ফাইল চিত্র।
ভাঙা ভিটের টানে কেউ ছুটে আসছেন কর্মক্ষেত্র থেকে, কেউ বা অস্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে ঢুঁ মারছেন সকাল-বিকেল। মন যেন ফের ভবঘুরে।
চাকরি সূত্রে চলতি মাসেই পটনায় বদলি হয়েছিলেন। নতুন জায়গায় সব গুছিয়ে বসার আগেই এল দুঃসংবাদ। ফের মেট্রোর কাজের জন্য বিপত্তি ঘটেছে। পৈতৃক ভিটেয় আবারও ফাটল ধরায় সব ছেড়ে বৃদ্ধা মা এবং পিসিকে উঠতে হয়েছে হোটেলে। খবর পেয়ে শনিবার সকালেই পটনা থেকে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িতে ফিরতে হয় অরিজিৎ সেনকে।
এ দিন কলকাতায় ফিরেই সোজা দুর্গা পিতুরি লেনের ভাঙা বাড়ি থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন অরিজিৎ। বললেন, ‘‘মায়ের ৭০ বছর বয়স। রয়েছেন হোটেলে। এই অবস্থায় তাঁকে ছেড়ে সোমবার সকালে ফের কাজে যোগ দিতে হবে।’’ ফলে রবিবার রাতের ট্রেনেই পটনা ফিরতে হচ্ছে অরিজিৎকে। শনিবার বিকেলে কুলদেবীর বিগ্রহ রেখে এসেছেন সিঁথির মোড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।
২০১৯ সালেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁদের। সে বার সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিলেন অরিজিতের জেঠতুতো দাদা অমর্ত্য সেন এবং তাঁর পরিবার। স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে অমর্ত্য অন্যত্র থাকেন। অমর্ত্যের মা-বাবাও দুর্গা পিতুরি লেনে আর ফেরেননি। টিভিতে দেখে অমর্ত্যই তাঁকে প্রথম খবর দেন। তিনিও এ দিন এলাকায় এসেছিলেন।
তবে শুধু অরিজিৎ নন, এই অবস্থায় টালমাটাল ঘর, না কি চাকরি সামলাবেন, সেই দোটানায় রয়েছেন মানসী ভুঁইয়াও। কাছেই একটি সোনার দোকানে কাজ করেন তিনি। আপাতত রয়েছেন হোটেলে। বাড়ি থেকে জরুরি জিনিস নিয়ে যাওয়ার ফাঁকে মানসী বললেন, ‘‘মাথার উপর থেকে ছাদ চলে গিয়েছে, আগে সেটা সামলাই। কাজে না যাওয়ায় মালিক টাকা কাটলে কাটবেন।’’
কর্মক্ষেত্রে মন বসছে না আর এক বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ঠাকুরেরও। চাঁদনি চকের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন তিনি। এ দিন পরিবারকে হোটেলে রেখেই কাজে গিয়েছেন বিশ্বজিৎ। বললেন, ‘‘নিজের বাড়িতে কবে ফিরব, জানি না।’’
পুরনো ভিটেয় সব ফেলে আসা আর এক বাসিন্দা অর্চনা চৌধুরী নিতে এসেছিলেন মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুটের কৌটো। কেন? খাবারের খুব অসুবিধা হচ্ছে— জানালেন অর্চনা।