উৎসবের শহরে চার অগ্নিকাণ্ড, জখম চার দমকলকর্মী

দোলের রেশ কাটতে না কাটতেই কলকাতা, হাওড়া ও শহরতলি এলাকায় চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। সোমবার ভোরে বেলঘরিয়ার প্রফুল্লনগরের এক বাড়িতে মজুত থাকা বাজির মশলায় বিস্ফোরণ হয়। ওই আগুন নেভাতে গিয়ে জখম হন চার দমকলকর্মী। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিনই হাওড়ার ডবসন লেনে পুড়ে যায় সিইএসসি-র দু’টি হাইটেনশন ট্রান্সফর্মার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০২:৫০
Share:

দোলের রেশ কাটতে না কাটতেই কলকাতা, হাওড়া ও শহরতলি এলাকায় চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। সোমবার ভোরে বেলঘরিয়ার প্রফুল্লনগরের এক বাড়িতে মজুত থাকা বাজির মশলায় বিস্ফোরণ হয়। ওই আগুন নেভাতে গিয়ে জখম হন চার দমকলকর্মী। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিনই হাওড়ার ডবসন লেনে পুড়ে যায় সিইএসসি-র দু’টি হাইটেনশন ট্রান্সফর্মার। দুপুরে বাঙুর এলাকায় আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় একটি গেঞ্জি কারখানা। অন্য দিকে, রবিবার সকালে লেক থানা এলাকার সিএসটিসি ডিপোয় আগুনে পুড়ে যায় পাঁচটি বাস।

Advertisement

পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, সোমবার ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ বেলঘরিয়ার প্রফুল্লনগরে গৌতম দাস নামে এক জনের বাড়ি থেকে বিকট আওয়াজ পান প্রতিবেশীরা। তাঁরা বেরিয়ে দেখেন, ওই বাড়িতে আগুন জ্বলছে। খবর যায় দমকলে। কামারহাটি দমকলকেন্দ্র থেকে ৪টি ইঞ্জিন পৌঁছয়। আগুন নেভানোর সময়ে ফের বিস্ফোরণ হয়। জখম হন শুভাশিস রিজ ও শঙ্কর দাস নামে দুই দমকলকর্মী। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সামান্য জখম হয়েছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৌমিত্র পুততুণ্ড। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, গৌতমবাবু শখে বাজি বাজাতেন। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দাপ্রধান সি সুধাকর বলেন, “ওই ব্যক্তির বাড়িতে কোথা থেকে এত পরিমাণে বাজির মশলা এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অন্য দিকে, এ দিনই সকালে ডবসন লেনে পুড়ে যায় সিইএসসি-র দু’টি হাইটেনশন ট্রান্সফর্মার। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া একটি বহুতল আবাসন এবং আশপাশের হোটেলগুলিতে। দমকলের চারটি ইঞ্জিন এক ঘণ্টায় আগুন নেভায়। দমকল সূত্রে খবর, পূর্ব রেলের গোলমোহরের কর্মী আবাসনের উল্টো দিকে ডবসন লেনের একটি সরু গলির মধ্যে রয়েছে সিইএসসি-র একটি গুদাম। সেখানেই রয়েছে ওই দু’টি ৩০০ কেভির হাইটেনশন ট্রান্সফর্মার।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি ওই গুদাম লাগোয়া পাঁচিলের পাশে দু’টি গুমটি গজিয়ে ওঠে। যার একটিতে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করা হত। এ দিন দুপুরে ইস্ত্রি করার সময়ে আগুন লেগে যায় গুমটিতে। তা ছড়িয়ে পড়ে সিইএসসির গুদামের ট্রান্সফর্মার দু’টিতে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুদামে। এলাকার বাসিন্দা রাহুল সিংহ বলেন, “আমরা তখন রং খেলছিলাম। হঠাৎ দেখি ইস্ত্রির দোকানে আগুন লেগেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে সিইএসসি-র গুদাম থেকে। এর পরেই দাউদাউ করে আগুন লেগে যায়।” পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই ইস্ত্রির গুমটির মালিক পালিয়ে যান।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিইএসসি-র ওই গুদামের সামনের গুমটিটি পুড়ে গিয়েছে। পাশের বহুতলের আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এসেছেন। ঘটনাস্থলে ছিলেন সিইএসসি-র পদস্থ কর্তারা। সিইএসসির তরফে জানানো হয়, ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগেনি। পাশের ইস্ত্রির গুমটিতে লাগা আগুন ট্রান্সফর্মারে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। এ দিকে, অগ্নিকাণ্ডের জেরে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রায় ঘণ্টা চারেক পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ দিনই দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় বাঙুর এ ব্লকে একটি গেঞ্জি কারখানা। পুলিশ জানায়, একটি দোতলা বাড়ির একতলায় ছিল ওই কারখানাটি। এ দিন হঠাৎই কারখানার জানলা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয়েরা। মুহূর্তে আগুন ধরে যায়। বাসিন্দারা প্রথমে নিজেরাই জল দিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। পরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ রকম জনবহুল জায়গায় একটি গেঞ্জি কারখানা চলছে। পুরসভা জানায়, কারখানাটির লাইসেন্স আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন আগুন লাগল তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ দিকে, রবিবার সকালে লেক থানার সিএসটিসি ডিপোতে আগুনে পুড়ে যায় পাঁচটি বাস। কাছেই কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের অফিসারেরা। তাঁরা তিনটি বাস কোনও ভাবে বার করে আনেন। দমকলের ৪টি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কি ভাবে আগুন লাগল, তা জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement