আর্জিনা বিবি (বাঁ দিকে) ও শেখ ইলিয়াস। নিজস্ব চিত্র
বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠল তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তরুণী ও সেই প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইআটির আটঘরার তরফদার পাড়ায়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম আর্জিনা বিবি ও শেখ ইলিয়াস।
মঙ্গলবার দুপুরে আর্জিনা ও ইলিয়াসকে তোলা হয় বারাসত আদালতে। সরকারি কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন দে বিচারকের কাছে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করে জানান, এই ঘটনার তদন্তের জন্য অভিযুক্তদের আরও জেরা করা দরকার। এর পরেই মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আর্জিনা ও ইলিয়াসকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠান। তাদের বিরুদ্ধে আর্জিনার স্বামী মোজাফ্ফর হোসেনকে খুনের পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং ষড়যন্ত্রের মামলাও রুজু করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে খুনের পরে সোমবার ভোরে ইলিয়াসকে নিয়ে আর্জিনা সলুয়ায় তার এক পরিচিতার বাড়িতে যায়। ওই মহিলা তখন বাড়িতে ছিলেন না। এর পরে আর এক পরিচিতের বাড়ি গিয়ে আর্জিনা জানায়, মোজাফ্ফর হৃদ্রোগে মারা গিয়েছেন। তখন পরিচিত ওই ব্যক্তি আটঘরার তরফদার পাড়ার বাড়িতে গিয়ে ভ্যানে চাপিয়ে মোজাফ্ফরের দেহ নিয়ে আসেন। সলুয়ার একটি বাড়িতে দেহটি রেখে মোজাফ্ফরের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ির লোকেদের সন্দেহ হয়। তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মোজাফ্ফর কলকাতা বিমানবন্দরে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার গাড়ি চালাতেন। তাঁর সঙ্গে তিন বছর আগে বিয়ে হয় আর্জিনা বিবির। ওই দম্পতির একটি সন্তানও রয়েছে। বাগুইআটির আটঘরার তরফদার পাড়ায় যে বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে আর্জিনা ভাড়া থাকত, তার কাছেই শেখ ইলিয়াসের বাড়ি। বছর দেড়েক আগে ইলিয়াসের সঙ্গে আর্জিনার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি সেই সম্পর্কের কথা জানতে পারেন মোজাফ্ফর। তা নিয়ে দু’জনের অশান্তি শুরু হয়। তখনই স্বামীকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে আর্জিনা। জিজ্ঞাসাবাদে ইলিয়াসও এমনটাই দাবি করেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
আরও পডু়ন: রাতের কলকাতায় একদল যুবকের হাতে প্রাক্তন ‘মিস ইন্ডিয়া’র হেনস্থা
তদন্তকারীরা জানান, রবিবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে অচৈতন্য করা হয় মোজাফ্ফরকে। ওড়না আর শাড়ি দিয়ে তাঁর হাত-পা বাঁধা হয়। এর পরে তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। নিহতের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত রয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ। বিশেষত, দেহের নিম্নাঙ্গে ও মাথার আঘাত গুরুতর।
অভিযুক্ত ইলিয়াসের মা সালেমা বিবির অবশ্য দাবি, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। আর্জিনার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক নিয়েও কিছু জানা ছিল না তাঁর। সোমবার সকালে রোজকার মতোই কাজে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল পেশায় রঙের মিস্ত্রি ইলিয়াস। তার পরেই ধরা পড়ে যায় সে।