মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতেই প্রহৃত পুলিশ, ধৃত ৩

ফের শহরে আক্রান্ত পুলিশ। গত এক মাসে কসবা, গরফা, আলিপুর, প্রিন্সেপ ঘাটের পরে সোমবার রাতে কালীঘাট রোডে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মার খেতে হল দুই পুলিশকর্মীকে। ভাঙচুর করা হল এক পুলিশকর্মীর মোবাইল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

ধৃত শর্মিষ্ঠা, মধুময় ও সুরজিৎ। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র

ফের শহরে আক্রান্ত পুলিশ।

Advertisement

গত এক মাসে কসবা, গরফা, আলিপুর, প্রিন্সেপ ঘাটের পরে সোমবার রাতে কালীঘাট রোডে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মার খেতে হল দুই পুলিশকর্মীকে। ভাঙচুর করা হল এক পুলিশকর্মীর মোবাইল। আলিপুর থানা আক্রমণের পরে অভিযোগ উঠেছিল, হামলাকারীদের ধরার চেষ্টাই করেনি পুলিশ। এ বার অবশ্য অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে দেরি করেননি কালীঘাট থানার অফিসারেরা। সোমবারের ঘটনায় অভিযুক্তেরা রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-নেতা থেকে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের নাম করে হুমকি দিলেও তা অগ্রাহ্য করে ওই রাতেই ঘটনাস্থল থেকে এক মহিলা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁদের এসইউভি গাড়িটিও।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম মধুময় ঘোষ, শর্মিষ্ঠা ঘোষ এবং সুরজিৎ বেরা। এঁদের মধ্যে মধুময় এবং শর্মিষ্ঠা স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের বাড়ি বেহালায়। অপর অভিযুক্ত তাঁদের আত্মীয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃতদের এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয়। শর্মিষ্ঠা জামিন পেয়ে গেলেও বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement

এক মাসের ব্যবধানে কসবা, গরফা, আলিপুর, প্রিন্সেপ ঘাটের মতো ঘটনায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের এই মনোভাব নিয়ে চিন্তিত কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। এক কর্তার বক্তব্য, “খাস শহরের বুকেই যদি ডিউটি করার সময়ে পুলিশকে এ রকম বাধার সামনে পড়তে হয়, তবে ধরেই নিতে হবে পুলিশের উপরে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।”

কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানায় পুলিশকর্মীদের একাংশ আবার বলছেন, “পুলিশ মানুষের বন্ধু হতে গিয়ে নিজের জায়গা থেকে সরে এসেছে। তার ফলেই রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ, কেউই এখন আর পুলিশের উর্দি দেখলে ভয় পায় না। তারই জেরে পুলিশের উপরে আক্রমণ চলছে।” যদিও পুলিশকর্তারা দাবি করেছেন, গত এক মাসের কোনও ঘটনাই পরিকল্পিত নয়।

কী ঘটেছিল সোমবার রাতে?

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টো দিকে হাজরা এবং কালীঘাট রোডের মুখে মোটরবাইকে ডিউটি করছিলেন কালীঘাট থানার কনস্টেবল প্রবীর সেন। রাত পৌনে তিনটে নাগাদ তিনি দেখতে পান, একটি এসইউভি গাড়ি বেপরোয়া ভাবে হাজরা রোড থেকে কালীঘাট রোডের দিকে যাচ্ছে। অভিযোগ, প্রবীরবাবু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে গাড়িটি তাঁর বাইকে ধাক্কা মারে। তিনি ছিটকে পড়লে তাঁর পায়ে আঘাত লাগে। ক্ষতি হয় বাইকটিরও।

পুলিশের দাবি, গাড়িটি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে তা দেখতে পান ওই রাস্তায় টহলদার পুলিশ-ভ্যানে থাকা কালীঘাট থানার ডিউটি অফিসার, সাব ইনস্পেক্টর স্বপন মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক গ্রিন পুলিশ ও গাড়িচালক। ওই অফিসার গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে একটি হোটেলের সামনে এসএউভি গাড়িটিকে থামতে বাধ্য করেন।

পুলিশের দাবি, গাড়িটিকে থামানোর পরেই নেমে আসেন অভিযুক্তেরা। পুলিশ কেন তাঁদের আটকেছে, তা জানতে চান শর্মিষ্ঠা ও সুরজিৎ। এই নিয়ে পুলিশ-ভ্যানটির গায়ে ধাক্কা মারতে থাকেন ওই অভিযুক্তেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সময়ে ভ্যান থেকে নেমে আসেন সাব ইনস্পেক্টর স্বপন মণ্ডল। তিনি ওই যুবকদের কাছে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান। অভিযোগ, মধুময়রা তা দেখাতে অস্বীকার করে গালিগালাজ শুরু করেন। এক পুলিশকর্মী এ দিন জানান, ওই অভিযুক্তেরা বিভিন্ন মন্ত্রী ও পুলিশকর্তার নাম করে হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁদের কেউ গ্রেফতার করতে পারবে না। অভিযোগ, পুলিশের গাড়ির চালক মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে শর্মিষ্ঠা তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোবাইল কেড়ে সেটি রাস্তায় আছড়ে ভেঙেও ফেলেন। অপর এক অভিযুক্ত ওই চালককে মারতে উদ্যত হলে সাব-ইনস্পেক্টর তাতে বাধা দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বচসা চলাকালীন ওই মহিলা স্বপনবাবুকে মারধর করেন। সহকর্মীদের মারধর করা হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কালীঘাট থানার অন্য পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশকর্মীদের মারধর এবং সরকারি কাজে বাধাদান-সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মধুময়, শর্মিষ্ঠা এবং সুরজিৎকে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই রাতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটান অভিযুক্তেরা। পুলিশের দাবি, ঘটনার সময়ে তিন জনই মত্ত অবস্থায় ছিলেন। অভিযুক্তেরা ব্যবসায়ী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement