Death

ভ্রমণপ্রেমীর দেহ ফিরতে ভিড় জমালেন প্রতিবেশীরা

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দীপাঞ্জনার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বেদিয়াডাঙায়। সেখানে তখন ভিড় করেছেন শোকার্ত মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেড়াতে যেতে খুব ভালবাসতেন দীপাঞ্জনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩১
Share:

দীপাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেহ কসবার বাড়িতে পৌঁছনোর পরে পড়শিদের ভিড়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

ফেরার কথা ছিল আজ, সোমবার। মেয়ে ফিরলেন এক দিন আগেই, রবিবার। কিন্তু, কফিনবন্দি হয়ে।

Advertisement

উত্তরাখণ্ডের হর-কি-দুনে ট্রেকিং করতে গিয়ে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে কসবার বেদিয়াডাঙার বাসিন্দা দীপাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৩৫)। রবিবার বেদিয়াডাঙার বাড়িতে ফিরল তাঁর দেহ। দীপাঞ্জনার দেহ এসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজনেরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, বেদিয়াডাঙায় তাঁর মা-বাবার বাড়ির কাছেই দীপাঞ্জনারা থাকতেন। ওই তরুণীর শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায়।

গত ৫ নভেম্বর দীপাঞ্জনা, তাঁর স্বামী তীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁদের সাত বছরের মেয়ে টিউলিপ উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ট্রেক করে নামার সময়ে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় মৃত্যু হয় আয়কর দফতরের কর্মী দীপাঞ্জনার। এই খবর আসার পরে শনিবারই দেহরাদূন রওনা দিয়েছিলেন দীপাঞ্জনার বাবা রতন সাধুখাঁ এবং ভাই প্রতীক সাধুখাঁ। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দিল্লি থেকে বিমানে দীপাঞ্জনার দেহ এসে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখানে ছিলেন তাঁর আত্মীয়েরা। ছিলেন দীপাঞ্জনার সহকর্মী জয়ন্ত ভট্টাচার্য।

Advertisement

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দীপাঞ্জনার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বেদিয়াডাঙায়। সেখানে তখন ভিড় করেছেন শোকার্ত মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেড়াতে যেতে খুব ভালবাসতেন দীপাঞ্জনা। স্থানীয় বাসিন্দা রোহন ঘোষ বলেন, ‘‘দীপাঞ্জনা বছরে দু’-চার বার ঘুরতে যেতেন। ট্রেকিং করতে খুব ভালবাসতেন।’’ ঘুরতে যেতে, ট্রেকিং করতে দীপাঞ্জনা যে কতটা ভালবাসতেন, তা উঠে এসেছে তাঁর সহকর্মী জয়ন্তের কথাতেও। জয়ন্ত জানান, গত অক্টোবরে দীপাঞ্জনারা নাগাল্যান্ড-মণিপুর সীমানায় জ়ুকু ভ্যালিতে ট্রেকিং করে এসেছেন। আগামী মাসে ওড়িশার সাতকোশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। আবার সামনের বছর আন্দামান যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন দীপাঞ্জনারা। জয়ন্ত বলেন, ‘‘অফিসের যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতেন দীপাঞ্জনা। জড়িত ছিলেন নানা সামাজিক কাজে। ছিলেন ফুড ব্লগারও।’’ দীপাঞ্জনার সহকর্মী, অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘খুব প্রাণচঞ্চল ছিল দীপাঞ্জনা। সমুদ্রের চেয়ে পাহাড় আর জঙ্গল পছন্দ ছিল। সমস্ত কাজে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসত। ওর অভাব অনুভব করব।’’

দীপাঞ্জনার স্বামী তীর্থ একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মেয়ে টিউলিপ দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে তীর্থ বলতে থাকেন, ‘‘এ বার মেয়েটাকে আমি কী ভাবে মানুষ করব?’’ চার পাশে জমে থাকা ভিড়টার চোখেও তখন জল। এ দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর দীপু দাস। তিনি বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা এই পরিবারের পাশে রয়েছি।’’

আয়কর দফতরের কর্মী দীপাঞ্জনা বসতেন ঢাকুরিয়ার অফিসে। বেদিয়াডাঙা থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। সেখান থেকে আমতলার শ্বশুরবাড়ি ঘুরে কেওড়াতলা শ্মশানে হয় শেষকৃত্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement