প্রতীকী ছবি।
পূর্বাশা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, রাত তখন ১০টা ১০। টালিগঞ্জে অফিস সেরে বাসস্ট্যান্ড থেকে সল্টলেকের ডিবি ব্লকের বাড়িতে রোজ হেঁটেই ফিরি। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তখনও কি জানতাম আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে!
সল্টলেকের রাস্তায় ঢুকে ফুটপাতের পাশ দিয়ে হাঁটার সময়ে কেন জানি অস্বস্তি হচ্ছিল। এক বার পিছন ঘুরে দেখলাম, কেউ আসছে কি না! কাউকে দেখতে পাইনি তখন। ডিএ ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির কাছে আচমকা একটি ছেলে পিছন থেকে এসে আমার গায়ে হাত দেয়। ঘুরে দেখি কালো জামা, জিনস্ পরা ছেলেটি পালিয়ে যাচ্ছে। আমি ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থাতেই ছেলেটির পিছু নিলাম। কিন্তু আমি যে দৌড়ে ওকে ধরতে পারব না, সেটা ও বুঝেছিল। তাই ও কার্যত হেঁটেই পালাচ্ছিল। বারবার মুখ ঘুরিয়ে দেখছিল, পিছনে আসছি কি না। রাগে এক-দু’বার চিৎকার করে বললাম, এই দাঁড়া! এক সময়ে ডিএ ৭ এবং ৮ নম্বর বাড়ির মাঝের গলিতে ছেলেটা ঢুকে গেল। গলিটা এতই অন্ধকার, আমার আর ঢোকার সাহস হল না। পরে তো ওখানকার বাসিন্দারাই বললেন, জায়গাটা একেবারেই ভাল নয়। প্রায় দিনই মহিলাদের সঙ্গে অসভ্যতা হয়।
গলির মুখ থেকেই ১০০ ডায়ালে ফোন করি। দু’-তিন মিনিটের মধ্যেই পুলিশের টহলদারি ভ্যান আসে। পাশের একটি বাড়ির বারান্দায় সিসি ক্যামেরা ছিল। সেখানের ফুটেজে কিছু ধরা পড়েছে কি না, তা দেখতে ওই বাড়িতে যান পুলিশকর্মীরা। এর পরে অভিযুক্তের খোঁজে আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য পুলিশকর্মীরা গাড়িতে ওঠেন। আমাকেও যেতে বলা হয় ওঁদের সঙ্গে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই মুখ দেখতে পাইনি। রাত ১১টা নাগাদ আমাকে পুলিশের গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বাসস্ট্যান্ডে নামার পরেই আমার স্বামী ফোন করেছিল। বলেছিলাম, চিন্তা না করতে। কিন্তু বাড়ির দোরগোড়ায় এসে যে এমন ঘটবে, কে জানত!
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বাকে ‘যৌন হেনস্থা’
এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য এই প্রথম নয়। ফেব্রুয়ারিতে কাছেই একটা গলিতে আমার সঙ্গে এমন ঘটেছিল। মনে হচ্ছে, সে বারও এই ছেলেটাই ছিল। সে বার বাড়িতে জানাইনি। মনে হয়েছিল, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ি দুশ্চিন্তা করবেন। শনিবার স্বামীকে দু’বারের কথাই জানাই। ও বলছে, রাতে আর হেঁটে ফেরার দরকার নেই। কিন্তু কেন হাঁটব না? আমার এই অবস্থায় অটো বা রিকশা চড়া বারণ। অন্যের অসভ্যতার জন্য নিজের শরীরের যত্ন নেব না কেন? খুব রাতে যে ফিরি, তা-ও নয়। সল্টলেকে কি তবে মহিলাদের হাঁটাই বন্ধ করে দিতে হবে?