রঙিন পর্দার জোশ, গুলাম ও ওয়ান্টেড-এর মতো হিন্দি সিনেমায় দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে মোটরবাইকে শহর দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল ঐশ্বর্য রাই, রানি মুখোপাধ্যায় এবং মেহেক চাহালদের। এ বার রঙিন পর্দারই সেই চিত্র উঠে এল খাস কলকাতায়!
সিন্ডিকেট, দাদাগিরি, তোলাবাজির অভিযোগের মাঝে শহরে দেখা দিল হুবহু রূপোলি পর্দায় দেখা সেই ‘গ্যাং’। সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ কড়েয়ার তিলজলা রোডের লোহাপুল এলাকায় মোটরবাইকে চেপে এসেছিলেন এক তরুণী। সঙ্গে জনা কুড়ি যুবকের সেই ‘গ্যাং’। প্রকাশ্যে এক যুবককে লক্ষ্য করে গুলিও চালায় ওই তরুণীর বন্ধু। এর পরে সটান মোটরবাইকের পিছনে বসে উধাও হয়ে যান তিনি।
শহর জুড়ে এখনও যে বেআইনি অস্ত্রের রমরমা চলছে, তা-ও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই গ্যাং। চলতি মাসেই রাজাবাগান এলাকায় গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। গত সেপ্টেম্বরে রামনগর মোড় ও কড়েয়ার শিবতলা লেনের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। সেপ্টেম্বরেই আনন্দপুর থানা এলাকায় গুলিতে মারা যায় এক যুবক। পর পর শহরে গুলি চালানোর ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা নিয়েও।
পুলিশ জানিয়েছে, এই তরুণী খুনের মামলায় অভিযুক্ত বেনিয়াপুকুরের লুল্লা হায়দারের বান্ধবী। ঘুরে বেড়ান যুবকদের দল নিয়ে। খাস কলকাতায় গুলি চালানোর ঘটনা আগেও ঘটেছে। দুই দুষ্কৃতী দলের রেষারেষি হয়েছে ময়দানে নেমে। কিন্তু সে রকম কোনও এক দলে সক্রিয় ভাবে কোনও মহিলার উপস্থিতি— মনে করতে পারছেন না শহরের পুলিশ অফিসারেরা। সোমবার লোহাপুল এলাকায় গুলি চালনার ঘটনায় আহত হন শেখ আকবর। মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। অধরা তরুণীর গ্যাং।
কী হয়েছিল ওই দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে তিলজলা রোডের এক বাসিন্দা শেখর রায়ের সঙ্গে গন্ডগোল হয় লুল্লার। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, লুল্লার বান্ধবী ওই তরুণীকে কটূক্তি করা নিয়েই গন্ডগোল। তারই বদলা নিতে হিন্দি সিনেমার কায়দায় সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ গোটা আটেক মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে সদলবলে তিলজলা রোডে হাজির হয় লুল্লার দল। তখন লুল্লার মোটরবাইকের পিছনে বসেছিলেন ওই বান্ধবী। রাস্তার ধারে তখন ছিলেন শেখর। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এলাকারই ডাকাবুকো শেখ আকবর, তার দাদা শেখ মিঠু ও আরও কয়েক জন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফিল্মি কায়দায় মোটরবাইক থেকে নেমেই শেখরের সঙ্গে বচসা শুরু করেন তরুণী। এর পরে শেখরের দিকে তেড়ে আসে গোটা দল। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আকবর বলেন, ‘‘শেখরের জামার কলার ধরে তাঁকে টানতে থাকে লুল্লার দল। তখন আমি প্রতিরোধ করি।’’ এগিয়ে আসেন আকবরের দাদা মিঠু। শেখরকে ধরে দু’দিক থেকে টানাটানি শুরু হয়। শুরু হয় দু’দলের মধ্যে গোলমাল।
আকবর জানিয়েছেন, তখন রাস্তার দু’পাশেই সমস্ত দোকানও খোলা ছিল। সাধারণ মানুষও যাতায়াত করছিলেন রাস্তায়। ওই দৃশ্য দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সকলের মধ্যে। আকবরের অভিযোগ, শেখরকে মারার জন্যে লুল্লাকে কার্যত উস্কে যাচ্ছিলেন দলের ওই তরুণী। অভিযোগ, এর
পরেই লুল্লা কোমর থেকে বন্দুক বের করে প্রথমে মিঠুর নাকে আঘাত করেন। মাটিতে পড়ে যান মিঠু। শেখর পালাতে গেলে তাঁকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালান। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলি আকবরের ডান কাঁধ ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পরে শেখর ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে হুমকি দিয়ে মোটরবাইক নিয়ে তরুণীর দলটিও পালিয়ে যায়। পরে কড়েয়া থানায় লুল্লা, শালু, চিনা-সহ একাধিক ব্যক্তির নামে অভিযোগ করেন শেখ আকবর।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দু’দলের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ-সহ একাধিক সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেই তালিকায় লুল্লা যেমন রয়েছেন, তেমনই আকবরও রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।