আট কিলোমিটারে বরাদ্দ ছিল এক লিটার পেট্রোল। দীর্ঘকাল ধরে সেই বিলই মেটানো হচ্ছিল কলকাতা পুরসভায়। এটা যে বেশি, তা নিয়ে অডিট রিপোর্টে প্রশ্নও উঠেছিল। মূলত তার জেরেই শুক্রবার পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল, এ বার থেকে ১০ কিলোমিটারের জন্য এক লিটার পেট্রোল মিলবে।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, খরচ ও দুর্নীতি রুখতে কলকাতা পুরসভা আর পেট্রোল-গাড়ি ভাড়া নেবে না। ভাড়ায় খাটা গাড়ি স্থানীয় এলাকার পাম্প থেকে তেল ভরবে। মাসের শেষে গাড়ির বিলের সঙ্গে তেলের দাম মিটিয়ে দেবে পুর প্রশাসন। নতুন এই ব্যবস্থায় বছরে প্রায় ১ কোটিরও বেশি টাকা সাশ্রয় হবে বলে পুরকর্তারা জানিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশো ভাড়ার গাড়ি চলে পুরসভায়। এর মধ্যে ২২০টি গাড়ি চলে পেট্রোলে। ওই সব গাড়ির ভাড়া ও তেল বাবদ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ হয়। সম্প্রতি তেলের অডিট করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা গরমিল ধরা পড়েছে। বছরের পর বছর পুরসভার ৬টি ট্যাঙ্ক থেকে তেল নেওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে কেউই এগোয়নি। তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় এসেই এ ব্যাপারে অডিটের সিদ্ধান্ত নেয়। হিসেব কষতে গিয়ে ভাড়ার গাড়ির উপরে নজর পড়ে পুর কর্তাদের। পুরসভার এক কর্তা জানান, হিসেব করে দেখা যায় প্রতি লিটারে ৮ কিলোমিটার যাত্রা খুবই কম। এটা আরও বাড়ানো দরকার।
এ দিন পুরসভায় তেলের খরচ কমানোর বিষয়টি ওঠে। এক অফিসার জানান, পুরসভার নিজস্ব গ্যারাজের ট্যাঙ্কে কয়েক হাজার লিটার তেলের হদিস মেলেনি। মাসখানেক আগে এন্টালি ওয়ার্কশপের একটি বড় তেল ট্যাঙ্কের নীচে ছিদ্র থাকা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। স্টোরের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের ধমক দেন কর্তারা।
অফিসারদের জন্য ভাড়ার গাড়ি ছাড়াও পুরসভার নিজস্ব গাড়ির সংখ্যাও কম নেয়। শুধু জঞ্জাল অপসারণ দফতরেরই প্রায় ২০০টি লরি। সে সবেরও তেলও নেওয়া হয় পুরসভার গ্যারাজ থেকে। মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “পুরসভা ইন্ডিয়ান ওয়েল ও হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম থেকে এক লপ্তে প্রচুর তেল নেয়। তেল সংস্থাগুলির নিয়মে এর জন্য দামও বেশি দিতে হত।” তাই গ্যারাজে তেল নেওয়া কমালে দামও কম পড়বে। সেই সঙ্গে ‘চুরি’তেও লাগাম দেওয়া যাবে বলে ধারণা পুরকর্তাদের।
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, মেয়র পারিষদ, পুরসভার বিভাগীয় প্রধান-সহ ম্যানেজারেরা পদমর্যাদার ভিত্তিতে কেউ দৈনিক ৮ লিটার, কেউ ৬ লিটার, কেউ বা ৫ লিটার করে ডিজেল বা পেট্রোল পেয়ে থাকেন। তা দেওয়া হত গ্যারাজ থেকে। এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার তা নেওয়া যাবে এলাকার যে কোনও পাম্প থেকে। লরিগুলির ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট পাম্প ঠিক করে দেবে পুর প্রশাসন। মাসের শেষে বিল দেখে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে।