Death

Tangra: ট্যাংরায় বহুতল থেকে পড়ে মৃত্যু কিশোরের

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে, ট্যাংরা থানা এলাকার একটি ২৮তলা বহুতলে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরের বাড়ি হাওড়ার বেলুড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ০৬:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাসির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল বছর পনেরোর কিশোর। পুলিশ সূত্রের খবর, বহুতলের ছাদের সুইমিং পুলে মনের আনন্দে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল সে। এর পরে মাসির ফ্ল্যাটে ফিরতেই মা জানিয়েছিলেন, এ বার বাড়ি ফিরতে হবে। পরিবারের কাছ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, তা শুনে রেগে গিয়েছিল ওই কিশোর। বলেছিল, মাসির বাড়িতে এটাই তার শেষ আসা। এর কিছু ক্ষণ পরেই বিকট আওয়াজ। সকলে বেরিয়ে দেখেন, নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে দশম শ্রেণির ওই পড়ুয়া।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে, ট্যাংরা থানা এলাকার একটি ২৮তলা বহুতলে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরের বাড়ি হাওড়ার বেলুড়ে। ওই দিন মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সে ওই বহুতলের একুশতলার বাসিন্দা মাসির ফ্ল্যাটে বেড়াতে এসেছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সেখান থেকে ওই কিশোর ঝাঁপ দিয়েছে। বেলুড়ের একটি আবাসনের বাসিন্দা, এক লোহার ব্যবসায়ীর বড় ছেলে ওই কিশোর স্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই কিশোর জন্মের পর থেকেই মাথার যন্ত্রণায় ভুগত। বছর দেড়েক আগে বেঙ্গালুরুতে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে টিউমার বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিছু দিন রাজারহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাও হয়েছিল তার। আত্মীয়দের থেকে পুলিশ জেনেছে, ওই অস্ত্রোপচারের পরে সে সুস্থ হয়ে উঠলেও কথাবার্তার মধ্যেই আচমকা রেগে যেত। যে কোনও ঘটনায় তার প্রতিক্রিয়া অতিরিক্ত মাত্রায় প্রকাশ পেত।

এ দিকে, কিশোরের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই বেলুড়ের ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। এক আত্মীয় বলেন, “প্রায়ই মাসির বাড়িতে বেড়াতে যেত। শুক্রবার সকালেও তেমনই গিয়েছিল। বিকেলে যে এ খবর আসবে, কে ভেবেছে।” এ দিন ওই বহুতল আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় ওই কিশোর পড়েছিল, সেটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পরিজনেরা জানান, ছাদের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে এবং মাসতুতো দিদিদের সঙ্গে খেলতে মাঝেমধ্যেই সেখানে চলে আসত ওই কিশোর। তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সে এসেছিল। তার পরে ছাদের পুলে গিয়ে এক ঘণ্টা সাঁতার কেটে, মাসির ফ্ল্যাটে ফিরে টুপি এবং রোদচশমা খুঁজতে থাকে ওই কিশোর। সেই সময়ে বাড়ি ফেরার জন্য তাকে প্রস্তুত হতে বলায় সে রেগে যায়। তার এক আত্মীয়ের কথায়, “বিকেল পাঁচটা নাগাদ টিউশন নেওয়ার জন্য বাড়ি ফেরার কথা বললেও ও রাজি হয়নি। ফেরার জন্য জোরাজুরি করা হলে রেগে গিয়ে সে অ্যাপ-ক্যাব বুক করতে বলে। সঙ্গে এটাও বলে, এটাই ওর মাসির বাড়িতে শেষ আসা।”

Advertisement

ওই আত্মীয় আরও জানাচ্ছেন, এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাসতুতো দিদি দেখতে পান, ফ্ল্যাটের বারান্দায় একটি চেয়ারের উপরে উঠে রেলিংয়ে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাই। এমন দৃশ্য দেখে তিনি অন্য ঘর থেকে সবাইকে ডেকে আনতে আনতেই নীচে পড়ে যায় ওই কিশোর। বিকট আওয়াজ পেয়ে সকলে ছুটে যান। দেখা যায়, নীচে কংক্রিটের চত্বরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ওই কিশোর। দ্রুত তাকে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে বেলুড় থেকে ওই কিশোরের বাবা ও অন্যেরা সেখানে চলে আসেন। ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় কিশোরের মা ও পাঁচ বছরের ভাইকে। এ দিন বেলুড়ের ফ্ল্যাটে গেলেও কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয় সূত্রের খবর, কান্নায় ভেঙে পড়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন কিশোরের মা। পুলিশ সূত্রের খবর, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিশোরের দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ জানায়নি তার পরিবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement