ছবি: সংগৃহীত
ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটেনি রণিত পালের। শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা, নাট্যকর্মী রণিত শিয়ালদহ স্টেশনের নর্থ ডিভিশনে এক যুবককে উত্তেজিত জনতার গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, তার পরে জিআরপি-র এক কনস্টেবলের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
রণিতের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ যখন ঘটনাটি ঘটছে, তখন দু’ফুট দূরেই কিয়স্কে ছিলেন দু’জন জিআরপি-র কর্মী। চোখের সামনে এক যুবককে পকেটমার সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে দেখেও তাঁরা চুপচাপ ছিলেন বলে অভিযোগ। রণিত ও কয়েক জন যাত্রী মিলে কিয়স্কে থাকা এক কনস্টেবলকে বার বার ওই যুবককে বাঁচাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই কর্মীরা এগিয়ে আসেননি। পরে জিআরপি-র এক অফিসারকে ডেকে এনে সেই যুবককে উদ্ধার করা হয়। রণিতের অভিযোগ, এর পরেই বদলে যায় কনস্টেবলের চেহারা। ওই কনস্টেবল রণিতকে একা পেয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন। এমনকি, তাঁর ছবি মোবাইলে তুলতে শুরু করেন ওই কনস্টেবল। তাঁর ছবি তোলা হচ্ছে কেন, এ প্রশ্ন করতেই ওই কনস্টেবল পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ রণিতের। এমনকি, তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সেই কনস্টেবল। পুরো বিষয়টি জিআরপি-তে
লিখিত অভিযোগে জানাতেই তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রণিতের।
ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন রণিত। তিনি রবিবার বলেন, ‘‘এক জন যুবককে চোখের সামনে মারা হচ্ছিল দেখে তাঁকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। তার জন্য এ রকম হুমকি পেতে হবে ভাবিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুক্রবার প্রথমে ওই জিআরপি অফিসার সাধারণ ভাবে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। কিন্তু সেই অভিযোগে যখন ওই কনস্টেবলের ভূমিকা কী ছিল তা লিখি, তখনই তিনি প্রচ্ছন্ন ভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রণিতের অভিযোগ, শনিবার লিখিত অভিযোগ জানানোর পরে তাঁকে বলা হয়, জিআরপি-র কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি, তাই বিপদে পড়তে পারেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে ভবিষ্যতে তদন্তের স্বার্থে আবার ডাকা হতে পারে এবং কনস্টেবলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি প্রমাণ করতে না পারলে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য তাঁকে খেসারত দিতে হতে পারে বলেও জিআরপি-র অফিসার হুমকি দিয়েছেন। রবিবার রণিত বলেন, ‘‘আমরা বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে যাব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশই যদি উল্টে হুমকি দেয়, ভয় দেখায় এবং মারধর করে তা হলে সাধারণ নাগরিকেরা কোথায় যাব?’’ যদিও এসআরপি-শিয়ালদহ অশেষ বিশ্বাস রবিবার জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যে যুবক গণপিটুনির শিকার হন, তাঁর বিরুদ্ধে জিআরপি-র কাছে পকেটমারি কিংবা চুরির কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। ফলে তিনি কী কারণে মার খেলেন, তা-ও অজানা। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান অশেষবাবু।