ঘটনাস্থল: রাস্তার ধারে কারখানার এই পরিত্যক্ত জমিতেই পুড়ে মারা গেলেন এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধারেই একটি কারখানার পরিত্যক্ত জমি। সেখানেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন ৫২ বছর বয়সি এক মহিলা। অথচ, প্রথমে কেউ টেরই পেলেন না ঘটনাটি। টের যত ক্ষণে পাওয়া গেল, তত ক্ষণে তাঁর শরীরের অনেকটাই আগুনের গ্রাসে। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকার ছ’নম্বর গোপাল ডাক্তার রোডে। রাত পর্যন্ত মৃতার পরিচয় মেলেনি।
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। যে কারখানার জমিতে ঘটনাটি ঘটে, তার কাছেই রয়েছে পুরসভার কম্প্যাক্টর, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের কার্যালয়।
ওই রাস্তায় লোকজনের চলাচল এমনিতে কম। কারখানার গেট সর্বক্ষণ খোলাই থাকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ পোড়া গন্ধ পান পুরসভার কর্মীরা। দেখা যায়, কারখানার পরিত্যক্ত জমিতে এক মহিলা পড়ে রয়েছেন। তাঁর শরীরে তখনও আগুন জ্বলছে। দ্রুত আগুন নিভিয়ে মহিলার শরীরে একটি কাপড় চাপিয়ে দেন পুরকর্মীরা। সেই দৃশ্য দেখে ভিড় করেন পথচলতি লোকজন।
আরও পড়ুন: আড়াই মাস পর কুড়ির নীচে মৃত্যু, দৈনিক আক্রান্ত হাজারেরও কম
আরও পড়ুন: ধর্মান্তরণের অভিযোগ মিথ্যা, হলফনামায় স্বীকার করল যোগী সরকার
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্থানীয় ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর ষষ্ঠী দাস ও কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলে একটি কেরোসিনের বোতল এবং দেশলাই মিলেছে। গার্ডরেল বসিয়ে জায়গাটি ঘিরে দেয় পুলিশ।
ওই জমির ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি অফিস। সেখানকার কর্মী তুলসী রাম জানান, বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ পোড়া গন্ধ পান তাঁরা। সেই গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়েই পৌঁছে যান কারখানার জমিতে। দেখেন, এক মহিলা পড়ে রয়েছেন। তাঁর দেহের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। বাকি অংশে জ্বলছে আগুন। তবে ওই মহিলার কোনও চিৎকার শুনতে পাননি তাঁরা।
পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, রাস্তার ধারের একটি জমিতে এমন ঘটনা ঘটে গেল, অথচ তা কারও নজরে এল না? এমনটা কী করে সম্ভব? মৃত মহিলা এলাকার কেউ নন বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর ষষ্ঠীবাবু জানান, ওই পরিত্যক্ত জমিতে আবর্জনা ফেলেন অনেকেই। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরসভার কর্মীরা সেখান থেকে আবর্জনা তুলেছিলেন। তখনও কারও চোখে কিছু পড়েনি। তারও প্রায় ৪৫ মিনিট পরে বিষয়টি পুরকর্মীদের নজরে আসে। তাঁরা অন্তত তেমনটাই দাবি করেছেন।
পুলিশের বক্তব্য, কারও গায়ে আগুন লেগে গেলে আর্তনাদ বা চিৎকার করাটা খুব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু শোনা গেল না কেন, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে তাদের। অজ্ঞাতপরিচয় ওই মহিলা আত্মঘাতী হয়েছেন, না কেউ আগুন লাগিয়ে তাঁকে খুন করেছে, তদন্তে নেমে এখন সেটাই বার করার চেষ্টা চলছে।
হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গেলেও এ দিন বেলা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি ফরেন্সিক বিভাগের কাউকেই। হোমিসাইড বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের বোতল ও দেশলাই বাক্স মিললেও এই মুহূর্তে মৃতার পরিচয়টা জানা প্রয়োজন। ঘটনার উদ্দেশ্য জানা গেলে রহস্য উদ্ঘাটন সহজ হবে।’’
লালবাজারের এক ফরেন্সিক আধিকারিক বলেন, “কেউ নিজের গায়ে আগুন দিলেও আশপাশে ছোটাছুটি করেন। চিৎকার করাও স্বাভাবিক। ঘটনাটি যে হেতু খোলা জায়গায় ঘটেছে, তাই ছোটাছুটির বৃত্ত আরও বেশি হওয়ার কথা। তা হয়ে থাকলে মৃতদেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, তার আশপাশে সেই চিহ্ন থাকবে। পুলিশকে এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। মহিলা যেখানে, যে ভাবে পড়ে ছিলেন, সেই অবস্থান থেকেও বোঝা যেতে পারে, এটি আত্মহত্যা না কি অন্য কিছু। তাঁর পরিচয় জানা না গেলে এই বিষয়গুলিই তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।”
ঘটনাস্থলের কাছে কোনও সিসি ক্যামেরা নজরে আসেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ওই ঘটনার আগে কারখানার জমিতে কাউকে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। ময়না-তদন্ত এবং ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টের পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ পেলে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের এক কর্তা জানান, সব দিক থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।