পূজোর বাজার খারাপ ওস্তাদ—
একটাও ভারী পকেট পেলাম না......
এখনই কিনে নিন বাবু,
কাল পাবেন না।
অফিসে গেলে চাঁদাওয়ালাদের
হাত থেকে বাঁচতে
সোমবার, ৫ আশ্বিন, ১৩৭১ (৩০ ভাদ্র ১৮৮৬ শক) MONDAY, SEPTEMBER 21, 1964
জনগণের প্রীতি ও শুভেচ্ছার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ: প্রধান মন্ত্রীরূপে শ্রীলালবাহাদুর শাস্ত্রী রবিবার প্রথম এলেন কলকাতায়। এই শহরে তিনি নবাগত নন, কিন্তু এমন সমাদর এই প্রথম। দমদম বিমানঘাটি থেকে কলকাতা রাজভবন পর্যন্ত দীর্ঘ রাজপথের দু’ধারে ময়দানে জনসভায়, সর্বত্র তিনি ঐদিন বিপুলভাবে সম্বর্ধিত হন—নাগরিকদের প্রীতি ও শুভেচ্ছার স্পর্শ পান। জনসাধারণের এই সাদর অভ্যর্থনায় বুঝি শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাবার মনোভাব ছিল না,—শ্রীলালবাহাদুর শাস্ত্রী নামে ব্যক্তিটিকে কাছে থেকে দেখবার, তাঁর ব্যক্তিত্বকে সমাদর জানাবার ইচ্ছা ছিল প্রবল। বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী দমদমে বিমান থেকে অবতরণ করেন। শুভ্র খদ্দরের ধুতি পাঞ্জাবী ও গান্ধী টুপি পরিহিত প্রধানমন্ত্রীকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। সমবেত জনমণ্ডলীর স্বতঃস্ফুর্ত অভিবাদনের উত্তরে তিনি জোড় হাতে নমস্তে জানান। ফুলের মালায় তাঁহার ছোটখাট শরীরের অনেকখানি ঢাকা পড়ে যায়। বিমানঘাটি থেকেই তিনি কলকাতাকে জয় করেন।
বুধবার, ৭ আশ্বিন, ১৩৭১ (১ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, SEPTEMBER 23, 1964
অনির্দিষ্টকালের জন্য ২৫ হাজার পৌরকর্মীর ধর্মঘট: সোমবারের পুলিশী হামলার প্রতিক্রিয়ায় কলিকাতা কর্পোরেশনের প্রায় পঁচিশ হাজার কর্মী মঙ্গলবার হইতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ করিয়া দেয়। ধাঙ্গড়-জমাদার-ঝাড়ুদার লরী চালকেরা মঙ্গলবার হইতেই কর্মবিরতি সুরু করায় ইতিমধ্যেই মহানগরীর স্থানে স্থানে জঞ্জালের পাহাড় উঁচু হইয়া উঠিয়াছে।
বেন্টিঙ্ক স্ট্রীটের একটি স্থানে এরূপ স্তূপীকৃত জঞ্জাল দেখা যাইতেছে।
যুক্ত কমিটির আহ্বানে অন্যান্য কর্মচারীরাও এইদিন দ্বিপ্রহর হইতে কর্মবিরতি সুরু করিয়া অফিসের বাহিরে চলিয়া আসেন। মঙ্গলবার যুক্ত কমিটি সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করে—দাবি আদায়ের পুর্ব পর্যন্ত কর্মবিরতি আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে।
বৃহস্পতিবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭১ (২ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, SEPTEMBER 24, 1964
কর্মবিরতি অব্যাহত: পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী-মেয়রের আলোচনা: সোমবারের পুলিশী হামলা ও পরদিন হইতে চব্বিশ হাজার পৌরকর্মীর কাজ বন্ধ করায় যে পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে সেই সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন বুধবার মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করেন। কমিশনারকেও তিনি ডাকিয়া পাঠান। অপর দিকে মহার্ঘ ভাতাসহ অন্যান্য দাবি পূরণের জন্য এইদিন দ্বিপ্রহরে পৌর ভবন প্রাঙ্গণে আশীজন মহিলাসহ নয় শতাধিক পৌরকর্মচারী ঊনত্রিশ ঘণ্টার জন্য গণঅনশন সুরু করেন। ইঁহাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আরব্ধ কর্মবিরতি আন্দোলন দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত থাকে। ইতিমধ্যে রাস্তা-বাজার আস্তাকুড় দুর্গন্ধ ছড়াইতেছে। এই অবস্থা চলিতে হইয়া উঠিতেছে, আবর্জনাপুল দিকে থাকিলে শহরে মহামারি অবশ্যম্ভাবী দিকে উচ্চতর হইতেছে।
আজ আচ্ছা করে বৃষ্টি নামিয়ে
দাও ঠাকুর, পর পর তিন দিন ছুটি।
পুজোর বকশিস?
চানাচুরওয়ালা না ধরে এই পূজার
মরশুমে বরং কাপড়ওয়ালা ধরা যাক।
শনিবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭১ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, SEPTEMBER, 26, 1964
বিরোধী পক্ষের অনুপস্থিতির জন্য আলোচনা স্থগিত: বিরোধী পক্ষের অনুপস্থিতিতে শুক্রবার বিকাল তিনটায় বিধান পরিষদের অধিবেশন বসে। পরিষদ-নেতা শিক্ষামন্ত্রী শ্রীরবীন্দ্রলাল সিংহ পুলিশ (পশ্চিমবঙ্গ সংশোধন) বিল উত্থাপন করেন এবং কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য উহার সমর্থনে বক্তৃতা করেন। ডেপুটি চেয়ানম্যান ডঃ প্রতাপচন্দ্র গুহরায় বিরোধী পক্ষ উপস্থিত না থাকার জন্য বিলটির বিবেচনা স্থগিত রাখেন। সোমবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবী রাখা হয়।
শনিবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭১ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, SEPT, 26, 1964
কলিকাতা ‘বনধ’ আংশিক: শুক্রবারের হরতালে কলিকাতা “বনধ” হয় নাই, তবে পুরোপুরি “চালুও” ছিল না। দিনের শেষে বামপন্থীদের হিসাবে হরতালের সাফল্য “ষোল আনা।” আর মুখ্যমন্ত্রীর মতে “মাত্র দুই আনা।” অধিকাংশ অঞ্চলেই বাজার ও দোকানপাট হইতে দোকানীরা এইদিন “অবসর” লইয়াছিলেন, কিন্তু চাকুরি-জীবীদের মধ্যে হাজিরা দিবার অপেক্ষাকৃত তত্পরতা দেখা গিয়াছে। কুণ্ঠিত স্টেটবাস ও ট্রামের গতি ব্যাহত করার প্রয়াস দেখা যায় নাই। সংখ্যা এবং যাত্রী দুই-ই কম। তাই অফিস কাছারি এবং কারখানায় হাজিরা কম হইয়াছে। আরেকটু সকালে বাস বাহির করিলে লোকের সুবিধা হইত বলিয়া মনে হয় এবং অনেকের ধারণা নগরীর চেহারা আরও স্বাভাবিক দেখাইত। সংযুক্ত সোস্যালিস্ট পার্টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারী খাদ্যনীতির প্রতিবাদে এই হরতালের ডাক দেন। কম্যুনিস্ট আর এস পি সহ সপ্তবামপন্থীগোষ্ঠী ইহাতে সমর্থন জানান। বামপন্থী সংস্থাগুলির পক্ষ হইতে এই হরতাল সফল হইয়াছে বলিয়া দাবি করা হয়। তাহারা জনসাধারণকে অভিনন্দনও জানান।
ঘরে পচাগরম, বাইরে
পচাগন্ধ, যাই কোথায় বলতো?
ডাল গলেছে।
রবিবার, ১১ আশ্বিন, ১৩৭১ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, SEPTEMBER, 27, 1964
রামমোহনের পবিত্র বাসভবন: রাজা রামমোহনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য ভারত সরকার যখন স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শন করতে চলেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে এই যুগমানবের অমর স্মৃতিগুলি সরকারের আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঊনিশ শতকে বাঙালীর জীবনপ্রভাতে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী রামমোহনের আমহার্স্ট স্ট্রীটের পবিত্র বাসভবনটিও এই কিছুদিন আগে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে।
আমহার্স্ট স্ট্রীটে রাজা রামমোহনের সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি।—আনন্দ চিত্র।
রাজ্য সরকারের মুখপাত্রদের কাছ থেকে তদন্ত করে জানতে পেরেছি, রামমোহনের বাসভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই এমনকি কয়েক বছর আগে খানাকুলের রাধানগরে তাঁর পৈত্রিক বাসস্থানে স্মৃতিরক্ষার যে প্রস্তাবটুকু সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, তাও আজ ধামাচাপা পড়ে রয়েছে।
সোমবার, ১২ আশ্বিন, ১৩৭১ (৬ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) MONDAY, SEPTEMBER, 28, 1964
রবিবার কর্পোরেশনের শ্রমিকগণ কর্তৃক কাজ আরম্ভ: ধর্মঘট অবসানের পর রবিবার কর্পোরেশনের শ্রমিকগণ মহানগরীর ময়লা অপসারণের কাজে হাত দেয়। তবে এইদিনও স্তূপীকৃত আবর্জনা অধিকাংশ রাস্তাতেই বহাল ছিল। শ্রমিকরা সকাল হইতে প্রধানত বাজারের জমা জঞ্জাল অপসারণ করে। পাঁচ দিনের জমা জঞ্জালে কলিকাতার রাজপথে, অলিতে গলিতে যে পূতিগন্ধময় অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে, দুই-একদিনে তাহা দূর হওয়া সম্ভব বলিয়া মনে হয় না। বিশেষত বড়বাজার অঞ্চলে আবর্জনার সঙ্গে মরা পশুপক্ষীর উত্কট গন্ধে নাগরিকদের দুর্দশার অন্ত নাই। রবীন্দ্র সরণির ফুটপাত পথচারীদের পক্ষে এইদিনও নিরাপদ ছিল না। পথচারীদের নাকে রুমাল চাপা দিয়া রাস্তা চলিতে হয়। এইদিন সকাল হইতেই শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্পোরেশনের আবর্জনা অপসারণকারী লরী ঘোরাঘুরি করিতে দেখা যায়। বাজার অঞ্চলের রাস্তায় কয়দিনে বেশ কিছু আবর্জনা জমিয়া ছিল। ঐদিন কিছুটা উহা পরিস্কার করা হয়।
