এক মাসের মধ্যে দু’-দু’ বার তাপপ্রবাহ! তা-ও খোদ কলকাতায়!
এই পরিস্থিতি শেষ কবে ঘটেছে, তা দেখতে ১৮০ বছরের রেকর্ড বই খুলে বসেছিলেন আলিপুরের আবহবিজ্ঞানীরা। এক মাসে দু’টি তাপপ্রবাহের ঘটনার নজির যেমন নেই, তেমনই নজির নেই মার্চ-এপ্রিলে একটিও কালবৈশাখী না হওয়ার। যেমন ঘটেছে এ বছর। যে ভাবে বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়া বদলাচ্ছে, তাতে বছরের বাকিটা যে আবহাওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই ভাল যাবে না এমন কথাও শোনা যাচ্ছে আলিপুর হাওয়া অফিসের অন্দরে।
গত ৩১ মার্চ কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল ওই সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি। আর মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেল সেই রেকর্ডকেও। কলকাতার পারদ ছুঁল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। হাওয়া দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, গরমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বাড়লেই তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ, বুধবারেও তাপমাত্রা তেমন কমবে না। তাপপ্রবাহ জারি থাকতে পারে আরও এক দিন।
কলকাতায় যখন তাপপ্রবাহ চলছে, তখন পশ্চিমের জেলাগুলির কী অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল, পশ্চিম মেদিনীপুরও তাপপ্রবাহের কবলে। কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে শুকনো গরম বাতাস ঢুকে পড়ায় এমন হাঁসফাঁস অবস্থা বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। ওই সব জেলাতেও আজ, বুধবার তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, বৃষ্টির আপাতত সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। উপগ্রহ চিত্র খুঁজেও বৃষ্টি হওয়ার পরিস্থিতি খুঁজে পাননি তাঁরা।
আসলে যে প্রাকৃতিক অবস্থার জন্য এ সময়ে ঝড়-বৃষ্টি হয়, তা-ই সৃষ্টি হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি জানান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়ে বছরের এই সময় তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে গরম বাতাস উপরের দিকে উঠে যায়। তা উপরের ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলে উল্লম্ব মেঘ তৈরি করে। ওই মেঘ ভেঙে হয় ঝড়-বৃষ্টি। মেঘে যত বেশি জলীয় বাষ্প ঢোকে, তত তার উচ্চতা বাড়ে। উচ্চতা বাড়লে ঝড়-বৃষ্টির তীব্রতা বেশি হবে। মার্চ থেকে কয়েক দফায় ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বেশ কয়েক বার। উল্লম্ব মেঘও তৈরি হয়েছে সেই সময়ে। কিন্তু ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ছাড়া আর কখনও সেই মেঘ কলকাতার উপরে ভেঙে পড়েনি। মেঘ ভেঙেছে পাশ্ববর্তী জেলায়। সেখানে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে।
কলকাতার এই হাঁসফাঁস গরমে বৃষ্টি নামানোর জন্য ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ়েও তাপপ্রবাহের দরকার ছিল। তা হয়নি। গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিন ওই এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না। তাই উল্লম্ব মেঘ তৈরি হওয়ার পরিস্থিতিটাই তৈরি হচ্ছে না। ওই এলাকায় তাপমাত্রা কবে থেকে বাড়বে, তার উপরে এখন নির্ভর করতে হবে। এ রাজ্যের মতো ঝাড়খণ্ডেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তবেই বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। না হলে অপেক্ষা করতে হবে কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের জন্য।