মহুয়া রায়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু দক্ষিণ দমদমে। মৃতার নাম মহুয়া রায় (৪৭)। তিনি ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এম এম ঘোষ রোডের একটি আবাসনে থাকতেন। শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গত সপ্তাহেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এই পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দশম শ্রেণির এক পড়ুয়া।
পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৩ অক্টোবর মহুয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরিবারে তাঁর স্বামী ও ছ’বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মহুয়ার এক আত্মীয় জানাচ্ছেন, রক্তে প্লেটলেটের ওঠানামা চলছিল। মহুয়ার মৃত্যুর শংসাপত্রেও উল্লেখ রয়েছে যে, ডেঙ্গি এনএস-১ আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, দক্ষিণ দমদমে এই মুহূর্তে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৭। দৈনিক গড়ে ১০-১২ জন আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর আসছে। এমন পরিস্থিতিতে পুরসভার কিন্তু এখনও মূল অস্ত্র ‘লাগাতার প্রচার’। মহুয়ার প্রতিবেশী অনেকেরই মতে, মাইকে ঘুরে প্রচার চালিয়ে কিছু লাভ হবে না। এলাকা নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা মারতে লার্ভিসাইড তেল বা ধোঁয়া ছড়ানো, লার্ভা খুঁজে ধ্বংস করার কাজে পুরসভার যথেষ্ট শিথিলতা আছে। যার ফলে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গির দাপট।
অভিযোগ মানতে নারাজ পুরসভা। তাদের পাল্টা অভিযোগ, বাসিন্দাদের একাংশ ডেঙ্গিকে গুরুত্বই দিতে চাইছেন না। যে সব বাড়িতে ডেঙ্গির মশার লার্ভা মিলছে, সেখানে পুরসভার তরফে পোস্টার লাগিয়ে বলা হচ্ছে, ‘লার্ভা মিলছে, অথচ বাসিন্দারা উদাসীন।’ স্থানীয় কাউন্সিলর অঞ্জনা রক্ষিতও জানাচ্ছেন, বাসিন্দাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত পাঁচ জন। তবে এই এলাকায় জলাশয়ের সংখ্যা বেশি। কিন্তু মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবাসন এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। পুরকর্তাদের পাল্টা অভিযোগ, আবাসন থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না পুরকর্মীরা। সেখানে ঢোকাও যায় না। তা সত্ত্বেও যে কয়েকটি আবাসনে পুরকর্মীরা ভিতরে গিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন, তার বেশির ভাগ থেকেই বিপুল পরিমাণ মশার লার্ভা মিলেছে। পাশাপাশি, যে সব নির্মীয়মাণ বহুতলে বা বাড়িতে জমা জল এবং লার্ভা মিলছে, সেগুলির প্রোমোটারদের নোটিস পাঠিয়ে তলব করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হবে বলেও দাবি করছে পুরসভা।
পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠিক নয়। কাজ চলছে। কী কাজ হচ্ছে, তার উপরে নজরদারি চালিয়ে নিয়মিত রিপোর্টও নেওয়া হচ্ছে।’’ নাগরিকদের সম্পর্কে তাঁর মত, বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতাতেই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।