মুখ-রক্ষা। শুক্রবার, শহরের পথে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ঠিক যেন এক মরুশহর!
কারও নাক-মুখ রুমালে ঢাকা। কেউ হাত বাঁচিয়েছে ফুলহাতা জামা পরে। কারও পুরো শরীর ঢাকা সাদা ওড়নায়। ঝলসে দেওয়া রোদ থেকে বাঁচাতে চোখে কালো রোদচশমা পরে আছেন কেউ বা।
শুক্রবার শহরের বিভিন্ন স্কুলের বাইরে পড়ুয়াদের অবস্থা ছিল এমনই। ছুটির পরে স্কুলের সামনে অভিভাবকদের লম্বা লাইন। সকলেরই সঙ্গে ছেলেমেয়েদের জন্য নিয়ে আসা ছাতা, রোদচশমা এবং এই গরমে শরীর সুস্থ রাখার জন্য অত্যাবশ্যক নুন-চিনির জল বা ডাবের জল।
সকাল সাড়ে ১১টায় ছুটি হল পাঠভবন স্কুলে। ঘামে জবজবে ইউনিফর্ম, মুখে ক্লান্তির ছাপ। একে একে বেরোচ্ছে পড়ুয়ারা। এমনই এক জন ছাত্র, প্রথম শ্রেণির অঙ্কুশ সরকার বেরোল রীতিমতো হাঁফাতে হাঁফাতে। ছেলের ওই অবস্থা দেখে মা তাকে ছায়ায় টেনে এনে ব্যাগ থেকে বোতল বার করে চোখ-মুখ বেশ করে ধুইয়ে দিলেন। তার পরে ব্যাগ থেকে বার করলেন নুন-চিনির জল। প্রথম শ্রেণিরই রূপকথা পলুইয়ের মা দীপিকাদেবী তাকে রোদচশমা পরিয়ে মুখে একটা সাদা রুমাল বেঁধে দিলেন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগে।
একই ছবি মিন্টো পার্ক সংলগ্ন লা মার্টিনিয়র স্কুলের সামনেও। ছুটির পরে বেরোতেই তৃতীয় শ্রেণির অবন্তিকা দাসের মাথা থেকে মুখ পর্যন্ত সাদা ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলেন তার মা রুশা দাস। বললেন, “কয়েক দিন আগেই গরমে আমার মেয়ের শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সুস্থ হলেও তাই রোজ স্কুলে পাঠাইনি। আজ এসেছে। আপাতত গরমের ছুটি না পড়া পর্যন্ত মাঝে মাঝে স্কুলে পাঠাব ভাবছি।”
ছুটির পরে তিন খুদে পড়ুয়াকে আবার দেখা গেল, এক হাতে ছাতা আর অন্য হাতে পাখা নিয়ে স্কুল থেকে বেরোতে।
শহরের প্রায় অধিকাংশ স্কুলের বাইরেই ছুটির পরে একই রকম দৃশ্য চোখে পড়েছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। এ দিনও মহানগরের তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও গরমে রীতিমতো হাঁসফাঁস করছেন। তবে গরমে স্কুলের পড়ুয়াদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বৃহস্পতিবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির পরে শহরের বেসরকারি স্কুলগুলিও তাদের সময়সীমা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। অনেক স্কুল ইতিমধ্যে সময় পাল্টেও দিয়েছে।
পাঠভবন স্কুলে যেমন সাধারণত মে মাসে রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরের দিন থেকে গরমের ছুটি পড়ে। কিন্তু এ বছর গরমের যা পরিস্থিতি, তা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিভিন্ন শাখার ছুটি আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। পাঠভবনের মন্তেসরি এবং প্রাথমিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা কৃত্তিকা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আগামী সোমবার ক্লাস হওয়ার পর থেকে গরমের ছুটি শুরু হবে। পঞ্চম শ্রেণির ছুটি শুরু হবে বুধবার থেকে।
লা মার্টিনিয়র স্কুল-কর্তৃপক্ষ নার্সারির বাচ্চাদের জন্য আগামী সোমবার থেকেই গরমের ছুটির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিদের জন্য স্কুলের সময় পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এ দিন স্কুল থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার থেকে সকাল আটটার পরিবর্তে স্কুল চালু হবে আধ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে। ছেলেদের স্কুল বেলা ১১টা ৫ মিনিট এবং মেয়েদের স্কুল বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
সময় পরিবর্তন করেছে গোখেল মোমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ও। আগামী ২ মে থেকেই নার্সারি এবং প্রথম শ্রেণির গরমের ছুটি শুরু হচ্ছে সেখানে। তবে স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত ১৬ এপ্রিল থেকেই দ্বিতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সময় পরিবর্তন করে সকাল ৮টা থেকে ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়েছে। এই ক্লাসগুলির গরমের ছুটি শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে থেকে।
সময় পরিবর্তন হয়েছে ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলেরও। স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সকাল ৮টার বদলে আধ ঘণ্টা আগে সাড়ে ৭টা থেকে স্কুল শুরু হবে এবং দুপুর দেড়টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাবে। বেথুন স্কুল-কর্তৃপক্ষ সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত গরমের ছুটি ঘোষণার কথা চিন্তা করছেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের কথা এখনও ঘোষণা করা হয়নি। বেশ কিছু স্কুল তাদের স্কুলের সময় এবং ছুটির সময় পরিবর্তন করলেও অনেক স্কুলের কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। ফলে সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকেরা। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক জয়া সাহা যেমন বললেন, “ক্লাসের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৭ মে পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে পরীক্ষা শুরু। যা গরম পড়েছে, তাতে দুপুরের ওই সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় আমরা খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছি।”