পুরভোট ২০১৫

পুর-পরিষেবায় পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী তরুণ প্রার্থীরা

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে চান তাঁরা। শিশুশ্রম বন্ধ করে দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে চান অনেকে। আবার বস্তির ঘরে ঘরে শহুরে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেওয়াই অনেকের প্রতিশ্রুতি। এই ভাবনা-প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই কলকাতার পুর-পরিষেবায় পরিবর্তন আনার লড়াইয়ে এ বার নতুন মুখের মিছিল। প্রথম বারের ভোট-প্রার্থী, পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশের সেই মুখেরা মানুষের পাশে থাকার লক্ষ্যে কেউ ছেড়েছেন কর্পোরেট কেরিয়ার, কারও আবার বিদেশি ডিগ্রি থাকলেও রাজনীতিক বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় বড় চাকরি ছেড়েছেন।

Advertisement

দেবারতি সিংহচৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৪
Share:

যুদ্ধে যাঁরা। (বাঁ দিক থেকে) মৌমিতা ভট্টাচার্য, সন্দীপন সাহা, শাহিনা জাভেদ, তিথি মুখোপাধ্যায় এবং দীপাঞ্জন রায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে চান তাঁরা। শিশুশ্রম বন্ধ করে দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে চান অনেকে। আবার বস্তির ঘরে ঘরে শহুরে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেওয়াই অনেকের প্রতিশ্রুতি।

Advertisement

এই ভাবনা-প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই কলকাতার পুর-পরিষেবায় পরিবর্তন আনার লড়াইয়ে এ বার নতুন মুখের মিছিল। প্রথম বারের ভোট-প্রার্থী, পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশের সেই মুখেরা মানুষের পাশে থাকার লক্ষ্যে কেউ ছেড়েছেন কর্পোরেট কেরিয়ার, কারও আবার বিদেশি ডিগ্রি থাকলেও রাজনীতিক বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় বড় চাকরি ছেড়েছেন। প্রত্যেকেই তাঁরা ভোট-ময়দানে লড়ে বোঝাতে চান, রাজনীতিতে মোটেও বিমুখ নয় শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম।

কলকাতার এই তরুণ নাগরিকরা প্রত্যেকেই অনুভব করেন শহুরে বস্তি জীবনে উন্নয়নের অভাব। তাঁরা জানেন, রাস্তাঘাট জঞ্জালমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। রাস্তায় আরও আলো চান তাঁরা। ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহে খামতির কথাও স্বীকার করেছেন সকলেই। তাঁদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বাড়াতে দরকার তাঁদের শিক্ষা, কাজ। তাই বাম, তৃণমূল, কংগ্রেস মায় বিজেপি দল নির্বিশেষে নতুন প্রার্থীদের প্রত্যেকেরই আর্তি, “রাজনীতি মানেই দুর্নীতি, খারাপ মানুষের ভিড় এই ভুল ধারণাাটা মানুষের মন থেকে দূর করতে চাই।” প্রয়াসে মিল শাসক-বিরোধী দু’তরফেই। শুধু এ বার বিরোধী শিবিরের বেশির ভাগ প্রার্থী চাকরি ছেড়ে আনকোরা তরুণ হিসেবে ভোটের লড়াইকে স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন। যেখানে শাসক দলের বেশিরভাগ নতুনই লড়ছেন পারিবারিক সূত্রে।

Advertisement

দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে ফৈয়াজ আহমেদ খান যেমন। অস্ট্রেলিয়া থেকে ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফৈয়াজ বলেই ফেললেন, “কাদা ছোড়াছুড়ি আর বিরোধিতা না করে মানুষের জন্য সব দল মিলে একসঙ্গে কাজ করা দরকার। না হলে তরুণ প্রজন্ম তো কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেই। রাজনীতিতেও উত্‌সাহী হবেন না তাঁরা।” ফৈয়াজ এ বার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী। ওই ওয়ার্ডেই ১৫ বছর কাউন্সিলর ছিলেন তাঁর বাবা, পাঁচ বছর ছিলেন তাঁর মা-ও। তবুও সেই ওয়ার্ডেই পানীয় জল, নিকাশির আরও সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন ফৈয়াজ। বস্তির মানুষকে নাগরিক সুবিধা দেওয়াও তাঁর প্রচারের সিংহভাগে।

বস্তিবাসীকে পরিচ্ছন্ন থাকতে সচেতন করে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় জোর দেওয়াই মূল লক্ষ্য ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সন্দীপন সাহার। তাঁর বাবা স্বর্ণকমল সাহা এবং মা সুনীতা দু’দশকেরও বেশি সময় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। আইআইএম জোকার প্রাক্তনী সন্দীপন বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়েছেন। তিনি এলাকার দুঃস্থ শিশুদের পড়াশোনায় উত্‌সাহ দিচ্ছেন নিজের উদ্যোগে। কর্মসংস্থানে কোর্সও করাচ্ছেন তরুণদের। বস্তির মা-মেয়েদের মনের জোরে ঘরে-বাইরে লড়ার সাহস দিচ্ছেন শাহিনা জাভেদ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সমাজবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ২৮ বছরের শাহিনা চান, “হার-জিত জানি না, চাই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বস্তির মেয়েদের জেতাতে।” নারীর ক্ষমতায়নকে পাখির চোখ করে প্রচারে নেমেছেন ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে সানা আহমেদও। তাঁর বাবা ইকবাল আহমেদ ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর। তবুও এলাকার রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো দরকার বলে মনে করেন বছর ছাব্বিশের সানা।

১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের ইঞ্জিনিয়ার-প্রার্থী দীপাঞ্জন রায় বা ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির মৌমিতা ভট্টাচার্য, ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের অলোক চক্রবর্তীর প্রচারে শোনা যাচ্ছে দুর্নীতিমুক্তির কথা। ত্রিফলা কেলেঙ্কারি, লেক মল-কাণ্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব তাঁরা। দীপাঞ্জনের অভিযোগ, “এই পুরবোর্ড আগাপাশতলা দুর্নীতিতে মোড়া। এমন বোর্ড কলকাতা অতীতে পায়নি!” অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর মৌমিতা বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়ান। ভোটে হারলেও সে কাজ ছাড়তে নারাজ তিনি। মৌমিতার প্রচারে মূল স্লোগান, “দূর হটিয়ে দুর্নীতি, বজায় রেখে সম্প্রীতি, স্বচ্ছ্ব হবে এ শহর।” এলাকার রাস্তা, আলো, পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস-প্রার্থী চিকিত্‌সক চিত্রা পালের ক্ষোভ, “কাউন্সিলর এলাকায় আসেনই না! এলাকার প্রায় সব গলিতেই আবর্জনা! বাড়ি বাড়ি খালি জমা জঞ্জালের অভিযোগ!” এলাকায় জঞ্জাল সাফাই হয় না বলে ক্ষোভ রয়েছে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী তিথি মুখোপাধ্যায়েরও। বছর চব্বিশের আইনজীবী তিথির আক্ষেপ একটাই, “ছোট থেকেই এলাকার এই অবস্থা দেখে আসছি। জানি না কবে উন্নতি হবে!”

নতুনদের প্রায় প্রত্যেকেরই অভিযোগ এলাকায় পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব নিয়ে। সকলেই স্বীকার করলেন, কলকাতাকে লন্ডন বানানো দূর অস্ত, আপাতত অপরিসর রাস্তা, যানজটে জেরবার এই মহানগরকে অন্তত মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো আধুনিকতার মোড়কে দেখতে চান এই তরুণ-প্রার্থীরা। সেটাই তাঁদের আপাত প্রচার-হাতিয়ারও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement