—ফাইল চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন মানুষ। অথচ, সেখানেও মহিলাদের অসম্মান করার ঘটনা বাদ গেল না। বুধবার রাতে শহর ও শহরতলির একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল চলাকালীনই মহিলারা হেনস্থার শিকার হলেন। ওই সব ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে মা ও মায়ের বান্ধবীর দিকে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করতে দেখে তার প্রতিবাদ করায় মত্ত ব্যক্তির হাতে আক্রান্ত হন ছেলে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আশিস কর্মকার নামে এক জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ডাকবাংলো মোড়ে রাত ১০টা নাগাদ সেই জমায়েতে এসেছিলেন বাদুড়িয়া থানা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা, তাঁর বান্ধবী ও ছেলে। ফেরার পথে দক্ষিণপাড়া মোড়ের কাছে তাঁদের উদ্দেশে এক ব্যক্তি অশালীন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে ওই মহিলার ছেলেকে মারধর করে সে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিগৃহীতা হন মা-ও। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।
রাত দখলের মিছিল চলাকালীন কলকাতা পুলিশের নেতাজিনগর থানা এলাকাতেও হেনস্থার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ সূত্রের খবর, গড়িয়া মোড়ের কাছে ‘রাত জাগা’ কর্মসূচির সময়ে এক মহিলার উদ্দেশে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীরা ওই যুবককে ধরে ফেলে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে অভিযুক্তকে সরিয়ে নিয়ে যেতে গেলে উত্তেজিত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। নেতাজিনগর থানার ওসি-সহ বাহিনীর সামনেই পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
কসবায় প্রতিবাদ মিছিলে যাওয়ায় এক যুবক ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর এবং যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। যুবকের অভিযোগ, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বার বার মিছিলে হাঁটায় পাড়ার কয়েক জন হুমকি দিচ্ছিলেন। মিছিলে যেতে বারণ করা হলেও তাঁরা শোনেননি। বুধবার রাতে এলাকার দুই যুবক বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে। খবর পেয়ে ওই যুবক বাড়ি ফিরলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।পাটুলি থানা এলাকায় এক মহিলাকে কটূক্তি ও হেনস্থার অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত পাটুলি থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে। যাদবপুর থানা এলাকার ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে হেনস্থার অভিযোগ ঘিরেও চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশ জানায়, বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার এক বাসিন্দা রাত দেড়টা নাগাদ জমায়েত থেকেই ১০০ ডায়ালে ফোন করে হেনস্থার অভিযোগ করেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অন্য দিকে, বুধবার রাত দখল কর্মসূচি ঘিরে বারাসতের কলোনি মোড়ে তুলকালাম হয়। অভিযোগ, বারাসত-কৃষ্ণনগর রোডের কলোনি মোড় থেকে টেনেহিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলা ও শিশুদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ১৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বৃহস্পতিবার বারাসত আদালতে সকলেই জামিন পান। বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের কারণে জাতীয় সড়ক স্তব্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীদের রাস্তার এক দিক খালি করতে অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেননি।’’ তাই বারাসতের এসডিপিও, থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী গিয়ে আন্দোলনকারীদের টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়।
সোনারপুরের প্রসাদপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফেরার পথে কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রীকে হেনস্থা, মারধরের অভিযোগ উঠেছে এলাকার কিছু মত্ত যুবকের বিরুদ্ধে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, মিছিলে হাঁটার কারণে তাদের হেনস্থা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ করছে পুলিশ।