বুধবার, ১৪ আশ্বিন, ১৩৭১ (৮ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, SEPTEMBER, 30, 1964
মাঝেরহাট পুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন: মহানগর কলিকাতার দক্ষিণ দুয়ার—মাঝেরহাট পুল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত হইয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপফুল্লচন্দ্র সেন ‘জন-সাধারণের শুভেচ্ছা লইয়া’ এই শুভ কাজ সম্পন্ন করেন। এই উপলক্ষে ঐদিন বিকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পৌরেহিত্য করেন রাজ্য পূর্তমন্ত্রী শ্রীখগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পি সি সেন মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে মাঝেরহাট পুলের উদ্বোধন করেন। —আনন্দ চিত্র।
পূর্ব রেলপথের শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় ডায়মন্ডহারবার রোডের উপর মাঝেরহাট পুরাতন পুলটির পাশেই এই নূতন পুলের অবস্থিতি। পুল তৈয়ারীর কাজে হাত দেওয়া হয় ১৯৬১তে। ১৯৬৫-র জুন মাসে নির্মাণকার্য শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কার্যত গত ৩০শে আগস্টই এই পুলটির উদ্বোধন হইয়াছে। অবশ্য সেদিন হইতে এতদিন এই পুলের উপর দিয়া শুধুমাত্র ট্রাম চলাচল করিতেছিল। এখন নির্দিষ্ট তারিখের ৯ মাস আগেই মঙ্গলবার উহা জন ও সকল প্রকার যান চলাচলের জন্য খোলা হইল।
বুধবার, ১৪ আশ্বিন, ১৩৭১ (৮ আশ্বিন, ১৮৮৬) WEDNESDAY, SEPTEMBER 30, 1964
ত্রিশজন ব্যবসায়ীর হাজতবাস: ডালের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির অভিযোগে ভারতরক্ষাবিধি অনুযায়ী ধৃত ত্রিশজন ডাল ব্যবসায়ীকে মঙ্গলবার অতিরিক্ত চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী এ এন ব্যানার্জির আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আসামীদের ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হাজতে রাখার আদেশ দিয়াছেন। অভিযোগে প্রকাশ, গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর সর্বশ্রী আনিল মুখার্জি, গুরুদাস মুখার্জি এবং ডি এল দত্ত কোন সূত্রে সংবাদ পাইয়া বহুসংখ্যক পুলিশ লইয়া সোমবার হাওড়ার শস্যগোলা ঘেরাও করেন এবং উল্লিখিত ব্যক্তিদের ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০ (খ) এবং ভারতরক্ষাবিধির ৪১ (ক) ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তাহারা বাজার হইতে ডাল সরাইয়া ফেলিয়া এই অত্যাবশ্যক পণ্যের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির চক্রান্ত করিতেছিল। ধৃত ডাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকজন মিল মালিক এবং দালালও আছে। ১লা অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য হইয়াছে।
ক্রিকেটের রীলে শুনতে
এসেছেন, কাপড় কিনতে নয়
শনিবার, ১৭ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৯ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, OCTOBER 3, 1964
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতীরাজের প্রতিষ্ঠা: শুক্রবার, ২রা অক্টোবর পশ্চিম বাংলার সর্বত্র পঞ্চায়েতী-রাজের প্রতিষ্ঠা হয়। এই সঙ্গে আঞ্চলিক ভিত্তিতে ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের শাসন ও উন্নয়ন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের পথে এই রাজ্যের অগ্রগতি সূচিত হয়। ঐদিন বিকালে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন কলিকাতা হইতে মাইল পনের দক্ষিণে বিদ্যানগরে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে দেশবাসীকে ‘সজ্ঞানে পঞ্চায়েত রাজ পরিচালনার’ আহ্বান জানাইয়া শ্রী সেন বলেন,— ‘কম্যুনিজম নয়, পঞ্চায়েতীরাজের মাধ্যামে দেশ গড়তে হবে। অর্থনীতি গঠন করতে হবে।’
শনিবার, ১৭ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৯ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, OCTOBER 3, 1964
৩ শত শিক্ষকের গণঅনশনে যোগদান: পশ্চিমবঙ্গ সরকার হইতে বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিকার দাবিতে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে শিক্ষকদের অনশন শুক্রবার চতুর্থ দিনও অব্যাহত থাকে। এইদিন প্রায় তিনশত শিক্ষক ও কর্মী অনশনব্রতীদের সহিত গণ-অনশনে যোগ দেন। বিভিন্ন বামপন্থী নেতা ও কর্মীরা অনশনব্রতীদের সহিত সাক্ষাত্ করিয়া তাঁহাদের দাবির সমর্থন জানান। পশ্চিমবঙ্গ সংযুক্ত সোসালিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান শ্রীনরেন দাস এক বিবৃতিতে শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা বর্ণনা করিয়া বলেন যে, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের ন্যায় অন্যান্য বিদ্যালয়ের কর্মচারীদেরও যথা, কেরাণী গ্রন্থাগারিক ও অপরাপর কর্মীদের মহার্ঘভাতার সুযোগ দেওয়া সরকারের কর্তব্য।
রবিবার, ১৮ আশ্বিন, ১৩৭১ (২০ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, OCTOBER 4, 1964
পূজার কেনাকাটা...: সব তৈরী, —নানা ডিজাইনের জামা কাপড়ে, জুতোয় দোকানগুলো এখন আলো-ঝলমল। ফুটপাতও দোকানে দোকানে ভরে গেছে। এখন শুধু ঢাক বাজতেই বাকী। সন্ধ্যেবেলা শ্যামবাজারের মোড়, হাতিবাগান ও কলেজ স্কোয়ার কিংবা গড়িয়াহাটায় কোন ফারাক লেই, —সর্বত্র জমজমাট। তবে, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণের ভিড় অসহ্য নয়। অনেকটা গা-সওয়া।
পূজার বাজার— কলেজ স্ট্রীটের ফুটপাতে। আনন্দচিত্র।
কলকাতার উত্তর-দক্ষিণে তেমন তফাত্ আছে কিনা, জানি না। কিন্তু উত্তরের ফুটপাতে চার টাকার মাল দু’টাকায় হাঁক শোনা যায়। দক্ষিণের ফুটপাত কমজোরী, —কেনাবেচা কম। পুলিশী হল্লার ভয় কিন্তু দু’জায়গাতেই সমান।
দু’রাত এখানেই কাটল,
এরপর যে হাসপাতালে কাটাতে হবে
—গঙ্গার ইলিশ না ধনেখালি শাড়ি
সোমবার, ১৯ আশ্বিন, ১৩৭১ (২১ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) MONDAY, OCTOBER 5, 1964
৬২৫টি সর্বজনীন পূজা: কলিকাতা পুলিশের এলাকার মধ্যে এই বত্সর ৬২৫টি সার্বজনীন পূজা হইতেছে। রবিবার বিভিন্ন দুর্গাপূজা সমন্বয় সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভার স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আসন্ন পূজা ও উত্সব যাহাতে প্রকৃত আনন্দোত্সবে পরিণত হইতে পারে, তাহার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আবেদন জানাইয়া বক্তৃতা করেন। সকল পক্ষের সহযোগিতায় পূজা ও উত্সব কাল পূর্ণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকিবে বলিয়াও তাঁহারা আশা প্রকাশ করেন। সকালে উত্তর কলিকাতায় উত্তর কলিকাতা সমন্বয় সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় সভাপতিরূপে জাতীয় অধ্যাপক শ্রীসত্যেন বসু বলেন, সমন্বয় সমিতির উদ্যোগ ও প্রশাসনের সহিত সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য বত্সরের মত এ বত্সরের শারদোত্সবও আনন্দোত্সবে পরিণত হইবে।
বুধবার, ২১ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৫ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, OCTOBER 7, 1964
রেল মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন: রেলমন্ত্রী শ্রী এস কে পাতিল মঙ্গলবার কলিকাতায় এক সাক্ষাত্কার প্রসঙ্গে জানান যে, কলিকাতার জন্য প্রস্তাবিত সার্কুলার রেল প্রকল্পটি তাঁহার মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন আছে। কলিকাতা মহানগর পরিকল্পনা সংস্থা (সি এম পি ও) কলিকাতার যানবাহন সমস্যা এবং ব্যয় অনুপাতে উপকারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈয়ার করিতেছেন। রিপোর্টটি পাওয়া গেলে বিষয়টির প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়া হইবে বলিয়া শ্রীপাতিল জানান। শ্রীপাতিল স্বীকার করেন যে, আগের দিন ভারত বণিক সভায় তিনি বলিয়াছিলেনঃ প্রকল্পটি সম্পর্কে উদ্যোগ ও দায়িত্ব কলিকাতা পৌর সংস্থা এবং রাজ্য সরকারের লওয়া উচিত। তবে এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, প্রকল্পটি রূপায়ণের ব্যাপারে রেল মন্ত্রণালয় সহায়তা দিতে পারেন।
শুক্রবার, ২৩ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৭ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, OCTOBER 9, 1964
কর্মীদের ধর্মঘটের নোটীশের জবাবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত: আগামী ২০শে অক্টোবর হইতে নর্থ-সুবার্বন হাসপাতাল বন্ধ করা হইতেছে। হাসপাতালের কর্মীদের ধর্মঘটের নোটীশের জবাবে কর্তৃপক্ষ নাকি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। ইতিমধ্যে মেটারনিটি ও কর্মচারী রাজ্য বীমা ছাড়া অন্য কোন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করা হইতেছে না। বর্তমান রোগীদের ভবিষ্যতও সুনিশ্চিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন ধরিয়া হাসপাতালের সুব্যবস্থা করার জন্য কর্মীদের পক্ষ হইতে রাজ্য সরকারের নিকট আবেদন জানানো হইতেছে। কিন্তু জানা গেল হাসপাতালের ঋণের বোঝা চাপিবার আশঙ্কায় রাজ্য সরকারও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পক্ষপাতী নন। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মূল বক্তব্য: আর্থিক অসঙ্গতি। কর্মীদের অভিযোগ একাধিক: সময়মত বেতন পাওয়া যায় না, ছুটি মেলে না ইত্যাদি। হাসপাতালের রোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। বাড়ির দেওয়াল-ছাদ হইতে চূণবীলি খসিয়া গিয়াছে, শয্যা পর্যন্ত তথৈবচ। এই অবস্থায় কর্মীদের যুক্তি, সরকারী সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানো ছাড়া আট লক্ষ লোকের একমাত্র নির্ভর এই হাসপাতালটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
শনিবার, ২৪ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৮ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, OCTOBER 10, 1964
দুর্গোত্সব উপলক্ষে বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠান: বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোত্সব ও প্রদর্শনী—আজ সন্ধা ৭ ঘটিকায় দূর্গানগরে বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোত্সব ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন হইবে। মাননীয় বিচারপতি শ্রীশঙ্করপ্রসাদ মিত্র মহাশয় সভাপতিত্ব করিবেন ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করিবেন। রবীন্দ্রকানন সর্বজনীন দুর্গোত্সব ও জাতীয় প্রদর্শনী—রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউট পরিচালিত রবীন্দ্রকানন সর্বজনীন দুর্গোত্সব ও জাতীয় প্রদর্শনীর উদ্বোধন অদ্য রাত্রী সাড় সাত ঘটিকায় রবীন্দ্র কানন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হইবে। শিয়ালদহ সর্বজনীন দুর্গোত্সব সমিতি—আজ সন্ধা ৬-৩০ ঘটিকায় শিয়ালদহ সর্বজনীন দুর্গোত্সব সমিতির উদ্বোধনী সভা অনুষ্ঠিত হইবে। কাশী বোস লেন দূর্গাপূজা কমিটি—আজ শ্রীশ্রীদূর্গাপূজার উদ্বোধন সন্ধা ৭ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হইবে। হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোত্সব—আজ সন্ধা ৬ ঘটিকায় হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোত্সবের উদ্বোধন ও প্রতিমার আবরণ উন্মোচন হইবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন গ্রহণ করিবেন শ্রীবিশ্বনাথ সাধুখাঁ ও অধ্যাপক ডঃ সুকুমার সেন প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করিবেন। আহেরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোত্সব সমিতি—আজ সন্ধা ৬-৩০ মিঃ সময় বি কে পাল এভিনিউস্থ শীতলা মন্দিরের পাশে সমিতির রজত জয়ন্তীবর্ষের উদ্বোধনী উত্সব অনুষ্ঠিত হইবে।
—ভয় নেই, চাঁদা
চাইতে আসিনি
—মডার্ন চান না প্রাচীন
চান? ভেজাল দিলেই
পুলিশে ধরবে কিন্তু...
চার দিনের বদলে পাঁচ দিন,
চাঁদা একটু বেশী লাগবে
বইকি দাদা।
রবিবার, ২৫ আশ্বিন, ১৩৭১ (১৯ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, OCTOBER 11, 1964
মৃত্যুর কারণ এখনও অজ্ঞাত: বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার অভিনেতা গুরু দত্ত আজ সকালে পরলোক গমন করেন। তাঁহার মৃত্যুর কারণ এখনও অজ্ঞাত। শ্রী দত্তর বয়স মাত্র ৩৮ হইয়াছিল। এই মৃত্যু সংবাদে বোম্বাই শহরকে, বিশেষ করিয়া শহরের চলচ্চিত্রশিল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে স্তম্ভিত করিয়া দেয়। তাঁহার অসংখ্য বন্ধু ও গুণমুগ্ধ ব্যক্তি শ্রী দত্তর পেডার রোডের বাড়িতে উপস্থিত হন। এই বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে তিনি একা থাকিতেন। শ্রী দত্তর মৃত্যুর পর তাঁহার গায়িকা স্ত্রী গীতা দত্ত, দুই পুত্র, এক শিশু-কণ্যা এবং তাঁহার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত হইয়াছেন। শ্রী দত্ত কাল রাত্রি পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন। দিনে ‘বাহার ফির আয়েগী’ নামক ছবির শুটিংয়ে অভিনেত্রী তনুজার সহিত অংশ লইয়াছিলেন। শুটিং শেষ হইবার পর তিনি গৃহে ফেরেন এবং যথারীতি গভীর রাত্রে শুইতে যান। আজ সকাল ১১টা বাজিলেও যখন তিনি উঠিলেন না, তখন তাঁহার পরিচারিকারা উদ্বিগ্ন হইয়া ডাকাডাকি শুরু করেন; সাড়া না পাইয়া দরজা ভাঙ্গিয়া ঘরে ঢোকেন। শ্রী দত্ত তখন চিরনিদ্রায় মগ্ন। পুলিস কর্তৃপক্ষ এই মৃত্যু সম্পর্কে তদন্ত শুরু করিয়াছেন।
সোমবার, ২৬ আশ্বিন, ১৩৭১ (২০ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) MONDAY, OCTOBER 12 1964
মেঘমেদুর আবহাওয়ায় শারদোত্সব সুরু: শারদ আকাশে বাদল মেঘের গুরু গুরু ধ্বনিতে রবিবার কলিকাতায় শাদদোত্সবের আবাহন শুরু হইয়াছে। মেঘমেদুর সন্ধায় নগরীর মন্ডপের দীপলোক অযুত জোনাকি হইয়া জ্বলিয়াছে। রাত্রপথে আর বিপণিতে পথচারী আর পথিকললনার ভিড়। মন্ডপ হইতে আবাহনের বাজনা নগরবাসীকে জানাইয়া দিয়াছে, মহাষষ্ঠীর রাত্রি পোহাইতেছে। সোমবার মহাসপ্তমী। দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকামতে রবিবার ও আজ সোমবার দু’দিনেই মহাষষ্ঠী। কিন্তু বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে সোম ও মঙ্গলবার দুইদিন ধরিয়াই সপ্তমীর পূজা। বহু পারিবারিক পূজা দৃকসিদ্ধমতে হইলেও কলিকাতার বহু সর্বজনীন পূজাই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতানুসারে হইতেছে।
বুধবার, ২৮ আশ্বিন, ১৩৭১ (২২ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, OCTOBER 14, 1964
পরলোকে প্রেমাঙ্কুর আতর্থী: ‘মহাস্থবির জাতক’—রচয়িতা, প্রথিতযশা সাহিত্যিক শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাতটার সময় ৭।এ, চালতাবাগান লেনে তাঁহার কনিষ্ঠ জামাতার বাড়িতে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার ৭৫ বত্সর হইয়াছিল। শ্রীআতর্থী দীর্ঘকাল বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগিতেছিলেন। দুপুরে নিমতলা শ্মশানে তাঁহার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মৃত্যুসংবাদ পাইয়া বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন চালতাবাগান লেনস্থিত বাড়ি এবং শ্মশানে গমন করেন। সর্বশ্রী নরেন্দ্র দেব, রাধারানী দেবী, চারু রায়, সুধীর চন্দ্র সরকার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং আরও অনেকে মৃতের শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত হইয়া শেষ শ্রদ্ধা জানান। আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড এবং দেশ পত্রিকার পক্ষ হইতে মাল্য অর্পণ করা হয়। শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থীর জন্ম ১৮৯০ সনের পয়লা জানুয়ারি। পিতা শ্রীমহেশচন্দ্র আতর্থী ছিলেন সেকালের ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রখ্যাত প্রচারক।
