বাবা এই যুগটায় থাকলে আমরা আরও উপকৃত হতাম

Advertisement

মল্লার ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০০:০০
Share:

একটা যুগ আমি চোখের সামনে পাল্টে যেতে দেখছি। বাবাকে হাতের নাগালে পেয়েছি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে হবে। তালিম নিতে হবে ভাল গুরুর কাছে। হাড়ভাঙা খাটুনি করে রেওয়াজ করতে হবে। তার পর গুরু যে দিন বলবেন, ‘এ বার তুমি মঞ্চে বসার উপযুক্ত’, তখনই এক জন শিল্পী আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন। গুরুর অনুমতি ছাড়া এই আত্মপ্রকাশ কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। আমি সমস্ত শিল্পীর প্রতি সশ্রদ্ধ থেকেই বলছি, দিনটা পাল্টেছে। শিক্ষার জায়গাটা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই প্রজন্ম ‘আগে নাম করতে হবে’ তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাকে রিয়্যালিটি শো-তে গান করতে হবে। তাকে হতে হবে স্টার। শিল্পীরা গুরুর কাছে না-শিখেই সিডি বা ক্যাসেট থেকে গান তুলে ‘পারফর্ম’ করছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনের তালিম না থাকলে যে এক জন শিল্পীর স্থায়িত্ব থাকে না! এখন কিন্তু সেটাই হয়েছে। ৬ মাস থেকে বড় জোর দু’বছর এক জন শিল্পী জনমানসে থাকছেন। তার পর যাচ্ছেন হারিয়ে। অথচ দীর্ঘ তালিম নিয়ে যে ৩৫ বছর ধরে নিজের ‘স্টারডম’ ধরে রাখা যায়, তার উদাহরণ তো আমাদের সামনে রয়েইছেন: অজয় চক্রবর্তী। আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ বলতেন, ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম ১০০ শতাংশ নিতে হবে। তবেই তোমার পক্ষে শিল্পের চর্চা করা সম্ভব।’ এই প্রজন্মের উচিত, বাবার এই কথাটি মাথায় রাখা।

Advertisement

এখন তো ইলেট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের রমরমা। ‘কি বোর্ড’ ছাড়া গান হয় না। একটা যন্ত্রের মধ্যেই কয়েক হাজার ‘টোনাল কোয়ালিটি’ পাচ্ছি। আবার, হ্যান্ডসনিক বা অক্টোপ্যাড-এর মতো বাদ্যযন্ত্রে হাজারটা তালবাদ্যের ‘টোন’ পাওয়া যায়— তবলার খানিকটা-সহ ঢোলক, জ্যাজ, নাল প্রভৃতি। আমি যে হেতু তবলা বাজাই, এই বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে হাজার হাজার ‘ফিউশন’ করি। এখন তো ‘ফিউশন’-এরই যুগ। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আধিপত্য এখন ম্রিয়মান। আসরে ডেকে ডেকে লোক আনতে হয়, এমন অবস্থা। বাবা কিন্তু এই ‘ফিউশন’কেও গ্রহণ করতেন। কেন না উনি বিশ্বাস করতেন, সব কিছুর মধ্যেই শিক্ষণীয় জিনিস আছে। তিনি যদি এই যুগটায় থাকতেন আমরা আরও উপকৃত হতাম। সমকালীন সঙ্গীত আরও ঋদ্ধ হত। বাবা থাকলে আরও কত কত ‘টোন’ যে বের করতেন এই যন্ত্রগুলোর সাহায্যে, আমি অন্তর থেকে তাঁকে ‘মিস’ করি। ভীষণ মুক্তমনা মানুষ ছিলেন। সেই কারণে বিক্রম বা তন্ময়ের সঙ্গে দেখা হলে ওঁরা বলেন, গুরুজি থাকলে আমরা এই সময়টায় আরও বুক ফুলিয়ে কাজটা করতে পারতাম।

আমাদের ‘হেমছায়া’য় বাবার একটা মূর্তি আছে। যে দিন প্রথম ‘হ্যান্ডসনিক’ কিনলাম, বাড়িতে বাবার মূর্তির সামনে রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, আমায় শিক্ষা দাও। তাঁর মৃত্যুর ১৭ বছর পর আমি তাঁকে এক বিন্দুও ভুলতে পারিনি যে!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement