মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে রাতে পনেরো মিনিট করে সময়সীমা বাড়ানোর কথা ছিল মেট্রোর। এ বিষয়ে প্রেস-বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভোটের আচরণবিধির জন্য অনুমতি দেয়নি এই যুক্তি দিয়ে আপাতত রাতের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতার মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
অথচ, এই কথারই একেবারে উল্টো সুর শোনা গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মেট্রো রেলের সময়সীমা বাড়ানোর ওই অনুমতি প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, এ রকম কোনও বিধিনিষেধ জারি করেনি নির্বাচন। উল্টে ওই কর্তা বলেন, “ভোটের সচেতনতা বাড়াতে বিজ্ঞাপন করার অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেট্রোর সময়সীমা বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে কোনও চিঠি এই দফতরে পৌঁছয়নি।”
সরকারি ভাবে সময়সীমা বাড়ানোর দিনক্ষণ ঘোষণার পরেও তা বাতিল করায় ক্ষুব্ধ রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “কেন রাতে বাড়তি মেট্রো চালু হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
গত বছরের শেষে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকেও ছুটির দিনে সকাল আটটা থেকে কেন মেট্রো চলবে না, তা নিয়ে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করা হয়। এর পরেই রেল-প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর নির্দেশে রেল বোর্ড রবিবার সকাল ১০টা থেকে মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো রবিবার সকাল ১০টা পরিষেবা চালু হয়।
তখন থেকেই রাতের মেট্রোর সময়সীমা বাড়ার জন্যও যাত্রী-চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীরা দাবি করেছিলেন, কলকাতার মতো বড় শহরে রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চালানো হোক। রেল বোর্ড এ ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিলেও প্রথম থেকেই রাতে মেট্রোর সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে আপত্তি ছিল কলকাতা মেট্রোর কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই মেট্রো চলছে ভর্তুকি দিয়ে। তাই রাতে সময়সীমা আরও বাড়ালে মেট্রো চালানোর খরচ বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে মেট্রোর কর্মী-সঙ্কট তো আছেই। এ নিয়ে রেল বোর্ডের সঙ্গে মেট্রোকর্তাদের বেশ কয়েক বার বৈঠকের পরে রেল প্রতিমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, রাতে মেট্রোর সময়সীমা ১৫ মিনিট বাড়ানো হবে। কবে থেকে এই সময়সীমা বাড়বে, কলকাতার এক অনুষ্ঠানে রেল প্রতিমন্ত্রী তা ঘোষণাও করে দেন। পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ৪ মার্চ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, ২৭ মার্চ থেকে রাতের সময়সীমা ১৫ মিনিট করে বাড়িয়ে দেওয়া হল। নির্বাচন ঘোষণা করা হয় এর পর দিন, ৫ মার্চ।
কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ আচমকা বলতে শুরু করেন, নির্বাচনী বিধি আরোপ হয়েছে, তাই আর সময়সীমা বাড়ানো যাবে না। মেট্রোর বক্তব্য, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি মেলেনি। ফলে অতিরিক্ত সময় চালানো যাচ্ছে না মেট্রো।
কিন্তু রেলের এক কর্তা জানান, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে জনস্বার্থে ঘোষিত কোনও সরকারি কাজ নির্বাচন কমিশনের ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। এমনকী কোনও অনুষ্ঠান না করেও এ ধরনের কাজ শুরু করা যায়। মেট্রোকর্তাদের একাংশেরই প্রশ্ন, ইতিমধ্যেই এ বছরের রেল বাজেটে ঘোষিত প্রিমিয়াম ট্রেন-সহ অন্যান্য সব ঘোষণা রূপায়িত হতে শুরু করেছে। নির্বাচন ঘোষণায় এ সব কাজে কোনও বাধা আসেনি। তা হলে মেট্রোর ক্ষেত্রে এ রকম বাধার কথা তোলা হচ্ছে কেন?