গত ছ’মাসে একের পর এক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ২৫ জনেরও বেশি কলকাতা পুলিশের কর্মী। মারা গিয়েছেন এক সার্জেন্ট-সহ দু’জন। লালবাজারের কর্তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দেখাতে চাইলেও, ট্রাফিক-কর্মীরাই বারবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
পুলিশ জানায়, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ট্রাফিক সিগনালের সামনে তড়িঘড়ি গাড়ি চালাতে গিয়ে চালক ধাক্কা মারছেন কর্তব্যরত পুলিশকে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি পুলিশ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে চালকদের কাছে? ট্রাফিক আইন এড়িয়ে চলাই কি লক্ষ্য হয়ে উঠছে গাড়ি চালকদের? সেই বেপরোয়া হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছেন তাঁরা?
পুলিশ জানায়, বুধবার সকালেও গিরিশ পার্কের মোড়ে ম্যাটাডরের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন শরদিন্দু দলুই নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবল। জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ডের ওই কর্মী ই এম বাইপাসের ধারে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ সূত্রের খবর, মানিকতলার দিক থেকে আসা ম্যাটাডরটি গিরিশ পার্কের মোড় থেকে তড়িঘড়ি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উত্তর দিকে যেতে গিয়ে রাস্তার বাঁ দিকের গার্ডরেলে ধাক্কা মারে। গার্ডরেলের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন শরদিন্দুবাবু। ম্যাটাডরের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। ওই চালককে অবশ্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিনই বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বড়বাজার থানার কলাকার স্ট্রিটের কাছে মহাত্মা গাঁধী রোডের উপরে হাওড়াগামী একটি বেসরকারি বাস ট্রাফিক কনস্টেবল সুজয় সরকারকে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানায়, তাঁর কোমরে চোট লাগে। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় সুজয়বাবুকে।
এ ক্ষেত্রে ম্যাটাডরের চালক তড়িঘড়ি সিগন্যাল পার হতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই কর্মীকে ধাক্কা মারেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। পুলিশ এও জানতে পারেনি, ওই ম্যাটাডরচালককে অন্য কোনও ট্রাফিক কর্মী আইন না মানার জন্য দাঁড় করাতে গিয়েছিলেন কি না।
লালবাজারের কর্তাদের দাবি, কর্মরত অবস্থায় কোনও পুলিশকর্মী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জখম হন চালকদের আইনমাফিক গাড়ি চালাতে সাহায্য করতে গিয়ে। এর পিছনে পুলিশকর্মীদের অন্য কোনও অভিসন্ধি থাকে না, থাকার কথাও নয়। কর্তব্য অবস্থায় থেকে তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েন অন্য চালকদের দোষে।
শহরবাসীর অনেকেরই অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। অনেকেরই অভিযোগ, ভোরে বা রাতে রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে দেখা যায় কর্তব্যরত পুলিশকে। ঘুষ বা জরিমানা দিতে না চেয়ে তড়িঘড়ি গাড়ি চালাতে গিয়ে চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন বলে মনে করেন তাঁরা।
গাড়িচালকদের আইন মানতে বাধ্য করাতে গিয়ে জখম হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। মৃত্যুও হয়েছে। দিন কয়েক আগেই হাইড রোডে বেআইনি ধরপাকড়ে নামডাক থাকা এক সার্জেন্টকে পিছন থেকে চাপা দেয় মালবাহী গাড়ি। সেই চালককে গ্রেফতার করা হলেও, ওই ঘটনার পিছনে পরিকল্পনামাফিক খুনের উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। বছর কয়েক আগে চিৎপুরে বেপরোয়া এক ট্রাকচালক তাঁর গাড়িতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান এক পুলিশ অফিসারকে। মৃত্যুও হয় ওই অফিসারের। তারও আগে তারাতলা মোড়ের একটি রাস্তায় ‘নো এন্ট্রি’ ভেঙে এক ট্রাকচালক পিষে দেন অন্য এক সার্জেন্টকে।
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে অবসর নেওয়া এক অফিসার জানান, কোনও পুলিশকর্মী অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও চালককে রাস্তায় দাঁড় করাচ্ছেন, এমন ঘটনা বিরল নয়। তবে সে সব ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে অবিলম্বে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।