কল্যাণীর এক নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ছাড়া হল তরুণীকে। প্রতীকী ছবি।
যাদবপুর থানা থেকে জোর করে নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া তরুণী ছাড়া পেলেন মঙ্গলবার সকালে। বাবা-মায়ের উপস্থিতিতেই কল্যাণীর এক নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে তাঁকে ছাড়া হয়। পুলিশের সামনে তরুণী জানান, বন্ধুদের সঙ্গেই কলকাতায় ফিরতে চান।
গত রবিবার সকালে যাদবপুর থানা থেকে বছর ২৬-এর ওই তরুণীকে জোর করে নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তরুণীর বাবা-মা মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চান বলে দাবি করেন। নিজেকে তরুণীর প্রেমিক বলে দাবি করে ঋতব্রত ঘোষ নামে এক যুবক অভিযোগ করেন, তাঁর বান্ধবী বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। ভয় ছিল, তাঁর বাবা-মা এমন কিছু একটা করতে পারেন। সেই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে মানবাধিকার লঙ্ঘনের। যাদবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি তরুণীর খোঁজ শুরু করেন তাঁর বন্ধুরা। তাতেই সামনে আসে, কল্যাণীর এ ব্লকের নিউ কল্যাণী ফিউচার ফাউন্ডেশনের মাদকাসক্ত আবাসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম।
ওই কেন্দ্র সূত্রের খবর, তরুণীকে প্রথমে বাড়ির কাছাকাছি, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া এলাকার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। রবিবার রাতে তাঁর বাবা-মা তাঁকে ভর্তি করে দিয়ে যান কল্যাণীর কেন্দ্রে। নেশামুক্তি কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, সেখানে ভর্তি হওয়ার পরে কোনও চিকিৎসা শুরু হয়নি। ওই সংস্থার সভাপতি প্রণব বিশ্বাস বলেন, “তরুণীর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। রক্তচাপ খুব কম থাকায় ডিম সেদ্ধ খাওয়ানো হয়। তবে, চিকিৎসা করার সময় পাওয়া যায়নি। এক দিন ছিলেন মাত্র। তা ছাড়া, সোমবার রাত থেকে ওই তরুণীর বন্ধুরা ফোন করছেন। ওঁদের দাবি ছিল, ওঁকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু, তরুণীর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে ছাড়তে চাইছিলাম না।”
তরুণীর বন্ধুরা সোমবার রাতেই সেখানে পৌঁছে যান। পুলিশ তাঁদের কেন্দ্রের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। তাঁরা এর পরে কল্যাণী থানায় গিয়ে দাবি করেন, ওই তরুণীর নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়। তাঁর বন্ধুদের অভিযোগ, কল্যাণীর ওই কেন্দ্রের কোনও অনুমোদনই নেই। তা হলে ওই কেন্দ্র চলছে কী করে? সংস্থার সভাপতি প্রণব রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলেন, “কল্যাণী শহরের সব নেশামুক্তি কেন্দ্র এই রেজিস্ট্রেশনেই চলছে। যদি সমাজকল্যাণ দফতরের অনুমোদন লাগে, করিয়ে নেওয়া হবে।”
জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক শমিতা ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের দফতর থেকে অনুমোদন নিয়ে জেলায় কোনও বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র চলছে না। নজরদারির বিষয়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দেবেন, সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে।” মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনে এমন কেন্দ্র চলছে কী করে? এমন কেন্দ্রেই তো পিটিয়ে মেরে ফেলা থেকে শুরু করে নানা অপরাধের অভিযোগ আসে।’’ বিকেলে ওই তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা ফের যাদবপুর থানায় যান। নিরাপত্তার দাবি জানানোর পাশাপাশি বেশ কিছু বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করেন তাঁরা।