দুর্ঘটনার পরে। বুধবার রাতে, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: শৌভিক দে।
বড়দিনের আগের রাত থেকে ২৪ ঘণ্টায় শহরে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলা-সহ চার জনের। এর মধ্যে তিন জন মোটরবাইক আরোহী।
বুধবার গভীর রাতে ম্যাটাডরের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে বো-ব্যারাকের বাসিন্দা মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের। যার জেরে এ দিন বন্ধ রাখা হয় বো-ব্যারাকের উত্সব।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত দুটো নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। মৃতের নাম ক্লাইড ভেনচুরা (২৩)। বড়দিন উপলক্ষে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি গির্জায় গিয়েছিলেন। ‘মিডনাইট মাস’ শেষে সেখানেই বন্ধুদের সঙ্গে বড়দিনের আনন্দ উপভোগ করছিলেন ক্লাইড। পরে রাতে মোটরবাইক নিয়ে ফেরার পথেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশের দাবি, ক্লাইড মোটরবাইক নিয়ে বো-ব্যারাকে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় হিন্দ্ সিনেমার কাছে তাঁর মোবাইলে এক বন্ধুর ফোন আসে। মোটরবাইক চালাতে চালাতেই ওই যুবক ফোনে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় আচমকাই উল্টো দিক থেকে একটি মাল ভর্তি ম্যাটাডর তাঁর সামনে চলে আসে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ম্যাটাডরের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ক্লাইডের। পরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ম্যাটাডরটিকে আটক করা হলেও চালক পলাতক।
অবশ্য বুধবার রাতে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে শেক্সপিয়র সরণি থানার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড উড়ালপুলের উপরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় আলকাশ আলি মণ্ডল (২৪) এবং রাহুল আলি মণ্ডল (২২) নামে দুই যুবকের। মৃত দুই যুবকের বাড়ি বাঁশদ্রোণির ব্রহ্মপুরের বাদামতলায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই যুবক একটি মোটরবাইকে চেপে পার্ক সার্কাস থেকে ওই উড়ালপুল দিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। দ্রুত গতির ওই মোটরবাইকটি উড়ালপুলের উপরে মিন্টো পার্কের কাছে একটি লরিকে প্রথমে অতিক্রম করে। এর পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইটি সামনে থাকা অন্য একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে। ঘটনার পরেই মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়েন আলকাশ এবং রাহুল। পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য গাড়ির চালকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’জনকে পুলিশ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা আলকাশকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাহুলের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় রাহুলের।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই দুই যুবকের মাথায় হেলমেট ছিল না। আলকাশ এবং রাহুল বড়দিন উপলক্ষেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত এবং মাথার ঘিলু। একপাশে দুমড়ে পড়ে রয়েছে মোটরবাইকটি।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রগতি ময়দান থানার বাসন্তী হাইওয়েতে শহরাবাদের কাছে কলকাতা পুরসভার একটি ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। ডাম্পারের উপরে বসে থাকা এক মহিলার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, ওই মহিলার নাম বাসন্তী দাস (৪৫)। বাড়ি রাজারহাটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার ময়লা বোঝাই ডাম্পারটি ধাপার কাছে যাচ্ছিল ময়লা ফেলতে। শহরাবাদের কাছে সামনের দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় ডাম্পারটি। ওই সময় ডাম্পারের উপর ময়লা বাছাইয়ের কাজ করছিলেন এক মহিলা। তিনি কিছু বোঝার আগে খালে তলিয়ে যায় গাড়িটি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে পুলিশ ওই মহিলাকে উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।