সেই জমি-জটে আটকে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পও।
বছরখানেক আগে ই এম বাইপাসের মাঝবরাবর একের পর এক স্তম্ভ তৈরি করে মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। বাঘা যতীন উড়ালপুল থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত কয়েকটি স্তম্ভের উপরে রেলপথের জন্য ঢালাইয়ের কাজও চলছে। কালিকাপুর থেকে রুবি মোড় পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় রাস্তার মাঝখানে টিন দিয়ে ঘিরে গর্ত খোঁড়া। কিন্তু মাসখানেক হল মেট্রো প্রকল্পের সব কাজই কার্যত বন্ধ।
কেন বন্ধ হয়ে গেল এই প্রকল্পের কাজ? মেট্রো সূত্রের খবর, ই এম বাইপাসে মেট্রো প্রকল্প তৈরিতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে মেট্রোর দু’টি স্টেশন তৈরি নিয়ে। বৈচতলা মৌজায় আধ কিলোমিটার দূরত্বে এই দু’টি স্টেশন হওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই দু’টি স্টেশনের জন্য ১২ বিঘা জমির প্রয়োজন। ওই ১২ বিঘা জমির মালিক কলকাতা পুরসভা। জমিতে রয়েছেন ৭২ জন ভাগচাষি। জট ছাড়াতে পুরসভার শর্ত ছিল, ভাগচাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে রেলকে। এ ছাড়া, কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে বাজারদরেই ওই ১২ বিঘা জমি কিনতে হবে। তার সঙ্গে দিতে হবে ভাগচাষিদের ক্ষতিপূরণের টাকা।
কত সেই ক্ষতিপূরণ? গত জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় কলকাতা পুরসভা, মেট্রো ও ভাগচাষিদের বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, চাষিদের কাঠা-প্রতি ৫২ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হবে। এতে জমিজট কেটেছে বলে আশা করছেন স্থানীয় চাষিদের প্রতিনিধি তথা ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুভাষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এলাকায় উন্নয়নের জন্য চাষিরা মেট্রোর প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।” চাষিদের একাংশ অবশ্য বলছেন, তাঁরা এই ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব লিখিত ভাবে হাতে পাননি। স্থানীয় এক চাষি বলেন, “আগে হাতে কাগজ পাই। তার পরে আমরা ঠিক করব, কতটা কী করা যায়।”
কিন্তু ক্ষতিপূরণের জট কাটলেও কাটেনি জমির বাজারদর নিয়ে পুরসভার সঙ্গে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের বিরোধ। মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার তরফে বাজারদর অনুযায়ী ১২ বিঘা ওই জমির দাম ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কাঠাপ্রতি ১ কোটি টাকা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই টাকা দিতে রাজি হননি। এক মেট্রোকর্তার কথায়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মেট্রো তৈরির সময়ে রাজ্য সরকার বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র দামে জমি দিয়েছে। কারণ, মেট্রো তৈরি হলে তাতে উপকৃত হন লক্ষ লক্ষ মানুষ। উন্নতি হয় গোটা এলাকারই। কিন্তু এখানে পুরসভা বাণিজ্যিক দামে রেলের কাছে জমি বিক্রি করতে চাইছে। মেট্রোকর্তাদের কথায়, এই মেট্রোর পরিকল্পনা করার সময়ে পুরসভা বিনামূল্যে জমি দেবে বলে জানিয়েছিল। তাই প্রকল্পে ওই টাকার ব্যবস্থা করা হয়নি। এখন এই দাম দিয়ে স্টেশন তৈরির জমি কিনতে গেলে প্রকল্প-ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যাবে। আপাতত এই জটে পড়ে আটকে গিয়েছে প্রকল্পের কাজ। পূর্ব ও মেট্রো রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ওখানে সমস্যা রয়েছে। মেট্রোর তরফে পুরসভার সঙ্গে বেশ কিছু বৈঠক করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান হয়নি।”
এ ব্যাপারে কী বলছেন পুরসভার কর্তারা? কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই জমি-জটের বিষয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। খুব শীঘ্রই সমাধানসূত্র বেরোবে।” কলকাতা পুরসভার তরফে এই বিষয়টি দেখভাল করছেন মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার। তিনি বলেন, “আমরা ১২ বিঘা জমির জন্য আপাতত শুধু চাষিদের শস্যের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দাবি করেছি। মেট্রো জমি নিয়ে ওখানে রেলপথ তৈরি করুক। জমির মালিকানা পুরসভার অধীনেই থাকবে। কিন্তু ওরা এখনও পর্যন্ত এতে রাজি হয়নি। কোনও বিকল্প প্রস্তাবও দেয়নি।”
ই এম বাইপাসে গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর নির্মীয়মাণ পথ। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল