প্রতীকী ছবি
কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ তালিকার সংশোধন ও পরিমার্জন করার কাজে চলতি বছরের শুরুতেই হাত দিয়েছিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। কিন্তু কোভিড-১৯ এবং তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের জন্য সে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। ফের কবে শুরু হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই বলে কমিশন সূত্রের খবর।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে কমিশনের আধিকারিকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, হেরিটেজ তালিকা সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য ‘ফিল্ড ওয়ার্ক’-এর প্রয়োজন। এ জন্য তালিকায় উল্লিখিত বাড়িগুলির ঠিকানায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘তালিকায় নথিভুক্ত ভবনগুলির গ্রেড ঠিক রয়েছে, নাকি তাতে কোনও পরিবর্তন দরকার, সে জন্য সরেজমিন পরিদর্শন প্রয়োজন। তা ছাড়া ভবনগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বা স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে ঠিক তথ্য নথিভুক্তকরণের জন্যও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘোরা জরুরি। এখন সে সব সম্ভব নয়। কারণ, দলবদ্ধ ভাবে ঘোরায় বিধি-ভঙ্গের সমস্যা রয়েছে।’’
এমনিতে পুরসভার ওই তালিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। ঐতিহাসিক ভিত্তি বা অনন্য স্থাপত্যশৈলী নেই, তা সত্ত্বেও বাড়ি বা ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে, এই অভিযোগ জানিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনেক বাড়ির মালিক। তাঁদের দাবি, হেরিটেজ মর্যাদা চাই না! ওই তালিকা থেকে তাঁদের বাড়ি বাদ দিক পুরসভা! ফলস্বরূপ, একাধিক আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
তা ছাড়া হেরিটেজ ভবনের গ্রেডের অবনমন নিয়েও বার বার বিতর্কে পড়তে হয়েছে পুরসভাকে। অনেক জায়গায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শুধু একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেডেশন পাল্টে দেওয়া হয়েছে বলেও হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ সরব হয়েছিলেন। তাঁরা কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। প্রশ্ন ছিল, কেন এত অনিয়ম সত্ত্বেও কমিশন তাতে হস্তক্ষেপ করছে না। হেরিটেজ কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘চোখের সামনে একের পর এক ঐতিহ্যশালী ভবন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে তো শহরে শুধু বহুতলই থাকবে, ঐতিহ্যশালী কোনও ভবনই থাকবে না!’’
তার পরেই কমিশন ঠিক করে, পুরসভার হেরিটেজ তালিকার পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। কোনও ভবনের গ্রেড ঠিক আছে কি না, তা দেখার পাশাপাশি ভবনের বর্তমান অবস্থা কী, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সে সব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পুরসভার হেরিটেজ তালিকার উপরে ভিত্তি করে সামগ্রিক কাজ হলেও আদতে সম্পূর্ণ একটি নতুন পরিমার্জিত তালিকা তৈরি করা হবে বলেই পরিকল্পনা ছিল। এক হেরিটেজ স্থপতির কথায়, ‘‘শহরের ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণার নিয়ন্ত্রণ রাজ্য হেরিটেজ কমিশন না পুরসভার হেরিটেজ কমিটির হাতে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কে ইতি পড়েছিল। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে কোভিড-১৯ এসে সব তালগোল পাকিয়েছে। কবে ফের কাজ শুরু হবে, কেউ জানেন না!”