একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তপসিয়ায়। ছবি: সুদীপ আচার্য
‘স্বপ্নের নগরী’ হয়ে গিয়েছে কলকাতা। এমনটাই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার কথায়, “এক সময়ে এই শহর ছিল লোডশেডিংয়ের শহর। এখন তা নেই। আগে বৃষ্টি হলেই এক কোমর জল দাঁড়িয়ে যেত। নামতই না। এখন কিছু এলাকায় জল দাঁড়ালেও ছ-আট ঘণ্টার মধ্যে সরে যায়। আগেকার মতো মা্যন মেড বন্যাও করতে দিইনি। আমাদের আমলে ইকো পার্ক, গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন হয়েছে, কলকাতা আই তৈরি হয়েছে। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আলোয় সেজে উঠেছে শহর। রাস্তাঘাট জঞ্জালমুক্ত করতে বসেছে কমপ্যাক্টর।”
সোমবার তপসিয়ায় কলকাতা পুরসভা নির্মিত শব সংরক্ষণাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা স্বপ্নের নগরী করতে চাই কলকাতাকে।” তাঁর বক্তব্যের মাঝপথেই মমতা বলে ওঠেন, “শুধু করতে চাই না। হয়েও গিয়েছে।” সে কথার রেশ ধরেই সুব্রতবাবুও বলেন, “হ্যাঁ, হয়ে গিয়েছে।”
পুরভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমন দাবি স্বভাবতই অন্য রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। মমতা নিজেও বলেছেন, “সুব্রত বলছিলেন, এটা নিয়ে কাগজে লেখা হবে পুর-ভোটের মুখে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেষ্টা। এটা কিন্তু প্রতিশ্রুতি নয়। প্রতিফলন। প্রতিশ্রুতি অনেকই হয়। ক’টা আর ফলপ্রসু হয়?”
সেই সঙ্গেই এ দিন মমতার কথা উস্কে দিয়েছে কাজিয়াও। বিশেষত এ কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আঙুল তুলেছেন প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দিকে। বলেছেন, “আগে যিনি মেয়র ছিলেন, তিনি কিছুই করেননি। এখন তো আবার উনি এখানে-ওখানে ঘুরে ঘুরে মামলা ঠুকছেন।” যার উত্তরে প্রাক্তন মেয়র বিকাশবাবু বলেন, “মমতা যদি এ রকম অসত্য ভাষণ দেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা করব।”
এর পাশাপাশিই শহরে পরিষেবার উন্নয়নের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁদের আমলে বৃষ্টি হলেই জল দাঁড়ায় না। প্রাক্তন মেয়র বিকাশবাবু পাল্টা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী অসত্য ভাষণে পারদর্শী। কখনওই সত্য কথা বলেন না। কলকাতা শহরে জল জমে থাকার সমস্যার সমাধন হয়েছে আমাদের আমলেই। দেড়শো বছরের পয়ঃপ্রণালী সংস্কার করা হয়েছে আমার আমলেই। এই কৃতিত্ব মমতা বা শোভনের নয়। ওরা বিজ্ঞাপন দেওয়ায় যা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে শহরের উন্নয়ন করা যেত। আমরা বিজ্ঞাপন না দিয়ে গোপনে কাজ করেছি।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে কলকাতা পুরসভার কাজের প্রশংসা করে মমতা বলেন, “পৃথিবীতে যত শহর রয়েছে, তার মধ্যে আনপ্ল্যানড সিটি হিসেবে কলকাতা যে ভাবে উন্নতি করছে তাতে এই শহর এক নম্বরে। আগামী দিনে তা প্রমাণিত হবে।” রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা যায়, তৃণমূলের আমলেই শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে এক সময়ে ‘মৃত নগরী’ বলে অভিহিত এই শহরের। এমনকী বিভিন্ন শহরকে নিয়ে এক সমীক্ষার সূত্র ধরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থও বলেন, “কলকাতা এখন ভারতের অন্যতম নিরাপদ শহর। অপরাধের সংখ্যাও এখানে কম। ক্রাইম রেকর্ডও কম।”
তবে নগর পরিকল্পক দীপঙ্কর সিংহ বলছেন, “কোনও শহর স্বপ্নের নগরী হয়েছে কি না, তা জানতে চারটি সূচক রয়েছে। বাসযোগ্য পরিবেশ, কাজের সুযোগ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি এবং পর্যটনের মতো সূচকগুলি দিয়েই বিচার করতে হবে, শহর কতটা স্বপ্নের নগরী হয়েছে বা হয়নি।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পাঁচ বছর ধরে পুরসভার দায়িত্বে থেকে অন্তিম লগ্নে পৌঁছেছি। হয়তো অনেক কিছুই আমাদের চোখে পড়েনি। কিন্তু মমতাদির নজরে পড়েছে। পড়লেই উনি আমাদের সেই দিকে দৃষ্টি দিতে বলেছেন।” আর পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, “রাজীব গাঁধী কলকাতাকে ডাইং সিটি বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ শহর যে ভাবে গড়ে উঠেছে, তার জন্য নাগরিক হিসেবে আমরা সকলেই গর্বিত।”
এ দিন শব সংরক্ষণাগারের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “৬৬-৬৭ বছর ধরে অনেকেই এসেছেন-গিয়েছেন। কিন্তু একটা সরকারি শব সংরক্ষণাগারের কথা কেউ ভাবেননি। আমরা করে দেখালাম।” তিনি জানান, বেসরকারি সংস্থা পিস হেভ্ন আছে বটে, কিন্তু তাতে মাত্র তিনটি শব রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি এই কেন্দ্রে ২৪টি শব সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে। আপাতত ৮টি দিয়ে শুরু হল।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ, দেবব্রত কুমার এবং সুশান্ত ঘোষ। অনুষ্ঠানে বসে নবদ্বীপে একটি রবীন্দ্র সংস্কৃতি ভবনের উদ্বোধন করেন মমতা। উপস্থিত ছিলেন নদিয়ার জেলাশাসক।