ওলা, উবের, মেরুর মতো লাক্সারি ট্যাক্সির রমরমা বাড়ার পরে হলুদ বা নীল-সাদা ট্যাক্সির জনপ্রিয়তা যে কমবে, এমন আশঙ্কা ছিলই। এবং তা যে অমূলক নয়, তা টের পাওয়া যাচ্ছে সম্প্রতি পরিবহণ দফতরেরই হিসেবে।
বেলতলায় পরিবহণ দফতরের অফিসের হিসেব বলছে, গত দু’বছরে যে সব ট্যাক্সির বয়স ১৫ বছর হয়ে যাওয়ার কারণে পুরনো বাতিল করে নতুন নামানোর কথা, তাদের মধ্যে ৪৮৮টি গাড়িই তা করেনি। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, ওলা, উবেরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েই ট্যাক্সি ব্যবসায় উৎসাহ হারাচ্ছেন ওই সব মালিকেরা। বদলে তাঁরাই আবার লাইন দিয়েছেন পরিবহণ দফতরের লাক্সারি ট্যাক্সির লাইনে, যাতে তাঁরা ওলা, উবেরের পারমিট হাতে পেতে পারেন।
কিন্তু পুরনো ট্যাক্সি বদলে নতুন ট্যাক্সি নামানোয় যখন উৎসাহে ভাটা, তখন আবার দিন-দিন ওলা, উবেরের মতো লাক্সারি ট্যাক্সির পারমিট জোগাড়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের অফিসে লাইন ক্রমে বেড়েই চলেছে।
২০০৯ সালে কলকাতা হাইকোর্ট বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত ১৫ বছরের পুরনো গা়ড়ি বাতিল করে নতুন গাড়ি নামানোর নির্দেশ দেয়। তার পর থেকে প্রতি বছরই ১৫ বছরের পুরনো ট্যাক্সি বাতিল হলেই তারা বদল করে নতুন ট্যাক্সি নেয়। কিন্তু গত আর্থিক বছরের শেষের দিক থেকে চিত্রটা পাল্টে গিয়েছে বলে দাবি পরিবহণ কর্তাদের। ক্রমশ ট্যাক্সিমালিকদের মধ্যে পুরনো গাড়ি বদলের প্রবণতা কমছে। নতুন ট্যাক্সির পারমিট নেওয়ার ক্ষেত্রেও মালিকদের অনীহা বাড়ছে। পরিবহণ দফতরের হিসেব বলছে, এ বছর মার্চ থেকে ট্যাক্সির পারমিট নেওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়েছে তিনশোর কিছু বেশি। সেখানে লাক্সারি ট্যাক্সির পারমিট নেওয়ার জন্য লাইন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কোনও কোনও সপ্তাহে ওই আবেদনের সংখ্যা এক হাজার ছুঁয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি পরিবহণ দফতরের কর্তাদের।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুরনো ট্যাক্সি বদলে যে নতুন ট্যাক্সি রাস্তায় নামছে না, তার প্রভাব এখনও চোখে পড়ছে না। কিন্তু আগামী দু’বছরে ‘০৪বি’ মডেলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি বাতিল হওয়ার কথা। ওই গা়ড়ির বদলেও যদি নতুন গাড়ি না নামে, তা হলে কিন্তু সত্যিই ট্যাক্সি যে কমছে, তা রাস্তায় চোখে পড়বে।’’
ওলা, উবেরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ট্যাক্সির ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?
পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, ট্যাক্সিচালকদের প্রত্যাখ্যানই বড় কারণ। চালকদের মর্জিমতো যাওয়ার প্রবণতা শহরের যাত্রীদের ক্রমশই ট্যাক্সির প্রতি বিমুখ করে তুলেছিল। কিন্তু যাত্রীদের কাছে বিকল্প ছিল না। ওলা-উবেরের মতো লাক্সারি ট্যাক্সি পরিষেবা আসার পরে সেই বিকল্প পেয়ে গিয়েছেন যাত্রীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি-সহ ওই সব ট্যাক্সিতে পরিষেবা অনেক ভাল, ফোনে বা অ্যাপে যোগাযোগ করলে যাত্রীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ট্যাক্সি। স্বভাবতই ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও উন্নত পরিষেবা পেতে ওলা-উবের-মেরুকেই বেছে নিচ্ছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি, ওলা-উবের মাসিক যে টাকা দিচ্ছে, সেটাও কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যুবকদের ব্যবসায় নামতে যথেষ্ট উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গাড়ির চালকেরা। লাভজনক হওয়ায় গাড়ির ঋণদাতারাও লাক্সারি ট্যাক্সিতে বিনিয়োগে মালিকদের উৎসাহ দিচ্ছেন। উল্টো দিকে, ঋণদাতারা আবেদনকারীদের নিরুৎসাহ করছেন ট্যাক্সি রাস্তায় নামাতে।
এক ধাপ এগিয়ে ট্যাক্সিমালিকদের সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, চালকেরা বেশির ভাগ ট্যাক্সি থেকে ওলা, উবেরের দিকে ঝুঁকছে। শাসক দলের ট্যাক্সিমালিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেন্স ইউনিয়নের নেতা শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘ওলা, উবেরে চালকেরা অনেক বেশি আয় করছেন। স্বভাবতই তাঁরা সে দিকে ঝুঁকছেন। বহু ট্যাক্সিমালিক তো চালক না পেয়ে গাড়িই বার করছেন না।’’