উদ্ধার: বার করে আনা হচ্ছে ওই তরুণীর দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
ছাদের উপরে ঘরের দরজা যে বন্ধ, তা চোখেই পড়েনি কারও। হুঁশ ফিরল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির ফোনে! পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ওই ফোনেই দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের বাড়িওয়ালা জানতে পারেন, তাঁর বাড়ির একটি ঘরে এক তরুণীকে খুন করে রাখা হয়েছে। ফোন পেয়েই পুলিশে জানান তিনি। বড়তলা থানার পুলিশ এসে ওই ঘরের দরজা ভেঙে তরুণীর দেহ উদ্ধার করে।
লালবাজার সূত্রে খবর, নিহত ওই তরুণী আদতে কুলপির বাসিন্দা। মাস পাঁচেক ধরে ৮ নম্বর দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের ওই বাড়িতে থাকছিলেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁর গলায় তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় বাবলু নামে এক ফল বিক্রেতাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্ক ছিল। সে ওই যৌনপল্লিতে তাঁর সঙ্গেই থাকত। পুলিশ জানায়, তরুণীর ফোনটি খোয়া গিয়েছে। রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি বাবলুর। পুলিশ জানায়, বাবলুকে বুধবার দুপুরে তরুণীর বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে আর ওই এলাকায় আসেনি সে। এলাকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বাবলুর স্কেচ আঁকানো চলছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি ক্লাবের জলসায় বাবলু ও ওই তরুণীকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। রাতে তরুণীর ঘর থেকে দু’জনের বচসার শব্দ শুনেছিলেন বাড়ির অন্য বাসিন্দারা। তার পর থেকে তাঁকে আর দেখেননি আশপাশের কেউ। তদন্তকারীরা জানান, গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছাড়া নিহতের শরীরে অন্য কোনও আঘাত বা ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি। পুলিশের অনুমান, ঘুমন্ত অবস্থাতেই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। বাড়ির মালিক গৌতম সিংহের কাছে যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তার সূত্র ধরেও তদন্ত শুরু হয়েছে। সন্দেহভাজন ওই যুবকের বাড়ি বাংলাদেশে বলে দাবি করেছে পুলিশের একটি সূত্র।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ গৌতমের কাছে ফোন আসে। তার পরেই এলাকার কয়েক জনকে নিয়ে ওই তরুণীর ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দেন গৌতম। দেখেন, মেঝেতে তাঁর দেহ পড়ে রয়েছে, আশপাশে রক্ত। বড়তলা থানার টহলদার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পৌঁছয় থানায়। তদন্তকারীরা জানান, তরুণীর মৃতদেহে পচন ধরেছিল। তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, মঙ্গলবার রাতেই খুন করা হয়েছে তাঁকে।
সোনাগাছির দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির মেন্টর ভারতী দে জানান, ওই তরুণী বহু দিন ধরে যৌনপল্লির বাসিন্দা। এর আগে তিনি সেখানেই অন্য একটি বাড়িতে থাকতেন। এ দিন দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন, তরুণী তাঁদের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। রাস্তায় দেখা হলে অল্পবিস্তর কথা বলতেন। তবে এলাকার দু’-চার জন যৌনকর্মীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। বাড়ির বাসিন্দাদের পাশাপাশি সেই যৌনকর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।