন। যদিও সর্বত্রই একই মানের বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে।

সিএজি-র তোলা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় পুর দফতরে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও জানিয়ে দেন, বেশি দরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কেনা যাবে না। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করতে নতুন দরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ কেনার জন্য রাজ্যের প্রতিটি পুর প্রশাসনকে নির্দেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুর দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, একই মানের বাতিস্তম্ভ বিধাননগরের থেকে কম দামে অন্য পুর-প্রশাসন কিনতেই পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কখনওই যেন তার বেশি না হয়। সমস্ত পুরসভায় তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওই কর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement