বাগুইআটিতে ধৃত বাংলাদেশে ৭ খুনের পাণ্ডা

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামি লিগের এক কমিশনার-সহ সাত জনকে হত্যার অভিযোগে দু’মাস ধরে বাংলাদেশ পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল একই দলের অন্য এক কাউন্সিলর নুর হোসেনকে। জানানো হয়েছিল ভারত সরকার ও ইন্টারপোলকেও। অবশেষে বাগুইআটিতে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হল সেই নুর হোসেনকে। শনিবার রাতে সল্টলেক কমিশনারেটের অ্যান্টি টেরোরিস্ট সেল ও বাগুইআটি থানার পুলিশ দুই সঙ্গী-সহ তাঁকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

ধৃত নুর হোসেন

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামি লিগের এক কমিশনার-সহ সাত জনকে হত্যার অভিযোগে দু’মাস ধরে বাংলাদেশ পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল একই দলের অন্য এক কাউন্সিলর নুর হোসেনকে। জানানো হয়েছিল ভারত সরকার ও ইন্টারপোলকেও। অবশেষে বাগুইআটিতে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হল সেই নুর হোসেনকে। শনিবার রাতে সল্টলেক কমিশনারেটের অ্যান্টি টেরোরিস্ট সেল ও বাগুইআটি থানার পুলিশ দুই সঙ্গী-সহ তাঁকে গ্রেফতার করে। তিন জনকে রবিবার বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, নুরকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

সল্টলেক পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে পুলিশ খবর পায় ভিআইপি রোডের ধারে একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে জুয়ার ঠেক চলছে। বহুতলের নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে যে, তিন জন সেই বহুতলের পাঁচ তলার ৫০৩ নম্বর ঘরে গত দু’মাস ধরে ভাড়ায় রয়েছেন। তাঁদের আচরণও বেশ সন্দেহজনক। ওই ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ জানতে পারে তাঁদেরই এক জন বাংলাদেশে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ নুর। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কারও কাছেও পাসপোর্ট বা এ দেশে ঢোকার কোনও নথি মেলেনি।

তবে পুলিশের আর একটি সূত্র বলছে, গত ১২ জুন ধৃত তিন জন বাগুইআটির একটি রেস্তোরাঁয় কর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। রেস্তোরাঁর কর্মীরা নুরকে তাড়া করে ধরে ফেললেও বাকিরা পালিয়ে যায়। নুরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দু’জনের খোঁজ পাওয়া যায় ওই বহুতল থেকে। কিডনি সংক্রান্ত চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের মালিকের খোঁজ করছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামি লিগের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম চার সহযোগী নিয়ে একটি গাড়িতে ফেরার সময়ে অপহৃত হন। একই দিনে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়ির চালক। তিন দিন পরে পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একে একে সকলের পেট কাটা দেহ মেলে। নজরুলের শ্বশুর পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, পাশের ওয়ার্ডে একই দলের কাউন্সিলর নুর হোসেনই এই খুনের পাণ্ডা। নুর হোসেন তখন থেকেই ফেরার। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র্যাবের কিছু অফিসারকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে নুর তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দী নজরুলকে খুন করান। তদন্তের ভিত্তিতে র্যাবের একাদশ বাহিনীর প্রধান ও তিন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা আদালতে দোষ স্বীকার করেন। র্যাব যখন নুর ও তাঁর সহকারীদের অপহরণ করছে, সেই সময়ে চন্দন সরকারের গাড়ি ঘটনাস্থলে চলে আসে। তিনি মোবাইলে ঘটনার ছবি তোলারও চেষ্টা করেন। সে জন্য প্রমাণ লোপাট করতে চালক-সহ তাঁকেও হত্যা করে র্যাব। সকলের পেট কেটে ইট-পাথর পুরে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয়।

কে এই নুর হোসেন?

বাংলাদেশ প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছেন, বাসের সামান্য খালাসি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামি লিগের সহ-সভাপতি হয়ে ওঠা নুর হোসেন নদীর বালি তোলা-সহ নানা বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীদের থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করা নুর হোসেনের রাজনীতি শুরু এরশাদের আমলে তাঁর দলের কর্মী হিসেবে। তার পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে নুর বিএনপিতে যোগ দেন। অবশেষে তিনি স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের দাক্ষিণ্যে আওয়ামি লিগে যোগ দিয়ে পর পর দু’বার কাউন্সিলর হন। কিন্তু পাশের আসনের কাউন্সিলর নজরুল তোলা আদায় ও অন্যান্য বেআইনি কাজে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠায় নুর র্যাবকে টাকা দিয়ে তাঁকে খুনের চক্রান্ত করেন।

সূত্রের খবর, গত ১৪ মে হাসনাবাদ সীমান্ত দিয়ে নুর এ রাজ্যে ফের ঢুকেছে বলে বাংলাদেশ পুলিশ জানতে পারে। সে অনুসারে কলকাতা ও সল্টলেক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। নুরের নামে ইন্টারপোলে লুক আউট নোটিশও জারি করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement