মানতে নারাজ পুরসভা

নিউ মার্কেট পাড়ায় পথজোড়া হকারদের ‘বাঁচাতে’ মদন-ঢাল

হকারের স্বার্থে এ বার নিউ মার্কেটের সামনে থেকে তুলে দেওয়া হবে পার্কিং স্পেস। এমনই ইঙ্গিত মিলল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কথায়। ওখানকার পার্কিং স্পেসটি সরাতে ইতিমধ্যেই পুর-প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেট চত্বরে হকার সমস্যার জট খুলতে ডাকা এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, “নিউ মার্কেটে পার্কিং স্পেসের কারণে পথচারী, ব্যবসায়ী, ট্রাফিক সকলেরই অসুবিধা হচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬
Share:

হকারের স্বার্থে এ বার নিউ মার্কেটের সামনে থেকে তুলে দেওয়া হবে পার্কিং স্পেস। এমনই ইঙ্গিত মিলল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কথায়। ওখানকার পার্কিং স্পেসটি সরাতে ইতিমধ্যেই পুর-প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেট চত্বরে হকার সমস্যার জট খুলতে ডাকা এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, “নিউ মার্কেটে পার্কিং স্পেসের কারণে পথচারী, ব্যবসায়ী, ট্রাফিক সকলেরই অসুবিধা হচ্ছে।”

Advertisement

এমনিতেই হকারের দখলে নিউ মার্কেটের সামনের পুরো রাস্তা। প্রায় বন্ধ পুরসভার ওই মার্কেটে ঢোকার সব ক’টি পথও। হকারের কারণে কার্যত ঘেরাও ভেতরের স্টল-মালিকেরাও। তার উপরে ওই রাস্তায় রয়েছে পার্কিং স্পেস। কার্যত স্তব্ধ পথচারী থেকে যান চলাচলও। সেই সমস্যার জট খুলতেই এ দিন বৈঠক ডেকেছিল কলকাতা পুরসভার বাজার দফতর। সেখানে হাজির হন পরিবহণমন্ত্রী। তবে তাঁর দাবি মন্ত্রী হিসেবে নয়, হকার ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদেই তাঁকে সেখানে ডাকা হয়। একাধিক হকার ইউনিয়নের কয়েকজন প্রতিনিধিও হাজির ছিলেন বৈঠকে।

হকার-জট কাটানোর পথ হিসেবে মদনবাবু পার্কিং স্পেস তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কারণ তাঁর বক্তব্য, “নিউ মার্কেটে ঢোকা-বেরনোর মুখে হকার বসে থাকলে চলবে না। তাতে পথচারী, ব্যবসায়ী সকলেরই অসুবিধা।” তবে পুরকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, পার্কিং স্পেসের জায়গায় হকার বসলে সমস্যা আরও বাড়বে। পার্কিং স্পেস তুলে দিয়ে সেখানে হকার বসানোর প্রস্তাব কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “রাস্তার উপরে হকার বা পার্কিং কোনওটাই থাকবে না।”

Advertisement

পুরসভার বাজার দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, তাঁদের অধীনে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ওই বাজারের স্টল ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১১ কোটি টাকার মতো আয় হয়। কিন্তু যাঁরা বছরের পর বছর ওই ভাড়া দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন, এ বার তাঁরাই বিপদে পড়ে পুর-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “হকারের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তা ছেড়ে এখন স্টলের সামনেও পসরা নিয়ে বসে পড়ছেন হকারেরা। নিষেধ করলে কেউ কান দেন না। পুরকর্তাদেরও বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে পুর-কর্তাদের কাছে ডেপুটেশন দেন। তারই প্রেক্ষিতে এ দিনের বৈঠক। মদনবাবু বলেন, “হকারদের সঙ্গে কখনওই বিতর্ক হয়নি। পুনর্বাসন ছাড়া ওঁদের উচ্ছেদ করা হয়নি। তা বলে কারও ঢোকা-বেরনোর পথে বসে থাকলে তো চলবে না।” মন্ত্রী জানান, পুরসভার বাজার দফতরের মেয়র পারিষদ এলাকায় ঘুরে পুরো পরিস্থিতির পর্যালোচনা করবেন। এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ জানান, শীঘ্রই একটা কমিটি গড়া হবে। সেই কমিটি ওই চত্বরে ঘুরে বাস্তব পরিস্থিতি দেখবে। তার পরেই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হকারের কারণে ওই চত্বরের অবস্থা যে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তা স্বীকার করেছেন তারকবাবুও।

বৈঠকে ছিলেন মেয়রও। তিনি বলেন, “নিউ মার্কেটের সামনের রাস্তা সাফ করা হবে। সেখানে কেউ থাকলে সরানো হবে তাঁদের।” শোভনবাবু জানান, রমজান মাস শেষ হলে অগস্টের শুরুতে নিউ মার্কেটের সামনের চত্বর সাফ করা শুরু হবে।

তবে মদনবাবুর প্রস্তাব মতো পার্কিং স্পেস তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে পুর-পার্কিং দফতরের এক অফিসার বলেন, “হকার সরালেই রাস্তা সাফ হবে। তখন পার্কিং সরানোর প্রয়োজনই হবে না।” তবে পার্কিং স্পেস সরিয়ে হকার বসানো হলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না বলে তিনি মনে করেন।

পুরসভা সূত্রের খবর, নিউ মার্কেট ছাপিয়ে হকারের দল পুরসভার প্রধান ফটকের সামনেও বসতে শুরু করেছেন। মানবিকতার কথা ভেবেই তাঁদের এত দিন কিছু বলা হয়নি। বাজার দফতরের একাধিক অফিসারের আশঙ্কা, এখনই কড়া ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement