বিকাশ ভবনের সেই স্টল। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা মানেই ইলিশের খোঁজ পড়ে বাঙালির ঘরে ঘরে। সঙ্গে খিচুড়ি হলে তো কথাই নেই। এ দিকে, সময় বড় বালাই। খেতে মন চাইলেও হাত পুড়িয়ে রাঁধবেন কখন? মুশকিল আসানের ঠিকানা হতে পারে মৎস্য দফতরের নতুন ফুড স্টল। যেখানে আর ক’দিনের মধ্যেই আসতে চলেছে খিচুড়ি-ইলিশ ভাজার লাঞ্চপ্যাক।
আকাশছোঁয়া দামের কারণে ইলিশ খাওয়ার সাধে অনেক সময়েই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সাধ্য। তারও সমাধান কি মিলতে পারে ফুড স্টলেই? মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, ইলিশের জোগান যা তাতে আপাতত খিচুড়ি-ইলিশ ছাড়া নানা রকমারি পদ তৈরি করা মুশকিল। জোগান বাড়লে বিষয়টি তারা ভেবে দেখবেন। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিকাঠামোরও অভাব রয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর।
এই স্টল আপাতত রয়েছে বিকাশ ভবন আর নলবন ফুডপার্কে। যেখানে রকমারি মাছ-মাংস ছাড়াও রান্না করা মাছ ও মাংসের একাধিক পদও তৈরি হচ্ছে। বাজারচলতি দামের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কমে। ফলও মিলছে হাতেনাতে। ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক টাকার বিক্রিবাট্টাও হয়েছে বলে মৎস্য দফতর সূত্রে খবর। রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের দাবি, আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়েছে ওই স্টলদুটি। সফল হলে তবেই তা ছড়িয়ে পড়বে রাজ্যের নানা প্রান্তে।
যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ, সঠিক বিপণনের ব্যবস্থা না করে এই পরিকল্পনা কার্যকরী করতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। শহরের জনবহুল জায়গার বদলে এক নির্দিষ্ট প্রান্তে স্টল চালু করায় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অন্ধকারেই থাকছেন।
মৎস্য দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, নিজস্ব জায়গায় এই ফুড স্টল নিয়ে পরীক্ষা চালানো তুলনামূলক ভাবে সহজ। তাই সেখানেই স্টল চালু করা হয়েছে। তবে এখানেই থেমে থাকতে রাজি নয় মৎস্য দফতর। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “নিজস্ব জায়গায় স্বল্প পরিকাঠামো দিয়ে আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে স্টল দু’টি চালু করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন গাড়ি করে শহরের জনবহুল জায়গাতে ছড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিপণনের পরিকল্পনাও রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা কার্যকরী করা হবে।”
কেমন সেই পরিকল্পনা?
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম ও ওয়েস্টবেঙ্গল লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এই মাছ-মাংস বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের পরিচালন অধিকর্তা সৌম্যজিৎ দাস জানান, পরিকল্পনা সফল হলে কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়ি, আসানসোল ও দুর্গাপুরেও ওই ধরনের ফুড স্টল করা হবে। রান্না করা মাছ-মাংস কিংবা স্রেফ কাঁচা মাছ-মাংস বিভিন্ন বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। দফতর সূত্রের খবর, ওই ধরনের ফুড স্টলের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির চিন্তাভাবনাও চলছে।
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে তামিলনাড়ু থেকে আনা ৬-৭ কেজির মাছ পরীক্ষামূলক ভাবে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করার কাজ শুরু হয়েছে। গত ১২ জুন থেকে চালু হওয়া ওই স্টলে ফিশফ্রাই, ফিশ পকোড়া, ফিশ ফিঙ্গার, চিলি ফিশ, ফিশ টিক্কা, ফিশ রোল, চিকেন পকোড়া, ড্রামস্টিক থেকে শুরু করে রান্না করা রকমারি মাছ-মাংসের পদ পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া, রয়েছে রুই, কাতলা, কালবোসের মতো মাছ এবং নানা ধরনের মাংস।
কেমন সাড়া পাচ্ছে মৎস্য উন্নয়ন নিগম? মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, বিকাশ ভবনের স্টলে গত পনেরো দিনে গড়ে আড়াই হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। নলবনের স্টলে তা প্রায় দৈনিক চার হাজার টাকার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
গড়িয়া থেকে অফিসের কাজে সল্টলেকে গিয়েছিলেন জয়ন্ত রায়। নলবন ফুডপার্কে ওই স্টলে ফিশফ্রাইয়ে কামড় দিয়ে বলেন, “ভেবেছিলাম বাড়ির জন্য নিয়ে যাব। কিন্তু ফয়েল প্যাকে খাবার নিয়ে গেলেও বড়জোর দু’ঘণ্টা তা গরম থাকবে। কিন্তু অফিস শেষে বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত এই খাবার ঠিক রাখা মুশকিল। তাই নেওয়া গেল না। তবে সস্তায় বেশ ভাল মানের খাবার।”
বিকাশ ভবনের নর্থ ব্লকে মৎস্য দফতরের অফিসের মধ্যে ওই স্টল থেকে রান্না করা মাংস কিনে বেরোনোর পথে ইছাপুরের বাসিন্দা গৌরী বসু বলেন, “নেহাত কাজে এসেছিলাম, তাই জানতে পারলাম। নিজে খেয়ে দেখলাম, বাড়িতেও নিয়ে যাচ্ছি। তবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন স্টল হলে ভাল হয়।”