মোটরবাইক নিয়ে সল্টলেকের রাস্তায় ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম্য যে এখনও চলছে তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল।
সোমবার বিকেলের আলো নিভে যাওয়ার আগেই আইএ ব্লকের ভিতরে এক মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। সেই ব্লকেরই বাসিন্দা ওই মহিলা চিকিৎসক চিৎকার করে ওঠায় পালিয়ে যায় তিন মোটরবাইক-আরোহী।
সংখ্যার হিসেব বলছে, সল্টলেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা কমেছে। ২০১২ সালে অগস্ট মাস থেকে দু’মাসের মধ্যে একটানা ১৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালেও বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। তাদের কেউ যেমন সোনারপুরের বাসিন্দা, কেউ নারকেলডাঙায় থাকে। তাদের বেশিরভাগ এখন জেলে।
তা হলে সোমবার যারা এল তারা কারা? সল্টলেক কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “নতুন কোনও দল কি না খতিয়ে দেখছি।” সোমবার ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে সেই দলটি পালায়। সন্ধ্যায় বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ একটি মোটরবাইক আটক করে। কিন্তু, আসল দলটি ধরা পড়েনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
তখনও দিনের আলো স্পষ্ট। বিকেল পাঁচটা নাগাদ চিকিৎসক পিয়ালি দেবনাথ সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে নেমে হেঁটে আইএ ব্লকের বাড়িতে ফিরছিলেন। ব্লকের ভিতরেই পার্কের পাশে একটি মোটরবাইকে চেপে তিন যুবককে তাঁর কাছাকাছি ঘুরতে দেখেন পিয়ালি। তাঁর অভিযোগ, বার তিনেক ওই বাইকটি তাঁর চারপাশে চক্করও কাটে। শেষে এক বাইকআরোহী একেবারে কাছে এসে গলায় হাত দিয়ে হার টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাইকটি দাঁড়ায়নি। চলন্ত অবস্থাতেই ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। চিৎকার করে ওঠেন পিয়ালি। সেই সময় কাছের একটি বাড়ির বারান্দায় দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বসেছিলেন। পিছন থেকে হেঁটে আসছিলেন দুই যুবতীও। পিয়ালির চিৎকারে ঘাবড়ে গিয়ে তাঁকে ছেড়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। পিয়ালি বলেন, “তিন জনের মাথাই হেলমেটে ঢাকা ছিল। আমার গলায় চাদর ছিল। ফলে ওরা হার নিতে পারেনি। আমি ওদের চেহারাও দেখতে পাইনি।”
আইএ ব্লকের বাসিন্দাদের সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ সরকার। তাঁর অভিযোগ, “ব্লকের মধ্যে সন্দেহজনক বাইরের লোক ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অন্তত তিন-চার ঘণ্টা অন্তর পুলিশ যাতে ঘুরে যায় তার জন্য বার বার পুলিশকে বলা হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে, সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জেরা করতে। কিন্তু, পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না।”
পুলিশের একাংশ বলছে, এ ভাবে প্রতিটি ব্লকে ঘুরে নজরদারি চালানোর মতো পুলিশ বিধাননগর কমিশনারেটের হাতে নেই। তা ছাড়া, এর আগে ব্লকের ভিতরে ঢুকে বাইক আরোহীদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে উল্টে বিপত্তি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সেই সব আরোহী সম্ভ্রান্ত ঘরের। সল্টলেকের বাসিন্দা। অনেক সময় পুলিশের এই ‘বাড়াবাড়ি’-র জন্য পুলিশ কর্তার কাছে ফোন গিয়েছে। পুরস্কারের বদলে তিরস্কার জুটেছে।
পুলিশের যুক্তি, এর আগে সল্টলেকে যারা ছিনতাই করেছে, তাদের ছিনতাইয়ের ধরণ ছিল ভিন্ন। দূর থেকে লক্ষ রেখে আচমকা পিছন থেকে এসে হার ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। কখনও ছিনিয়ে নিয়েছে সঙ্গের ব্যাগ। সোমবার যে ভাবে তিন জন মোটরবাইক নিয়ে বার তিনেক পিয়ালির চারপাশে ঘুরেছে এমনটা আগে শোনা যায়নি। এতে ছিনতাইবাজদের ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার একটি বাইকে তিন জন দুষ্কৃতীর সকলেই হেলমেট পরে রয়েছে, এমনটাও আগে বিশেষ দেখা যায়নি। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “নিছক মজা করার জন্য কলেজছাত্রীকে নিয়ে ছিনতাই করার মতো ঘটনা ঘটেছে। দিনের আলোয়, কাকভোরে বা রাতের অন্ধকারে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু, এ ভাবে শিকারের চারপাশে চক্কর মারার পরেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা বিশেষ শোনা যায়নি।”
সল্টলেকের বাসিন্দাদের নিয়ে তৈরি সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “প্রতিটি ব্লকে দোকান, পার্লার, অফিসের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক বহিরাগত সে সব জায়গায় যাতায়াত করছেন। একা পুলিশের পক্ষে নজরদারি সম্ভব নয়। আমরা এর দায় এড়াতে পারি না।”