নারীদের ‘সম্পূর্ণা’ করে তুলতে উদ্যোগ

পাশের পাড়ার এক যুবক বিয়ে করার নাম করে রায়দিঘির মামণি দাসকে (নাম পরিবর্তিত) বিক্রি করে দিয়েছিল পুণের নিষিদ্ধপল্লিতে। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে তার ঠাঁই হয় মধ্য কলকাতার এলিয়ট রোডের এক হোমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪২
Share:

পাশের পাড়ার এক যুবক বিয়ে করার নাম করে রায়দিঘির মামণি দাসকে (নাম পরিবর্তিত) বিক্রি করে দিয়েছিল পুণের নিষিদ্ধপল্লিতে। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে তার ঠাঁই হয় মধ্য কলকাতার এলিয়ট রোডের এক হোমে। বছর সতেরোর সেই মামণি বুধবার হালকা নীল রঙের ধোপদুরস্ত ইউনিফর্ম পরে যখন মন্ত্রী, আমলা-সহ তাবৎ আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের সামনে সানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেজিং-এর কৌশল হাতেকলমে দেখাচ্ছিল, তখন তার দু’চোখে আত্মবিশ্বাস এবং আনন্দ একসঙ্গে ঝিলিক দিচ্ছে।

Advertisement

মামণিদের মতো ২১ জন মেয়েকে নিয়েই রাজ্য নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের অর্থসাহায্যে বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সূচনা হল ‘সম্পূর্ণা’ প্রকল্পের। ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার এই পাইলট প্রকল্পে এলিয়েট রোডের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত একটি হোমের মহিলা আবাসিকদের একাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাকেটজাত করার কাজ করবেন। সরকার উদ্যোগী হয়ে সেই ন্যাপকিন বিক্রির ব্যবস্থা করবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-হোম-অফিস-আদালত-হাসপাতাল চত্বর-পার্ক-বাজার-সুলভ শৌচালয় প্রভৃতি জায়গায়। এর জন্য বসানো হবে ন্যাপকিন-ভেন্ডিং মেশিন।

দফতরের সচিব রোশনী সেন এ দিন জানালেন, একটি প্যাকেটে তিনটি ন্যাপকিন থাকবে। একটি প্যাকেটের দাম হবে ১০ টাকা। এক-একটি প্যাকেট প্রস্তুত করতে এক-এক জন মেয়ে আড়াই টাকা করে পাবেন। রোশনীদেবীর কথায়, ‘‘অনেক মেয়ে এখানে ঘণ্টায় ৫০০টি প্যাকেটের প্যাকেজিং শেষ করে ফেলছেন। এই ভাবে কাজ করলে ৪ ঘণ্টাতেই ওঁরা এক-এক জন ৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। ওঁদের এই টাকা জমানোর জন্য অ্যাকাউন্টও খুলে দেওয়া হবে।’’ এখন মাসে ৩৫ হাজার প্যাকেট ন্যাপকিন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। আগামী দিনে তা বেড়ে মাসে প্রায় দেড় লক্ষ হবে বলেও জানিয়েছেন বিভাগীয় কর্তারা।

Advertisement

মেয়েদের ঋতুকালীন অবস্থা নিয়ে এখনও এ দেশে কুসংস্কারের শেষ নেই। বহু পরিবারেই একে অপবিত্র এবং লজ্জার ঘটনা বলে ধরা হয়। ওষুধের দোকানেও ন্যাপকিন বিক্রি করা হয় লুকিয়ে-কালো প্যাকেটে মুড়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাকেটজাত করে রোজগার করছেন, ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে তা বিক্রি হচ্ছে এবং ধুমধাম করে সংবাদমাধ্যম ডেকে তার প্রচার হচ্ছে—এই পরিবর্তনকে ‘বৈপ্লবিক’ আখ্যা দিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা আয়োগের প্রধান অনন্যা চক্রবর্তী। রাজ্যের নারী-শিশু তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও একে ‘ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা এবং নারীর স্বাবলম্বনের অসাধারণ মিশ্রণ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে এর ফলে যেমন মেয়েদের স্বাস্থ্য রক্ষা হবে, অন্য দিকে ন্যাপকিন প্যাকেটজাত করার কাজ করে বহু মেয়ে ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement