ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই চলে কাজ। বাগুইআটি উড়ালপুলে, মঙ্গলবার।
বাগুইআটি উড়ালপুলের উপরে রঙের কাজ করার সময়ে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক মহিলা শ্রমিকের। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম বাসন্তী আইচ (৩৭)। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে পুলিশ গাড়িটি আটক করেছে। যদিও চালককে ধরা যায়নি।
রাজপথে দুর্ঘটনা কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগান চালু করেছেন। চার দিকে তার প্রচারও চলছে। কিন্তু গাড়িচালকদের সচেতনতা কি তাতে আদৌ বাড়ছে? এ দিনের এই ঘটনা ফের সেই প্রশ্নই তুলে দিল।
ট্র্যাফিক পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিউ টাউনের সুলংগুড়ির বাসিন্দা ওই মহিলা বাগুইআটি উড়ালপুলের দেওয়াল রং করছিলেন। কার্যত রাস্তার উপরে বসেই কাজ করছিলেন তিনি। কোনও গার্ডরেলের বেষ্টনী তাঁর পাশে ছিল না। গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে এসে প্রথমে উড়ালপুলের দেওয়ালে ধাক্কা মারে। তার পরে ওই মহিলাকে। রাস্তার উপরে বেশ খানিকটা দূরে ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
পূর্ত দফতর এই দুর্ঘটনার দায় চাপাতে চেয়েছে কাজের ভারপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার উপরে। বাগুইআটি উড়ালপুল-সহ ভি আই পি রোডের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের বারাসত হাইওয়ে ডিভিশন (২)-এর এগজিকিউটিভ ই়ঞ্জিনিয়ার কনকেন্দু সিংহ বলেন, ‘‘এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে বারবারই বলা হয় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে। এ দিনের ঘটনার পরে ওই ঠিকাদার সংস্থার কাজের বরাত বাতিল করা হয়েছে। ওই মহিলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাদের।’’
গত সাত দিন ধরে ভিআইপি রোডের উপরে বিভিন্ন ডিভাইডারে নীল ও সাদা রং করা চলছে। শ্রমিকেরা সেখানে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা গাড়ির সামনে রাস্তায় বসে রং করেন। এ দিন সকালে বাগুইআটি উড়ালপুলের উপরে ওই দুর্ঘটনার পরেও বিকেলে একই ভাবে কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়াই উল্টোডাঙা উড়ালপুলে কাজ করতে দেখা যায় শ্রমিকদের।
ঘাতক গাড়ি।
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঠিকাদার কাজ শেষ করার পরে পূর্ত দফতর সেই কাজের পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু ঠিকাদার কতটা নিরাপদ ভাবে তাঁর শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন, সেটা সব সময়ে দেখার মতো লোকবল নেই। যদিও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকটি জোরদার করার জন্য সব সময়ই ঠিকাদারদের বলা হয়।’’
অন্য দিকে, সোমবার রাতে জেমস লং সরণি ও ভূপেন রায় রোডের মোড়ে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক যুবকের। মৃতের নাম পিন্টু দলুই (২৭)। তাঁর বাড়ি পর্ণশ্রীতে। পুলিশ জানায়, একটি স্কুলের কর্মী পিন্টুবাবু সাইকেলে ফিরছিলেন। একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়িটির খোঁজ চলছে।’’
ছবি: শৌভিক দে