বুধবার, ২৮ আশ্বিন, ১৩৭১ (২২ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, OCTOBER 14, 1964
সপ্তমীর মহানগরী: তাইতো! মঙ্গলবার কলিকাতার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ঘুরিতে ঘুরিতে অকস্মাত্ মনে হইল, এবার যেন মাইকগুলি তেমন তত্পর দেখিতেছি না! ভলান্টিয়ারদের নির্দেশ দিবার সেই হাঁকডাক, ক্ষণে ক্ষণে হারানপ্রাপ্তি-নিরুদ্দেশের সংবাদ বিভরণ কিম্বা তারস্বরে রেকর্ড-সঙ্গীত পরিবেশনের সেই বিকট প্রচেষ্টা, সত্যই আশ্চর্য, এবার কেমন যেন স্তিমিত। এইদিন দৃকসিদ্ধ মতে সপ্তমী। যথারীতি নগরীর উত্তর হইতে দক্ষিণে ঠাকুর দেখিতে টহল মারিয়াছি। মণ্ডপে মণ্ডপে সাজসজ্জা, প্রতিমা, পূজা ও প্রসাদ বিতরণ। কোনও অনুষ্ঠানের ত্রুটি নাই। তবু মনে হইল, পূজা তেমন যেন জমিতেছে না। অন্যান্যবার সন্ধার মুখে কলিকাতার পথগুলি জনজোয়ারে যেমন ভাসিয়া যাইত, এবার যেন এখনও তেমন ভাবে প্লাবিত হয় নাই। উত্তর কলিকাতায় কয়েকটা মণ্ডপে, যেমন বাগবাজার আর বিডন স্কোয়ারে, পার্ক সার্কাসেই যাহা কিছু ভিড় আছে। দক্ষিণ কলিকাতা দেখিয়া মনে হয়, এখনও যেন গা তোলে নাই। সাহানগর বারোয়ারি সমিতির কর্মকর্তারা এবার “নূতন” ধরনের আলোক সম্পাতের ব্যবস্থা করিয়াছেন। দর্শক তেমন জুটিতেছে না বলিয়া তাঁহাদের আফশোষের আর অন্ত নাই।
নবমী: এবার মহাপ্রসাদের জন্য সবাই লাইন দেবে।
বৃহস্পতিবার, ২৯ আশ্বিন, ১৩৭১(২৩ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, OCTOBER 15, 1964
মহাষ্টমী, লোকারণ্য, মহাধুমধাম: একটি পূজা মণ্ডপের পাশে সাজসজ্জার কিছু কাপড়চোপড়ে হঠাত্ আগুন লাগে। দমকল বাহিনী ছুটিয়া যায়। দুইটি ইঞ্জিনের সাহায্যে কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিভাইয়া ফেলে। বুধবার সন্ধ্যা হইতে রাত্রি পর্যন্ত ছিল এবারের তিন দিনের দুর্গাপূজার ‘পিক আওয়ার’। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে রাস্তায় রাস্তায় দুকুলপ্লাবী জনসমুদ্র বারবার স্মরণ করাইয়া দেয় এইদিন শুধু মহাষ্টমী নয়—বীরাষ্টমীও। ক্লাবে ক্লাবে সর্বজনীন মণ্ডপের অনেক ক্ষেত্রেই লাঠি ও ছোরা খেলার সঙ্গে নানারকম শারীরিক কসরত্ দেখান হয়। যুব শক্তি শক্তির আরাধনায় মাতিয়া ওঠে।
শুক্রবার, ৩০ আশ্বিন, ১৩৭১(২৪ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, OCTOBER 16, 1964
আলোয় ও আনন্দে উচ্ছল: একদিকে টেস্টজয়ের আনন্দ অন্যদিকে নির্মেঘ আকাশ এই দুই দুর্লভ বস্তুর মিলনে কলিকাতায় মহানবমীর রাত্রিটি বড় মনোরম হইয়া উঠিয়াছিল। গত কয়দিনের মত তাপমাত্রা এইদিন অতখানি নিষ্করুণ ছিল না। রাত্রির আবহাওয়া স্নিগ্ধ ও রমণীয়। পূজার ভিড় ছাড়িয়া যাঁহারা খোলা ময়দান কিংবা সরোবরের ধারে কিছুক্ষণের জন্য বসিয়াছিলেন তাঁহারা হিমেল হাওয়ার ক্ষণস্পর্শটুকুও বোধ করি পাইয়া থাকিবেন।
শুক্রবার, ৩০ আশ্বিন, ১৩৭১(২৪ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, OCTOBER 16, 1964
পূজার রাতে সাহেবপাড়া: হঠাত্ একনজরে দেখলে মনে হবে বুঝি ‘হ্যাপি ন্যু ইয়ার’। ডালপালায় জড়ানো লাল-নীল বাতিগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে খ্রীষ্টমাস ট্রী। আলো কি শুধু গাছে গাছে? চওড়া পথের ওপর ক্রশবেল্টের মত টাঙানো আলো আর আলো! ইদানীং কয়েক বছর সাহেবপাড়া পার্ক স্ট্রীটও পূজোর সময় বাঙালী মেয়েদের মত প্রসাধন করছে, নতুন ফ্যাশনে সাজছে। এবারের সাজটা একটু বেশী, প্রসাধনটা যেন আরও কড়া। সিমলা বাগবাজার আর গড়িয়াহাটার সঙ্গে এবার পার্ক স্ট্রীটের ফারাক বোঝাই দায়। কিন্তু তবু আশ্চর্যের কথা সাহেব-পাড়ায় পূজো হচ্ছে না। আপিসপাড়া ডালহৌসিতেও ঢাকের বাদ্যি শোনা যায় কিন্তু খোদ সাহেব পাড়া অন্ধকার। এখন অবশ্য ওসব পাড়ায় ও-দেশি সাহেবের চেয়ে এ-দেশী সাহেবরাই বেশী। তবু ওপাড়া দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ল টেনিশ লনে ফ্লাড লাইট আজও জ্বলছে।
দশমী: না, না, আপনি কষ্ট করবেন না, আমরাই বরং আপনার বাড়ী যাচ্ছি
রবিবার, ১ কার্তিক, ১৩৭১(২৬ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, OCTOBER 18, 1964
কলিকাতায় নিরঞ্জন অনুষ্ঠান: শুক্রবার বিজয়া দশমীতে গঙ্গার দুই তীরে সমবেত লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় শূন্য করিয়া এ বত্সরের মত দুর্গতিনাশিনী জননী দুর্গা মর্ত্যের অধিবাসীদের নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করেন।‘দুর্গা মাইকি’ জয়ধ্বনিতে এবং বিসর্জনের বাজনার করূণ মুর্ছনায় এক বিষাদগম্ভীর আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। এইদিন সন্ধ্যা হইতে প্রায় সারারাত ধরিয়া কলিকাতা ও শহরতলী এলাকায় দেবী-প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। মহানগরের বিভিন্ন বারোয়ারী পূজা মণ্ডপ এবং গৃহস্থের নাটমন্দির হইতে লরী ও ঠেলা গাড়ীর উপর দুর্গা প্রতিমাগুলি শোভাযাত্রা সহকারে গঙ্গাতীরে লইয়া যাওয়া হয়। রাজপথের দুই ধারে এবং গঙ্গার দুই তীরে আবালবৃদ্ধ নরনারী প্রতিমার মিছিল এবং নিরঞ্জন দেখিবার জন্য সমবেত হয়। পূজামণ্ডপ হইতে লরীতে তুলিবার আগে পূরনারীরা দেবীকে শেষবারের মত দর্শনের জন্য সমবেত হন এবং বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জলে তাঁহাকে এক বছরের মত বিদায় দেন। সধবারা প্রসাদী সিন্দুর পাতা হইতে পরস্পরের সিঁথি সিন্দুর লিপ্ত করেন।
সোমবার, ২ কার্তিক, ১৩৭১(২৭ আশ্বিন, ১৮৮৬ শক) MONDAY, OCTOBER 19, 1964
চীনা আণবিক বিস্ফোরণ সংবাদের প্রতিক্রিয়া: সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী কম্যুনিস্ট চীনের প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ এবং সোভিয়েট রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ হইতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীনিকিতা ক্রশ্চফের অপ্রত্যাশিত না হইলেও আকস্মিক বিদায় গ্রহণ—এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ঘটনার (বা দুর্ঘটনা) সংবাদে সারা বিশ্বের সঙ্গে কলিকাতাবাসীরাও যুগপত্ স্তম্ভিত ও আতঙ্কিত হইয়াছেন। পর পর এই দুইটি ঘটনা ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের রাজনীতি এবং রণনীতির পক্ষে অশুভ ইঙ্গিত বহন করিতেছে কিনা—আজ ইহাই শান্তিকামী জনসাধারণের আতঙ্কিত প্রশ্ন। মহানগরের ট্রামে-বাসে, চায়ের দোকানে, বিভিন্ন মহল্লায় সরবে এই প্রশ্ন আলোচিত হইতেছে।
সর্বজনীন দুর্গোত্সব: আজ
ক্রিকেটের ধারাবিবরণী প্রচার
খেলা সেই জলে রেডিও
থাকবে না নাকি?
ঠাকুর, চাকর, বৌ, মেয়ে সবাই গেছে ইডেনের মাঠে।
বাড়ী ফেলে কি করে অফিস যাই বলুন স্যার?