কাজ চলছে কেওড়াপুকুরে। ছবি: অরুণ লোধ।
এ বার বর্ষায় জল জমার সমস্যা অনেকটাই মিটতে চলেছে বেহালায়। সমস্যার সমাধানে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প (কেইআইপি) যে নিকাশি সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এই প্রকল্পে তিনটি খালের উপর বৃষ্টির জল নিকাশির জন্য পাম্প বসানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই দুটি পাম্প বসানো হয়েছে। বর্ষার আগেই বাকি একটি পাম্প বসানোর কাজ শেষ হবে বলে দাবি কেইআইপি কর্তৃপক্ষের। ফলে, এ বার বর্ষায় বেহালা অঞ্চলে জল জমার সমস্যা অনেকটাই কমবে বলে কেইআইপি-র আশা।
কেইআইপি প্রকল্পের ডিরেক্টর জেনারেল সৌম্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি পাম্পের মধ্যে মনিখালি ও চৌবাগায় ইতিমধ্যেই দু’টি পাম্প বসানো হয়েছে। কেওড়াপুকুরে পাম্প বসানোর কাজ করছে সেচ দফতর। মাসখানেকের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে। ফলে, আশা করা যায় আগামী বর্ষায় বেহলা অঞ্চলে জল জমার সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
কেইআইপি প্রকল্পে বেহালা অঞ্চলে প্রথম পর্যায়ে নিকাশি নালার কাজ শেষ হলেও, যে খালগুলিতে এই নিকাশির জল পড়বে সেগুলিতে পলি তোলার কাজ চলছে। বেহালা এবং তার আশপাশের অঞ্চলের জল প্রধানত চৌভাগা, মনিখালি এবং কেওড়াপুকুর খালের মাধ্যমে বেরোয়। এই তিনটি খালই গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। আর এই কারণেই তিনটি খালেই জোয়ার ভাটার সময় জল ওঠা-নামা করে।
কেইআইপির এক আধিকারিক জানান, জোয়ারের সময়ে গঙ্গা বা টালি নালার সঙ্গে যুক্ত এই তিনটি খালেই জল বাড়ে। সেই সময় যদি প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয় তাহলে নিকাশি নালার মাধ্যমে যে জল ফেলা হয়, খালের জলতল বেশি হওয়ার দরুণ তা বেরতে পারবে না। তখন সেই জল বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্লাবিত করতে পারে। ভাটার সময়ে খালের জলতল নেমে গেলে ধীরে ধীরে জল বেরোয়।
কেইআইপি-র এক আধিকারিক জানান, এই সমস্যার সমাধানে কেইআইপি কর্তৃপক্ষ একটি সমীক্ষা চালান। সিদ্ধান্ত হয় তিনটি খালের সামনে যদি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প বসানো যায় এবং বৃষ্টির জল তুলে খালের মধ্যবর্তী জায়গায় ফেলা যায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সেই কারণেই চৌভাগা, কেওড়াপুকুর ও মনিখালের সামনে এই তিনটি পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই তিনটি পাম্প বসাতে মোট খরচ বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯০কোটি টাকা। বিশেষ উল্লেখযোগ্য কেওড়াপুকুর খালের মাধ্যমে বরো ১১ এবং বরো ১৩ অঞ্চলের নিকাশি এবং বৃষ্টির জল বোরোয়। মনিখালির মাধ্যমে বরো ১৪ এবং মহেশতলা এলাকার একাংশ এবং চৌভাগা খালের মাধ্যমে বরো ১০, ১২, ৭ এবং বরো ১১-র একাংশের জল বেরোয়।
কেইআইপি পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৭৫০ কিউবিক লিটার জল প্রতি সেকেন্ডে কেওড়াপুকুর পাম্প দিয়ে বেরবে। অন্য দিকে প্রতি সেকেন্ড ১১০০ এবং ৯০০ কিউবিক লিটার জল যথাক্রমে চৌভাগা ও মনিখালি দিয়ে নির্গত হবে। এর ফলে, সমগ্র এলাকার জল জমার সমস্যা মিটবে।
এই প্রকল্প এত দিন বাস্তবয়িত হয়নি কেন?
কেইআইপি কর্তৃপক্ষ জানান, এই পাম্প বসানোর জন্য ২০০৭-এ যে সংস্থাকে নিযোগ করা হয়েছিল, তাকে বলা হয়েছিল ২০০৯-র মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। সেই কাজ সময়মতো শেষ করতে না পারায় কেইআইপি কর্তৃপক্ষ এই সংস্থাকে জরিমানা করে এই সংস্থার কাজের সময় সীমা বেঁধে দেয়। অবশেষে ২০১০-এর অক্টোবর মাসে এই সংস্থা পাম্প বসানোর কাজ শুরু করে। দু’টি পাম্প বসানোর কাজ ইতিমধ্যেই হয়েছে। কেওড়াপুকুরে পাম্প বসানোর কাজ করছে সেচ দফতর।