সল্টলেকে রেশন ও কেরোসিন সরবরাহ নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবে খাদ্য দফতর। এর জন্য তারা একযোগে কাজ করবে সল্টলেক পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে। রবিবার সল্টলেকের দত্তাবাদ ও নাগেরবাজারের দু’টি রেশন দোকানে অভিযান চালান খোদ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই প্রসঙ্গেই এই পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। পাশাপাশি রেশন সরবরাহে নিয়ম বহির্ভূত কাজ বন্ধে চলতি মাসেই খাদ্য দফতর ডিজিটাল কার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সল্টলেকে কেরোসিন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রতিটি মার্কেটে একটি করে মোট ১৬টি জায়গা থেকে তা সরবরাহের অনুমতি রয়েছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে খবর। কিন্তু মার্কেটের ছোট ঘরে কেরোসিন মজুত রাখা বিপজ্জনক। তা নিয়ে একাধিক বার বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছেন। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কেরোসিন না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছেই। দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে মার্কেটের বাইরে কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কেরোসিন মজুত করছেন ডিলাররা। এমনকী মার্কেটের বাইরের বাথরুম চত্বরে একাধিক কেরোসিন ভর্তি ড্রাম মজুত রাখা হত।
মার্কেটের সরু প্যাসেজে কেরোসিনের লাইন সমস্যায় ফেলে অন্য দোকানদার ও ক্রেতাদেরও। এই সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ী সমিতি বা ডিলারদের একাংশও প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি। সল্টলেকের কেন্দ্রীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শ্যামলকান্তি রায় বলেন, “শুধু ক্রেতা বা ডিলাররাই নন, সমস্যায় পড়েন অন্য দোকানদাররাও। মার্কেটের মধ্যে কেরোসিন মজুত রাখাও বিপজ্জনক। বিকল্প ব্যবস্থা র দাবিও করা হয়েছে। কাজ হয়নি।”
পাশাপাশি রেশন ব্যবস্থা নিয়েও বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। সমস্যার কথা স্বীকার করে খাদ্যমন্ত্রী জানান, সল্টলেকে রেশন বা কেরোসিন সরবরাহ নিয়ে এই ক্ষোভ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল প্রশাসন। তাই মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মার্কেটের মধ্যে দোকান দেখিয়েই সরবরাহের লাইসেন্স পেয়েছেন ডিলাররা। কিন্তু কতটুকু জায়গা, সেখান থেকে সরবরাহ হলে সমস্যার সম্ভাবনা বাম আমলে খতিয়ে দেখা হয়নি। তাই মার্কেটের ভিতরে-বাইরে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমস্যা মিটিয়ে কী ভাবে পরিকল্পনা কার্যকরী করা যায়, তা নিয়ে স্থানীয় পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে কিছু দিনের মধ্যেই বৈঠক হবে।
খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে রেশন ও কেরোসিনের দোকানের অনুমতি দিয়ে গোটা ব্যবস্থাটিকে একটি শৃঙ্খলায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রবিবার দত্তাবাদে একটি রেশন দোকানে আচমকা আধিকারিকদের নিয়ে অভিযান চালান খাদ্যমন্ত্রী। দেখা যায়, সেই দোকানে ক্যাশ-মেমো ছাড়াই সামগ্রী বিক্রি হয়, পাশাপাশি গত দু’মাসের বিক্রির কোনও লিখিত হিসেবই নেই। এমনকী, ওই দোকানের আওতায় দশ হাজার রেশন কার্ড রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “খুব বেশি হলে পাঁচ হাজার রেশন কার্ড থাকতে পারত, আমি নিজেই হতবাক।” এর পরে নাগেরবাজারের উড়ালপুলের নীচে একটি রেশন দোকানে অভিযান চালিয়েও মন্ত্রীর অভিজ্ঞতা একই রকম। দু’টি জায়গায় তল্লাশি করে দেখা যায়, সাড়ে ১১ কুইন্ট্যাল গম, ১৬১ কিলোগ্রাম চিনির হিসেবে গোলমাল রয়েছে। কিন্তু গত এক বছর লাগাতার অভিযান চালিয়েও কেন এই অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না? খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিনের ব্যবস্থা, সময় লাগবেই। তবে ডিজিটাল কার্ড হয়ে গেলে এই অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে। চলতি মাসেই ডিজিটাল কার্ড তৈরির কাজ শেষ করার টার্গেট রেখেছি।”