শচীন হেলা
বন্ধুরাই খুন করেছে তাঁদের ছেলেকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে এমনই অভিযোগ করলেন লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া যুবকের পরিজনেরা।
সোমবার সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় শচীন হেলা (১৯) নামে ওই তরুণ উড়ালপুলে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ দিন শচীনের দাদা সানি অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইকে অন্যত্র খুন করে উড়ালপুলে ফেলে দিয়ে গিয়েছেন তাঁর বন্ধুরাই। পুলিশের অবশ্য দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুমান, দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। পুলিশ জানায়, শচীনের পরিবারের অভিযোগটি আলিপুর আদালতে পাঠিয়ে বিচারকের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবে তারা।
এর পাশাপাশি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এ দিন চারু মার্কেট থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান শচীনের পরিবার ও পাড়ার লোকজন। মিনিট দশেকের জন্য অবরোধ করা হয় দেশপ্রাণ শাসমল রোড। পুলিশের বড় বাহিনী গিয়ে অবরোধ তুলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার সকাল সাতটা নাগাদ উড়ালপুলের উপরে শচীনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এক পথচারী লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে খবর দেন। পরে ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে গড়চা রোডের বাসিন্দা শচীনকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের হেলমেট ও মোবাইল ফোন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শচীনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, রবিবার রাতভর চেতলায় এক বন্ধুর বাড়িতে ‘পার্টি’ করেন শচীন ও তাঁর পাঁচ বন্ধু। সঙ্গে ছিলেন এক তরুণীও। সেখান থেকে বেরিয়ে দু’টি মোটরবাইকে ভবানীপুরে গিয়ে একটি ধাবায় চা খান শচীনেরা। তার পরে একটি মোটরবাইকে ওঠেন শচীনের বন্ধু স্মরণজিৎ সিংহ ও তরুণী ওই বান্ধবী। তাঁদের পিছনে বসেন শচীন। বিক্রমগড়ে ওই তরুণীকে ছেড়ে আসতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা জেনেছেন, দেশপ্রিয় পার্কের দিক থেকে লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে ওঠেন স্মরণজিতেরা। দুর্ঘটনাস্থলের বেশ কিছুটা আগে থেকে স্মরণজিতের এঁকেবেঁকে মোটরবাইক চালানোর ছবি ধরা পড়েছে ফুটেজে। এক প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে জানান, এঁকেবেঁকে চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান স্মরণজিৎ। বাইকের চাকা পিছলে গেলে শচীন ও স্মরণজিতের বান্ধবী পড়ে যান। মোটরবাইকটিও ছিটকে পড়ে। উড়ালপুলের রেলিংয়ে মাথায় ধাক্কা লাগে শচীনের। তখন সকাল সাতটা বাজতে কিছুক্ষণ বাকি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অভিযোগ, দুর্ঘটনাস্থলে শচীনকে ফেলে রেখে মোটরবাইকে বান্ধবীকে চাপিয়ে যোধপুর পার্কের একটি হাসপাতালে যান স্মরণজিৎ। পড়ে গিয়ে তাঁর বান্ধবী হাত-পায়ে চোট পান। বান্ধবীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে স্মরণজিৎ তাঁর পণ্ডিতিয়া রোডের বাড়িতে ফিরে যান। দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন শচীনের অন্য বন্ধুরাও। তাঁরাও শচীনকে ফেলে পালান বলে পুলিশের অভিযোগ।
দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ স্মরণজিতের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও গাফিলতির কারণে মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করে। সোমবারই ওই যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। জামিনযোগ্য অপরাধ হওয়ায় তিনি আদালত থেকে জামিন পান।
পুলিশ মামলা দায়ের করলেও কেন ওই যুবক জামিনে ছাড়া পেলেন সেই প্রশ্ন তুলে ও পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শচীনের পরিবার ও পাড়ার লোকজন চারু মার্কেট থানার সামনে জড়ো হন। দুর্ঘটনাস্থল ওই থানা এলাকাতেই।