ডিভাইডারে ধাক্কা বাইকের, মৃত্যু তরুণের

মঙ্গলবার গভীর রাতে নিমতলার ভূতনাথ মন্দির থেকে ফেরার পথেই মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বাচ্চুর পুত্র বছর কুড়ির রাজীব নস্করের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০২:২৪
Share:

বুকভাঙা: রাজীবের দেহ নিয়ে পরিজনেরা। বুধবার, বাগুইআটিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ওঁদের নাওয়া-খাওয়ার সময় বদলায়, কিন্তু ভূতনাথ মন্দির দর্শনের নিয়ম বদলায় না! আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়না-তদন্তের ঘরের সামনে ছেলের মরদেহ আঁকড়ে বুধবার এ কথাই বলছিলেন বাগুইআটির বাসিন্দা বাচ্চু নস্কর। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ওরা ভূতনাথ মন্দিরে যাবে শুনলেই রোজ ঝামেলা করতাম। কাল যে কেন করলাম না!’’ গলা বুজে আসে মাঝবয়সি মহিলার।

Advertisement

মঙ্গলবার গভীর রাতে নিমতলার ভূতনাথ মন্দির থেকে ফেরার পথেই মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বাচ্চুর পুত্র বছর কুড়ির রাজীব নস্করের। ভিআইপি রোড ধরে দ্রুত গতিতে আসা মোটরবাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে সজোরে ধাক্কা মারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাইকে রাজীব ছাড়াও ছিলেন তাঁরই বয়সি গৌরব সাহা এবং বছর বাইশের সোমনাথ রায় নামে দুই তরুণ। তাঁদের দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এক জন ভিআইপি রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অন্য জন চার হাসপাতাল ঘুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের পরিবার জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দু’জনকেই টানা নজরে

রাখবেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে বাগুইআটির কাছে ভিআইপি রোডের ওই অংশে পুলিশের নাকা তল্লাশি চলছিল। মাথায় হেলমেট না থাকায় পুলিশ রাজীবদের মোটরবাইক দাঁড় করায়। তখন রাজীবেরা দ্রুত বাইক চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। সে সময়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারে রাজীবদের মোটরবাইক। বাইকের গতি এতই বেশি ছিল যে, রাস্তায় ছিটকে পড়ে ডিভাইডারে

ধাক্কা খায় রাজীবের মাথা। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তাঁর গোটা শরীর। পুলিশের যদিও দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা। সে সময়ে সেখানে নাকা চেকিং

চলছিল না। পুলিশের বক্তব্য, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসে কোনওমতে রাজীবকে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে আর জি করে তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। পুলিশ জানায়, গৌরব এবং সোমনাথকেও প্রথমে ভিআইপি রোডের ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গৌরব সেখানে ভর্তি থাকলেও সোমনাথকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় ওই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয় সোমনাথকে। পরে আরও একটি বেসরকারি হাসপাতাল হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সোমনাথের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ভাল চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটছি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর টাকা আমাদের নেই।’’

বাগুইআটির উত্তরপাড়ায় বাড়ি রাজীবের। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, তাঁর বাবা ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করেন। রাজীবও পড়াশোনা ছেড়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানোর কাজ করছিলেন। রাজীব, গৌরব এবং সোমনাথের বাড়ি একই পাড়ায়। তাঁদের দু’জনের বাবা লটারির টিকিট বিক্রির ব্যবসা করেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইকটি গৌরবের। তিনিই বাইকটি চালাচ্ছিলেন। পিছনে সোমনাথেরও পরে বসেছিলেন রাজীব। রাজীবের পরিবার জানায়, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ওঁরা ভূতনাথের মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হন। রাত দেড়টা নাগাদ দুর্ঘটনার খবর আসে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বিধাননগর পুরসভার ২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মণীশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, ছেলেটির ক্ষতবিক্ষত অবস্থা। ওঁরা সকলেই পাড়ার ছেলে। কিন্তু রোজ নাকি রাতে ভূতনাথ মন্দিরে যান। ওঁদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।’’

দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পরিবারও বলছে, ভূতনাথ মন্দিরে যাওয়ার নেশা যে এ ভাবে বিপদ ডাকবে, তা তাঁরা কখনওই ভাবেননি। রাজীবের এক আত্মীয় এ দিন বলেন, ‘‘ওর হেলমেটটি বাড়িতেই পড়ে আছে। এ দিয়ে আর কী হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement